কী আছে শফীর নামে প্রচলিত ভিডিও ফুটেজে?
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফির এক ওয়াজের বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। হাটহাজারীর ওয়াজের ভিডিও ক্লিপে তিনি নারীদের চতুর্থ শ্রেণির বেশি পড়তে নিষেধ করেন, সহশিক্ষার সমালোচনা করেন এবং নারীদের চাকরি না করে বাড়িতে রাখার পরামর্শ দেন। তিনি নারীদের সঙ্গে তেঁতুলের তুলনা করেন।
অবশ্য ওই ভিডিও চিত্র আসলেই আল্লামা শফীর কিনা তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে ভিডিও চিত্রটি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানিয়ে শফী সাহেবকে বিতর্কিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যা-ই হোক কী আছে ওই ভিডিও চিত্রতে?
ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, আহমদ শাহ শফী মেয়েদের প্রাথমিক সমাপনী শিক্ষায় অংশ নেয়ার আগেই স্কুল থেকে ফিরিয়ে আনতে অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। শফী বলেন, ‘আপনারা মেয়েদের স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে লেখাপড়া করাইতেছেন। কেন করাইতেছেন? তাদের ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়াইবেন যাতে বিবাহ শাদী দিলে স্বামীর টাকা-পয়সার হিসাব রাখতে পারে। আপনার মেয়েকে স্কুল-কলেজ, ভার্সিটিতে পড়াইতেছেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করতেছেন। কিছুদিন পর আপনার মেয়ে, নিজে নিজে একটা স্বামী জোগাড় কইরা লাভ ম্যারেজ, কোর্ট ম্যারেজ কইরা চইলা যাবে। আপনার কথা স্মরণ করবে না।’ হেফাজতের আমিরের দাবি, সহশিক্ষা থাকলে ছেলেদের পড়ায় মনযোগ থাকে না। তিনি বলেন, ‘মহিলাদের ক্লাসে সামনের দিকে বসানো হয়, পুরুষরা কী লেখাপড়া করবে?’
হেফাজতের আমির শফী অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, আপনার মেয়েকে কেন দিচ্ছেন গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য? চাকরি তো অনেকে করতেছেন। আপনি নিজে করতেছেন, আপনার বউ করতেছে, মেয়েরা করতেছে। কিন্তু তারপরওতো পারতেছেন না। খালি অভাব আর অভাব। আগের যুগে শুধু স্বামী রোজগার করত আর সবাই মিইলা খাইত। এখন বরকত নেই। সবাই মিল্লা এত টাকা কামাইয়াও তো কুলাইতে পারতেছেন না।
গার্মেন্টসে কেন দিচ্ছেন আপনার মেয়েকে? সকাল ৭-৮টায় যায়, রাত ১০-১২টায়ও আসে না। কোন পুরুষের সঙ্গে ঘোরাফেরা করে, তুমি তো জান না। কতজনের সঙ্গে আপনার মেয়ে চলছে তা তো জানেন না। জেনা কইরা টাকা কামাই করতেছে, বরকত থাকবে কেমনে। মেয়েদের বাইরে যেতে মানা দাবি করে হেফাজত আমির বলেন, মেয়েদের পড়াশোনা বা চাকরি নয়, ঘরের বাইরে যাওয়ারই বিরোধী হেফাজতে ইসলাম। মেয়েদের কাজ ঘরের ভেতর। নারীদের ঘরে থাকতে বলেছে ইসলাম। তোমরা জাহিলিয়াতের সময়ের মতো বেপর্দায় ঘর থেকে বাইর হইও না, উলঙ্গ অবস্থায় মাঠে-ঘাটে-হাটে আপনারা মহিলারা মার্কেট করতে যাবে না। স্বামী আছে সন্তান আছে তাদের যাইতে বলবেন। আপনি কেন যাবেন? আপনি স্বামীর ঘরের মধ্যে থাইকা উনার আসবাবপত্র এগুলার হেফাজত করবেন। ছেলে-সন্তান লালন-পালন করবেন। এগুলা আপনার কাজ। আপনি বাইরে কেন যাবেন?
শফী বলেছেন, ‘মেয়েরা হচ্ছে তেঁতুলের মতো। ছোট্ট একটা ছেলে তেঁতুল খাইতেছে, তা দেখলে আপনার মুখ দিয়া লালা ঝরবে। তেঁতুল গাছের নিচ দিয়া আপনি হাঁইটা যান তাইলেও আপনার লালা ঝরবে। দোকানে তেঁতুল বিক্রি হইতে দেখলেও আপনার লালা ঝরবে। ঠিক তেমনি মহিলাদের দেখলে দিলের মাঝে লালা ঝরে। বিবাহ করতে মন চায়। লাভ ম্যারেজ কোর্ট ম্যারেজ করতে মন চায়। দিনরাত মেয়েদের সঙ্গে পড়ালেখা করতেছেন, আপনারা দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। রাস্তাঘাটে মেয়েদের সঙ্গে চলাফেরা করতেছেন, আপনার দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। যতই বুজুর্গ হন আপনার মনের মাঝে কু খেয়াল আইসা যাবে। এইটা মনের জেনা, দিলের জেনা। এইটা এক সময় আসল জেনায় পরিণত হবে।