প্যারিসের ব্যালকনিতে বাচ্চাটি ঝুলছিল কেন?

spiderপ্যারিসে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ব্যালকনি থেকে ঝুলতে থাকা ছোট্ট একটি শিশুকে উদ্ধারের নাটকীয় ঘটনা নিয়ে ফ্রান্সে এখনও তুমুল আলোচনা চলছে।
মালি থেকে একজন অবৈধ অভিবাসী মামুদু গাসামা সোমবার ওই শিশুটিকে যে নাটকীয় কায়দায় উদ্ধার করে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় সোশাল মিডিয়ায়।
ঐ যুবকের প্রশংসার পাশাপাশি শিশুটি কিভাবে ব্যালকনিতে ঝুলছিল সে সম্পর্কেও অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, এবং এ ব্যাপারে কিছু তথ্যও এখন বেরিয়ে আসছে।
বাচ্চাটি ব্যালকনিতে ঝুলছিল কেন
শিশুটির বয়স ৪ বছর। তার পিতা তাকে একা বাসায় ফেলে রেখে শপিং করতে বের হয়ে গিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে শিশুকে ঠিকমতো দেখাশোনা না করার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। বাচ্চাটি থাকতো তার মা ও নানীর সাথে, রিইউনিয়ন নামের একটি জায়গায়।
তিন সপ্তাহ আগে সে প্যারিসে তার পিতার কাছে চলে আসে। তার পিতা ওই শহরেই চাকরি করেন। তার মা এবং ওই দম্পতির দ্বিতীয় এক সন্তানেরও আগামী জুন মাসে এই ফ্ল্যাটে চলে আসার কথা।
উত্তর প্যারিসের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ছয় তলায় থাকেন ওই পিতা। বাচ্চাটি ছ’তলা থেকেই পড়ে গিয়েছিল কিন্তু পড়ার সময় সে ভাগ্যক্রমে দুই তলা নিচে চারতলার ব্যালকনি ধরে ফেলতে সক্ষম হয়। বলা হচ্ছে, চারতলারই আরেকটি ফ্ল্যাটের একজন প্রতিবেশী বাচ্চাটির কাছে জানতে চায় সে কোন তলায় থাকে তখন সে উপরের দিকে ইঙ্গিত করে।
বাচ্চাটির মা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ছেলেটির পিতা বাচ্চাটিকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতো না। ঘরে তাকে একা রেখে বাইরে চলে গিয়েছিল। “আমার স্বামী যেটা করেছে সেটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। আমার ছেলের ভাগ্য ভালো। এর বেশি কিছু নয়,” বলেন তিনি।
শপিং করার পরেও পিতার বাড়িতে ফিরতে দেরি হয়েছিল বলে সরকারি আইনজীবীরা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন পোকেমন গো গেম খেলার কারণে তার ফিরতে দেরি হচ্ছিল।
প্রতিবেশীরা কী করেছিলেন?
এই ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমে আসার পর লোকজন নানাভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছেন। কেউ বলছেন, প্রতিবেশী চারতলার ফ্ল্যাটে যে পুরুষটিকে দেখা যাচ্ছিল, যে কিনা তার খুব কাছেই ছিলো, মি. গাসামাকে চারতলা বেয়ে উপরে উঠার আগে তিনি নিজেই কিছু করলেন না কেন।
কিন্তু ওই প্রতিবেশী প্যারিসের একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে তিনি বাচ্চাটির হাত ধরে রেখেছিলেন কিন্তু তাকে টেনে উপরের দিকে তুলতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, দুটো ব্যালকনির মাঝের একটি ডিভাইডারের কারণে তিনি বাচ্চাটিকে উপরে টেনে তুলতে পারছিলেন না।
“আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাই নি। বাচ্চাটি হয়তো তখন হাত ফসকে নিচে পড়ে যেতে পারতো। আমি ভেবেছি ধাপে ধাপে অগ্রসর হলে হয়তো ভালো হবে।”
তিনি জানান বাচ্চাটি স্পাইডারম্যানের জামা পরেছিল। তার পায়ের ওখান থেকে রক্ত ঝরছিল এবং একটা নোখও ভেঙে গিয়েছিল।
বাচ্চাটি এখন কোথায়?
ফরাসী সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, শিশুটিকে কর্তৃপক্ষের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এও বলা হচ্ছে যে এই ঘটনার পর শিশুটির পিতা একেবারে ভেঙে পড়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, শিশুকে ঠিকমতো দেখাশোনা করতে ব্যর্থ হলে পিতামাতার দু’বছরের কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার পাউন্ড জরিমানা হতে পারে।
সোশাল ওয়ার্কাররা এখন বাচ্চাটির মাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন জানা গেছে।
কে এই মামুদু গাসামা
২২ বছর বয়সী মামুদু গাসামা পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে থাকতেন। ২০১৩ সালে কিশোর বয়সে তিনি দেশ ছেড়ে চলে আসেন। সাহারা মরুভূমির ভেতর দিয়ে বারকিনা ফাসো, নিজের এবং লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালিতে চলে আসেন।
এর আগেও তিনি আরেকবার সমুদ্রপথে ইটালিতে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে ধরে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
মি. গাসামা ফরাসী প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন যে ইতালিতে তার চেনাজানা কেউ ছিল না বলে তিনি ফ্রান্সে চলে এসেছেন। এছাড়াও তার এক ভাই বহু বছর ধরে ফ্রান্সে বসবাস করছে।
প্যারিসে তিনি বাড়িঘর নির্মাণে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আশ্রয় চেয়ে তিনি কোনো আবেদনও করেননি বলে তিনি জানিয়েছেন।
চার তলা বেয়ে উপরে উঠে তিনি শিশুটিকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন। পরে সোশাল মিডিয়াতে তাকে ‘স্পাইডারম্যান’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। তাকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে ফরাসী কর্তৃপক্ষ।
ওই শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে উদ্ধারকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। তার একদিন পর পরিবারটি উদ্ধারকারী ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলছে, “তিনি একজন সত্যিকারের নায়ক।”
ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ তাকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সাহসিকতার জন্যে তাকে একটি মেডেল পুরস্কার দিয়েছেন তিনি এবং বলেছেন তাকে দমকল বাহিনীতে চাকরি দেওয়া হবে। -বিবিসি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button