সর্বোচ্চ বরাদ্দ কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে
সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালের সম্পূরক বাজেট এবং ২০১৮-১৯ সালের বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫৩ মিনিটের দিকে বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।
দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে সংসদ ভবনের অধিবেশনকক্ষে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটের দিকে সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে বাজেট উপস্থাপন করার অনুমতি চান। অনুমতির পর তিনি বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। এটি বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এবং অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ১২তম বাজেট।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে: ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে। এর অঙ্ক ৫৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা খাতে (৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা)।
অর্থমন্ত্রী যে দু’টি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন সেগুলো আলাদা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এর একটি হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। অন্যটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত।
এদিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এখন তিনটি অংশে বিভক্ত। এগুলো হলো- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ।
এবারের বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ও বৈদেশিক অনুদান ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবি আর বহির্ভূত কর ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। কর ব্যতিত রাজস্ব প্রাপ্তি ৩৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান ৪ হাজার ৫১ কোটি টাকা।
এডিপি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা ও ঘাটতি ১ লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। এদিকে নিট ঋণ ধরা হয়েছে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।
বাজেটে জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার প্রত্যাশা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে।
নতুন বাজেটের আকার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৬৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা বেশি। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এর আকার ৯৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটের আকার তিন লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অর্থমন্ত্রী বৈদেশিক উৎস থেকে মোট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন ৬০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১০ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ খরচ হবে। সরকারের নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ হাজার ১৬ কোটি টাকা। ঘাটতির বাকি ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা নেওয়া হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বাকি ৩ হাজার কোটি টাকা আসবে অন্যান্য উৎস থেকে।
যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে, কমছে: বাজেটে সিগারেটের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়ও দাম বাড়ছে এনার্জি ড্রিংক, প্রসাধন সামগ্রী, সানস্ক্রিন, সানগ্লাস, আফটার শেভ লোশন, সিরামিক বাথটাব, ফিলামেন ল্যাম্প, পলিথিন, ১ হাজার থেকে ১৬০০ স্কয়ার ফিট ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ফি, লিপস্টিকের।
অপরদিকে কমছে কৃষিজমির রেজিস্ট্রেশন ফি, রড, সিমেন্ট, হাইব্রিড মোটরকার, ক্যানসারের ওষুধ, টায়ার-টিউব তৈরির কাচামাল, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশের।
বৃস্পতিবার ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এসব পণ্যের দাম বাড়ানো ও কমানোর প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের নাম দেয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’।