‘এঞ্জেল অব মার্সি’র মৃত্যুতে ফিলিস্তিনে শোকের ছায়া

palestineগত শুক্রবার গাজার খান ইউনিসে নিহত চিকিৎসক স্বেচ্ছাসেবী রাজান আল নাজ্জারের মৃত্যুতে শোকের ছাড়া বিরাজ করছে। তার কফিন নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনিরা।
রাজান আল নাজ্জারের  মা সাবরিন আল নাজ্জার কাঁদতে কাঁদতে তার মেয়ে সাথে বলা সর্বশেষ কথাবার্তাগুলো স্মরণ করছিলেন।
‘সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো আর বললো সে প্রতিবাদ শামিল হতে যাচ্ছ ।’ ৪৩ বছর বয়সী সাবরিন আল নাজ্জার গাজার দক্ষিণে খোজায় তার বাড়ীতে বসে বলছিলেন।
চোখের পলকে সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমি দৌড়ে বারান্দায় গেলাম কিন্তু ততক্ষণে সে রাস্তার শেষ মাথায় চলে গেছে।
প্রতক্ষদর্শীরা বলেছে, রাজান তার মেডিকেল বাক্স নিয়ে ইসরাইলের দেয়া বেড়ার কাছাকাছি আহত বিক্ষোভকারীদের সেবা দিতে যাচ্ছিল। তার গায়ে মেডিকেলের পোশাক ছিল আর সে তার দুই হাত উচু করে রেখেছিল যাতে ইসরাইলি সৈন্যরা তাকে আলাদা করে বুঝতে পারে যে সে একজন নার্স।
ঐসময় সে বেড়ার অপর পার্শে থাকা আহতদের সেবা দিতে যাচ্ছিল। ঠিক ঐ সময়েই ইসরায়েলি স্নাইপার তার বুকে গুলি করে।
ফিলিস্তিনিদের নিজভূমিতে ফিরে যাওয়ার জন্য নতুন করে শুরু হওয়া আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে রাজান ১১৯ তম। এ আন্দোলনে ১৩ হাজারের অধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভটি ফিলিস্তিনিদের দ্বারা শুরু হয়েছিল শুক্রবারে ঐ বিক্ষোভ চলাকালীন সাবরিনের কন্যা, ২১ বছর বয়েসি রাজান তাদের সাথে ছিল। একজন চিকিৎসাকর্মী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার সময় ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে মারা যান।
রাজার গুলবিদ্ধ হওয়া সময় তার পাশেই অবস্থান করছিল আরেকজন চিকিৎসক স্বেচ্ছাসেবী রিদা নাজ্জার। তিনি বলেন, আমরা যখন সীমান্তের বেড়ার ভেতরের আহত আন্দোলনকারীদের উদ্ধার করছিলাম তখন ইসরাইলের সৈন্যরা আমাদের দিকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
তখন একজন ইসরাইলি স্নাইপার সরাসরি রাজানকে গুলি করে। আমারদের দলের অপর ৩ জন এতে আহত হয়।
রাজান প্রথমে বুঝে উছতে পারেনি যে তার গায়ে গুলি লেগেছে। বুঝার পর সে কেঁদে উঠলো আর মাটিতে পড়ে গেলো।
রাজান ২০ এপ্রিল আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, তিনি মনে করেন আহত আন্দোলনকারীদের সেবা দেয়া এটা তার কাজ এবং দায়িত্ব।
ইসরাইলি সৈন্যরা ইচ্ছা করেই এত এত মানুষ হত্যা করছে। এটা খুবই উদ্ভট এবং লজ্জাজনক কাজ হবে যদি আমি আমার জনগনের সাথে না থাকি, রাজান বলেছিলেন।
গত মাসে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া সাক্ষাতকারে রাজান বলেছিলেন, তিনি খুব উদ্যমের সাথেই এই কাজ করে থাকেন।
তিনি বলেছিলেন, আমাদের একটাই উদ্দেশ্য জীবন বাঁচানো এবং আহতদের সরিয়ে ফেলা। এটা আমরা আমাদের দেশের জন্য করি।
রাজান সামাজিক বাধা উপেক্ষা করে প্রতিদিন ১৩ ঘন্টা কাজ করতেন। তিনি সকাল ৭টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতেন।
রাজান বলেছিলেন, সমাজ যদি নারীকে খুশি হয়ে দায়িত্ব পালন করতে না দেয়। তাহলে জোড় করে করে নারীদের অংশ নিতে হবে। কেননা নারীরা যেকোন পুরুষের তুলনায় অধিক শক্তিশালী।
রাজানের মা সাবিরিন বলছিলেন, রাজান খান ইউনিসে আন্দোলনকারী সবার কাছেই অতি পরিচিত মুখ ছিল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button