১০ ঘন্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ৩৫ জনের
শুক্রবার রাত ১০টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মাত্র ১০ ঘন্টায় ৭ জেলায়- গাইবান্ধা, রংপুর, নাটোর, ঢাকা, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৫ জনের প্রাণ গেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো কমপক্ষে ৫০ জন।
এর মধ্যে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলায় বাস উল্টে ১৬ জন, রংপুর সদরে বিআরটিসির বাসে ট্রাকের ধাক্কায় ছয়জন, নাটোরে ট্রাকচাপায় দুই অটোরিকশা আরোহী এবং সাভারের আমিনবাজারে বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ৪ জন, পাবনায় বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২, চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ১ ও গোপালগঞ্জে বাসচাপায় মোটরসাইকেলের ২ আরোহী নিহত হন।
তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের সবার নাম পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, যারা ঈদের পর বাড়তি ছুটি কাটিয়ে রাতের বাসে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। আবার কেউ চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন হাসপাতালে।
গাইবান্ধা: গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে রাস্তার পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে একটি বাস উল্টে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে; আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪০ জন।
শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ব্র্যাক মোড়ের কাছে বাঁশকাটা (গরুরহাট) এলাকায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আকতারুজ্জামান জানান। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি হতাহতদের নাম পরিচয় জানাতে পারেননি।
দুর্ঘটনার কারণে সকালে প্রায় দেড় ঘণ্টা রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। উদ্ধারকর্মীরা দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরিয়ে নেওয়ার পর সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে বলে জানান ওসি।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা আলম এন্টারপ্রাইজ পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের বাঁ পাশে বড় একটি রেইনট্রি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং উল্টে যায়।
এতে ধাক্কা খেয়ে ও বাসের নীচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সাতজন। হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরো নয় জনের।
ওসি জানান, আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে রংপুর ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লাশগুলো রাখা হয়েছে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানায়। পরিচয় শনাক্তের পর সেগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
রংপুর: রংপুর সদর উপজেলার শলেয়াশাহ বাজারের কাছে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে ট্রাকের ধাক্কায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার রাত ২টার দিকে এ দুর্ঘটনায় আরও ১৩ জন আহত হয়েছেন বলে তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল্লাহ হেল বাকি জানান।
তিনি বলেন, দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা বিআরটিসির ঈদ স্পেশাল দোতলা বাসটি ঢাকা যাচ্ছিল। শলেয়াশাহ বাজারের কাছে এসে বাসের একটি চাকা ফেটে যায়। চালক ও চালকের সহযোগী তখন রাস্তার পাশে বাস থামিয়ে চাকা বদলাতে শুরু করেন। বাসের কিছু যাত্রীও নেমে এসে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন।
এমন সময় একটি বালুবাহী ট্রাক এসে পেছন থেকে বিআরটিসির বাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জনের মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট এসে আহতদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
ওসি আবদুল্লাহ হেল বাকি বলেন, নিহতরা সবাই ছিলেন বাসের আরোহী। তাদের মধ্যে নিশাত ও সাজ্জাদ নামে দুইজনের পরিচয় জানা গেছে।
“দুজনেরই বয়স ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে। সম্ভবত গার্মেন্টে কাজ করত। ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় কাজে ফিরছিল তারা।”
নাটোর: নাটোর শহরে বালুবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় দুই অটোরিকশা আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নাটোর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে সদর থানার ওসি মশিউর রহমান শিকদার জানান।
নিহতরা হলেন নলডাঙ্গা উপজেলার সোনাপাতিল গ্রামের সুদিষ্ণু দেবনাথ (৫৫) ও তার প্রতিবেশী কানাইচন্দ্র (৩০)।
সুদিষ্ণুর স্ত্রী ও মেয়েও এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওসি জানান, ওই চারজন সকালে অটোরিকশায় করে নাটোরের মিশন হাসপাতালে যাচ্ছিলেন চিকিৎসার জন্য। রাজশাহী থেকে নাটোরগামী একটি বালুবোঝাই ট্রাক পেছন থেকে ওই অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।
নাটোর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আকবর হোসেন জানান, তার চোখের সামনেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, “দ্রুতগামী ট্রাকটা মুহূর্তের মধ্যে অটোরিকশাটাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে চলে গেল।”
ওসি মশিউর রহমান শিকদার বলেন, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ট্রাক চালক দ্রুত তার গাড়ি নিয়ে ওই এলাকা থেকে চলে যায়। পুলিশ ট্রাকটি শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।
ঢাকা: এদিকে শনিবার সকাল ৭টায় ঢাকার সাভারের আমিন বাজার এলাকায় রংপুর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতি পরিবহনের একটি নৈশ কোচ পেছন থেকে একটি ট্রাককে ধাক্কা দিলে ৪ ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।
আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি বলে জানায় পুলিশ।
পাবনা: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে চালক ও তার সহকারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ২০ বাসযাত্রী।
আজ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার বগুড়া-নগরবাড়ী সড়কের ভুইয়াগাতী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুর কাদির জিলানী জানান, আর কে পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি বগুড়া থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। ভুইয়াগাঁতী এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চালক ও তাঁর সহকারী নিহত হন।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া বাজারে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক ধানকল মালিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে।
চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, ধানকল মালিক ওবায়দুর চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়ক ধরে হেঁটে আলোকদিয়া বিশ্বাস তেল পাম্পের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুরগামী একটি মোটরসাইকেল ওবায়দুরকে খুব জোরে ধাক্কা দেয়। এতে পাকা রাস্তার ওপর পড়ে গিয়ে তাঁর মাথা থেঁতলে যায়, বাম পা ভেঙে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় বাসচাপায় মোটরসাইকেলের দুই অরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় আরো ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন।
আজ সকাল ৮টার দিকে উপজেলার গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কের ঘোনাপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।