অবশেষে পিছু হটলেন ট্রাম্প
ঘরে-বাইরে প্রচন্ড চাপ। এই চাপের কাছে আর টিকে থাকতে পারলেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার নীতি থেকে অবশেষে পিছু হটলেন তিনি। প্রবল জনমতের চাপে শেষ পর্যন্ত্ম নতিস্বীকার করে সিদ্ধান্ত পাল্টে বুধবার একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এতে অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে আটক পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা বাবা-মায়ের কাছ থেকে সন্তানদের আলাদা রাখার নীতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প ও মেয়ে ইভানকাও বাবা-মার কাছে থেকে শিশুদের আলাদা করে রাখার নীতি মেনে নিতে পারেননি। এ ছাড়া অন্য আরও চার সাবেক ফার্স্ট লেডি তার নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। মার্কিন ক্যাথলিক বিশপরাও এক বিবৃতিতে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ওই নীতি ‘ক্যাথলিক মূল্যবোধের বিপরীত’ এবং ‘অনৈতিক’। আর পোপ ফ্রান্সিস জানান, তিনিও বিশপদের সঙ্গে একমত। পাশাপাশি মার্কিন কংগ্রেস থেকেও এ নিয়ে চাপে ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ওই নির্বাহী আদেশে সই করলেন।
ট্রাম্পের নতুন এই আদেশের ফলে অবৈধ অভিবাসী শিশুদের আলাদা না করে তাদের পরিবারের সঙ্গেই রাখা হবে। আর শিশুদের ২০ দিনের বেশি আটক না রাখার আদেশ সংশোধন করতে আদালতের কাছে আবেদন করা হবে। তবে আদালত ওই রায় পরিবর্তন না করলে কী ঘটবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
হোয়াইট হাউসে বুধবার ওই নির্বাহী আদেশে সই করার পর ট্রাম্প বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া বাবা-মায়ের কাছ থেকে সন্তানদের আলাদা করার দৃশ্য তিনি আর দেখতে চান না। ট্রাম্প বলেন, তার স্ত্রী মেলানিয়া এবং মেয়ে ইভানকাও অভিবাসী পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার নীতি পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার মনে হয়, হৃদয়বান যে কেউ বিষয়টা অনুধাবন করতে পারবে। পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, এটা আমরা আর দেখতে চাই না।’ তবে এরই মধ্যে যেসব পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে, তাদের বিষয়ে আদেশে কিছু বলা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তাদের হিসাবে, গত ৫ মে থেকে ৯ জুনের মধ্যে মোট দুই হাজার ২০৬ জন কারাবন্দি বাবা-মায়ের কাছ থেকে দুই হাজার ৩৪২ শিশুকে আলাদা করে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
তবে চাপের মুখে অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তন আনলেও ট্রাম্প বলেছেন, তার সরকার অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত রাখবে। নতুন নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, যতদিন মামলা চলবে, ততদিন অভিবাসী পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গেই বন্দি রাখা হবে। পরিবারগুলোর মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে। অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে আটক শিশুদের ২০ দিনের বেশি আটক না রাখার বিষয়ে আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে, তাও সংশোধনের জন্য অনুরোধ জানানো হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, নির্বাহী আদেশ দিয়ে তিনি ওই নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারবেন না। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এর জন্য কংগ্রেসের সম্মতি প্রয়োজন হবে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির নেতা পল রায়ান বলেছেন, অভিবাসী পরিবারগুলোর সদস্যদের একসঙ্গে রাখার আইন করার বিষয়ে বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটি হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তাদের হিসাবে, গত ৫ মে থেকে ৯ জুনের মধ্যে মোট দুই হাজার ২০৬ জন কারাবন্দি বাবা-মায়ের কাছ থেকে দুই হাজার ৩৪২ শিশুকে আলাদা করে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে আগে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে কেউ আটক হলে প্রথমবার তাদের আদালতের মুখোমুখি করে ছেড়ে দেয়া হতো। কিন্তু গত এপ্রিলে নতুন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রকাশ করা হয়, যেখানে সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা এবং কারাগারে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। তবে শিশুদের যেহেতু কারাগারে রাখার নিয়ম নেই, তাদের আলাদাভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে শিশুদের ঘুমিয়ে থাকার ছবি এবং তাদের কান্নার অডিও প্রকাশ হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।