নতুন উচ্চতায় তুরস্ক-পাকিস্তান সামরিক সম্পর্ক

turkeyসামরিক শক্তির দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ তুরস্কের সঙ্গে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম দেশ পাকিস্তানের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবার সামরিক মৈত্রীতে।
সম্প্রতি তুরস্ক থেকে ৩০টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার চুক্তি সই করেছে পাকিস্তান, যা দুই বন্ধুরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করবে।
২৪ মে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান তার দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন, তাতে এ চুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়।
দামের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও ১.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় চুক্তি
তুর্কি হেলিকপ্টারের প্রথম ক্রেতা তুরস্কের নিজস্ব তৈরি প্রথম হেলিকপ্টার হল-এটিএকে। টার্কিশ এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি (টিএআই) এগুলো তৈরি করছে। এর লাইসেন্স নেয়া হয়েছে ইতালিয়ান-ব্রিটিশ কোম্পানি অগাস্টা-ওয়েস্টল্যান্ড থেকে। ২০১৪ সাল থেকে তুর্কি সেনাবাহিনী এগুলো ব্যবহার করছে।
তুরস্কের বিমানবাহিনী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্যও এ হেলিকপ্টার তৈরি করছে টিএআই।
ট্যানডেম সিট, টুইন ইঞ্জিন, ন্যাটো-ইন্টার অপারেবল হেলিকপ্টারগুলো তৈরি করা হয়েছে হামলা চালানো, সশস্ত্র নজরদারি, নিখুঁত আঘাত হানা এবং যে কোনো আবহাওয়া ডিপ স্ট্রাইক মিশন পরিচালনা উপযুক্ত করে।
এতে ৫০০ রাউন্ড ক্ষমতার ২২ মি. মি. টারেটেড গান ও ৭৬টি রকেট সজ্জিত ৭০ মি. মি. ক্লাসিক রকেট রয়েছে।
মাল্টি-পারপাস মিশনে এটি ১৬টি সিআইআরআইটি ৭০ মি.মি. লেজার গাইডেড এয়ার-টু-গ্রাউন্ড মিসাইল, আটটি, ইউএমটিএএস দূরপাল্লার এন্টি-ট্যাংক মিসাইল ও আটটি স্টিংগার এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বহন করতে পারে। তা ছাড়া এতে ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার ও অ্যাডভান্সড ইলেক্ট্র-অপটিক্যাল সিস্টেম রয়েছে।
তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি সই করার আগে পাকিস্তানে এ চপার পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। চলতি বছরের ২৩ মে পাকিস্তান দিবসের প্যারেডে এ হেলিকপ্টার ফ্লাইপাস্টে অংশ নেয়।
লন্ডনভিত্তিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক থিংক ট্যাংক আরইউএসআইয়ের ফেলো কামাল আলম বলেন, ‘তুরস্ক ও পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক, নতুন কিছু নয়। তবে এ চুক্তি সম্পর্কে নতুনমাত্রা যোগ করেছে।
ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর থেকেই তুরস্ক তার ঐতিহ্যগত মিত্র এবং তাদের মধ্যে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে একমাত্র তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান পাকিস্তানের পার্লামেন্টে তিন বার ভাষণ দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘তুরস্ক ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বিশেষ ধরনের এবং কূটনৈতিক যোগাযোগের বাইরেও বিস্তৃত।’
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী ও সেমিনারে (আইডিইএএস) তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারী। পরস্পরের সামগ্রীর ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে দুই দেশের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
২০০০ সালের শুরু থেকে দুই দেশ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদারের সিদ্ধান্ত নেয়।
এর পরের বছর দুই দেশের বিমানবাহিনীর মধ্যে এক চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের এক হাজার ৪৯৪ সেনাকর্মকর্তা তুরস্ক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। একইভাবে পাকিস্তানের ওয়ার কলেজ ও পাকিস্তান ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমিতেও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তুরস্কের কর্মকর্তারা।
পাকিস্তান ন্যাটো স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী তুরস্ককে ক্ষুদ্র অস্ত্র সরবরাহ করেছে।
২০০৯ সালে দুই দেশের মধ্যে হাইলেভেল কোঅপারেশন স্ট্রাজেটিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ পর্যন্ত এই কাউন্সিলের বহু বৈঠক এবং দুপক্ষের মধ্যে ৬০টির বেশি চুক্তি ও ডকুমেন্ট সই হয়েছে।
পাকিস্তান নেভির জন্য একটি ট্যাংকার নির্মাণে ২০১৩ সালে তুরস্কের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাকিস্তান সরকার ৮০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে।
ট্যাকটিক্যাল ড্রোন তৈরিতে সহযোগিতা বিষয়ে ২০১৫ সালে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে পাকিস্তানকে অনুদান হিসেবে ৩৪টি টি-৩৭ ফাইটার-কাম-ট্রেনিং এয়ারক্রাফট ও খুচরা যন্ত্রাংশ প্রদানের কথা ঘোষণা করে তুরস্ক।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এফ-১৬ বহর উন্নত করার জন্য ২০১৬ সালে টিএআইয়ের সঙ্গে ৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়।
পাকিস্তান নৌবাহিনীর অগাস্টা ৯০বি-ক্লাস সাবমেরিন আপগ্রেডেরও কাজ করছে একটি তুর্কি কোম্পানি। -সাউথ এশিয়ান মনিটর

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button