রমযানে হিজাব পরছেন অমুসলিম নারীরা
মাথায় হিজাব পরা নিয়ে মুসলিম নারীরা যে বিশ্বজুড়ে নিত্যদিন বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছেন, তার উপর আলোকপাত করতে এক অনন্য চ্যালেঞ্জের অংশ হিসেবে পুরো রমযান মাসে বিভিন্ন ধর্মের নারীরা হিজাব পরিধান করছেন।
এলি লয়েড ও তার ১১ বছর বয়সী মেয়ে গ্রেস, এই দুই অমুসলিম নারী রমযান উপলক্ষে ৩০ দিনের ‘ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে (ডব্লিউএইচডি)’ এর উদ্যোগে মাসব্যাপী হিজাব-চ্যালেঞ্জে অংশ নিচ্ছেন। ইংল্যান্ডের এই দুই খ্রিস্টান নারী বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে বাস করছেন। হিজাব পরিহিত মুসলিমদের প্রতি বিশ্বজুড়ে যে ধর্মান্ধতা চলছে, তার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে তারা এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন।
ডব্লিউএইচডি’র প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিউইয়র্কের বাসিন্দা নাজমা খান। মুসলিম নারীরা কেন হিজাব পরতে পছন্দ করে, সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নাজমা খান এসবিএস নিউজকে বলেন, ‘৩০ দিনের রামাদান হিজাব চ্যালেঞ্জে আমাদের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আমরা কেবল গর্বিতই নই, তাদের সমর্থন আমাদেরকে সম্মানিত ও বিনীত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘হিজাব নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তারা একটি বিশাল পার্থক্য তৈরি করছেন, বিশেষকরে পশ্চিমা বিশ্বের ভুল ভাঙতে। তাদের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে আমরা আশা করছি- বিশ্বব্যাপী নারীদের হিজাব নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, তা ভাঙতে সক্ষম হবে।’
এলি লয়েড ও তার ১১ বছর বয়সী মেয়ে গ্রেস। ব্রিটিশ খ্রিস্টান গ্রেস লয়েড হচ্ছেন- এই চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। কাতারে স্কুলে তার বেশিরভাগ মুসলিম তার সহপাঠীরা তার এই প্রচেষ্টাকে কিভাবে গ্রহণ করবে- তা নিয়ে শুরুতে নার্ভাস ছিল গ্রেস লয়েড। মুসলিম নারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের এই প্রচেষ্টাকে তার সহপাঠীরা প্রশংসা করেছেন বলে তিনি জানান।
গ্রেস একটি ইউটিউব ভিডিওতে বলেন, ‘আমি ওই দিন সকালে খুবই সচেতন ছিলাম কারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে সেসম্পর্কে আমি জানতাম না। কিন্তু যখন আমি স্কুলের পথে হাঁটতে শুরু করি, তখন আমি বলতে শুনেছি ‘ওয়াউ’ এবং ক্লাসে পৌঁছানোর পর প্রত্যেকেই হাত তালি দিয়ে আমাকে স্বাগত জানিয়েছে যা সত্যিই চমৎকার ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমি যা করেছি তা ভাল করেছি।’ গ্রেস তার ‘গো ফাইন্ড মি’ পেজে বলেন, তিনি ‘কুসংস্কার, ধর্মীয় ঘৃণা ও ইসলাম বিদ্বেষ’ এর বিরুদ্ধে লড়াই করতের হিজাব পরছেন। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমি এই সম্পর্কে খুবই দৃঢ় অনুভূতি অনুভব করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত কালো হিজার পরিধান করি। আমি হিজাবে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ বোধ করি, কারণ আমার ক্লাসের সবাই এটি পরিধান করেন।’ তার মা এলি লয়েড কাতারে ডব্লিউএইচডি’র নির্বাহী পরিচালক ও একজন দূত। তিনি বলেন, ৩০ দিনের চ্যালেঞ্জের উদ্দেশ্য হচ্ছে হিজাব বৈষম্য নিয়ে অমুসলিম নারীদের একটি ছোট আভাস দেওয়া।