মসজিদুল হারামে ১৫ লাখ মুসল্লির একত্রে ইফতার

iftarমসজিদুল হারামে প্রতিদিন প্রায় ১৫ লাখ মুসল্লি একত্রে ইফতার করেন। সৌদি সরকারের (খাদেমুল হারামাইন) পক্ষ থেকে রোজাদারদের জন্য প্যাকেটে খেজুর, জুস, বিস্কুট পরিবেশন করা হয়। তার ওপর এ পবিত্র মাসে ধনাঢ্য সৌদিরা নিজেদের উজাড় করে দেন রোজাদারদের খেদমতে। ইফতারের প্রাচুর্য দেখতে হলে মক্কায় আসার বিকল্প নেই। আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে একেকজন কতটি করে কাতারে ইফতার খাওয়াবেন। প্রতিটি সারির সামনে বিছানো হয় দস্তরখান ও সুবরা (পলিথিন)। ইফতারের প্রধান উপকরণ খেজুর। রোজাদারদের খেদমতে আয়োজকেরা খুব উন্নতমানের নানা ধরনের খেজুর নিয়ে আসেন। খেজুর দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। একে একে শোভা পায় ইফতারের নানা উপকরণ। যেমন- পানি, জুস, মাঠা, দধি, মাল্টা, আপেল, আঙ্গুর, আলু বোখারা ইত্যাদি। অনেকেই পরিবেশন করেন প্যাকেট বিরিয়ানি। রুটি, শুকনো গোশত, চাটনিও দিচ্ছেন অনেকেই। নানা দেশের নানা বর্ণের মানুষের রুচিও ভিন্ন। কিন্তু এখানে এসে সবাই যেন একাকার হয়ে যান। ইফতার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ততার অন্তনেই আয়োজকদের। কিন্তু কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। স্বচ্ছ এক রকমের মোটা প্লাস্টিকের ব্যাগে করে জমজমের পানি পৌঁছে দিচ্ছে ছোট ছোট আরব বালকগুলো। জমজম ও খেজুর এখানকার ইফতারের প্রধান উপকরণ।
এ সম্পর্কে মিসফালার বাংলাদেশী ও চট্টগ্রামের বাসিন্দা মহসিন জানান, ২২ বছর ধরে তিনি এখানে আছেন। গড়ে তুলেছেন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (কাপড়ের দোকান)। তিনি জানালেন, হারামে বসে সবার সাথে ইফতারের আনন্দই আলাদা। এখানে সবাই আল্লাহর মেহমান। নিজের প্রতিষ্ঠানেও কর্মচারীরা ইফতারের আয়োজন করেন। প্রথম দিন হওয়ায় তিনি হারামে চলে এসেছেন। যারা ইফতার করতে এসেছেন তারাও প্রত্যেকেই হাতে করে কিছু না কিছু নিয়ে এসেছেন। শেয়ার করছেন আশপাশের দেশি-বিদেশী রোজাদারদের সাথে।
সে এক অনন্য অনুভূতি
বায়তুল মামুরের ঠিক নিচে অবস্থিত বায়তুল্লাহ অর্থাৎ কাবা শরিফ। ফলে এই কাবা ঘর ও এর পাশের মাতাফে সার্বক্ষণিক মহান আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে, এমনটিই জানি। তার ওপর ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে হারামের চারপাশের শক্তিশালী বৈদ্যুতিক লাইটগুলো জ্বলে ওঠায় মাতাফে অদ্ভুত এক আলোর খেলা চলতে থাকে। এখানে দিন আর রাতের তফাৎ করা মুশকিল। আকাশের দিকে তাকালে মনে হবে, এ স্থানটিতে আকাশের বিশালতা অনেক বেশি। আসমান থেকে যেন ঝরে ঝরে পড়ছে আলো। ইফতারের ক’মিনিট আগে থেকে মুসল্লিরা মশগুল হয়ে পড়েন প্রার্থনায়। অনেকের চিবুক বেয়ে নেমে আসে তপ্ত অশ্রু। কেউ কেউ মহান আল্লার কাছে পানাহ চেয়ে কেঁদে কেটে জারজার হয়ে যাচ্ছেন। কেউ ডুকরে কাঁদছেন। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। কোনো ভাবেই নিজেকে ঠিক রাখা মুশকিল। এ সময় মনে থাকে না আমি কে, কি আমার পরিচয়, কোত্থেকে এসেছি, কাদের ফেলে এসেছি। মননে মগজে শুধু এক অদৃশ্য অজানা আকর্ষণ। আমি এসে গেছি পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে। মহান আল্লাহর মেহমান হয়ে। আর যেখানে চারি দিকে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’।
আজান ও ইফতার
প্রতিটি রোজাদারের আবেগাপ্লুত হৃদয় যখন আল্লাহর ধ্যানে মশগুল ঠিক তখনই মাইকে ভেসে আসে ‘আল্লাহ হু আকবর’ আজানের ধ্বনি। মুসল্লিদের যেন চৈতন্যোদয় হয়। নবিজীর সুন্নত খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করেন তারা। কোথাও নেই কোনো কোলাহল। সবাই ব্যস্ত ইফতার খেতে ও খাওয়াতে। এ যেন মুসলিম ভাতৃত্বের এক অনন্য মেলবন্ধন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button