রোহিঙ্গা নিধন অব্যাহত : যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রশাসনের এক পর্যবেক্ষণে দাবি করা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। সে দেশের পররাষ্ট্র দফতরের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা সত্ত্বেও চলমান নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি নেপিডো। মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
পররাষ্ট্র দফতরের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা তুলে ধরা হয়। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিধনযজ্ঞের তীব্র সমালোচনা অব্যাহত রেখেছে। তা সত্ত্বেও মিয়ানমার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। গত নভেম্বরে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকেও রোহিঙ্গা নিপীড়নকে নিধনযজ্ঞ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে দেশটি।
ক’দিন আগে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন ইউএসএআইডির প্রশাসক মার্ক অ্যান্ডু গ্রিন। ১৭ মে সকালে ঢাকায় আমেরিকান ক্লাবে রোহিঙ্গা বিষয়ক এক গোলটেবিলে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে যুক্তরাষ্ট্র তাগিদ দেবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভিজ্ঞতার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন আসা কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে তাদের সঙ্গে ভয়াবহ ঘটনা ঘটার কথা শুনেছি। তারা সহিংসতার শিকার হয়েছে এবং তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে এই সংকট মোকাবিলার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি সেখানকার সমাজের বৈষম্যজনিত সংকট সমাধানের। যেটি সব সমস্যার মূল কারণ। আমি মিয়ানমারে যাচ্ছি। সেখানে গিয়ে তাদের বলবো তারা যেন তাদের কাজটি করে।’ ইউএসএআইডির প্রশাসক মার্ক অ্যান্ডু গ্রিন বলেন, ‘শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন, রাখাইনসহ অন্যান্য অঞ্চলে সহিংসতা বন্ধ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবিক সহায়তা কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করাসহ অন্যান্য বিষয়াদি মিয়ানমার সরকারকে করতে হবে।’ আগস্ট থেকে মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মোট দুইশ সাত মিলিয়ন ডলার রোহিঙ্গা বাবদ সহায়তা করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ধর্মীঁয় স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদনে মিয়ানমার থেকে ৬ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে আসার তথ্যও লিপিবদ্ধ হয়েছে। মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্যাম ব্রাউনব্যাক বলেছেন, এখনও সহিংসতা চলছে। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতিও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। দেশটিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার রাজনৈতিক বন্দির মধ্যে অনেকেই ধর্মীয় কারণে আটক বলে দাবি করা হয় প্রতিবেদনটিতে। চীনে উইগুর মুসলিমদের ওপর নিপীড়নের কথাও উল্লেখ করে তারা।