মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক বসালো তুরস্ক ও ভারত
যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্কারোপকারী দেশের সংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের পাল্টায় ২৮০ কোটি ইউরো মূল্যের মার্কিন পণ্যে শুল্ক বসিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বারবন উইস্কি, মোটরসাইকেল ও কমলার রসসহ ইউরোপে রপ্তানি হয় এমন বেশ কিছু মার্কিন পণ্যে গতকাল শুক্রবার থেকে এ শুল্ক কার্যকর হয়েছে।
অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার তুরস্ক ও ভারত, কোটি কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে তামাক, হার্লি ডেভিডসন মোটরসাইকেল, ক্র্যানবেরি ও পিনাট বাটারসহ বেশিরভাগ পণ্যে বসছে ২৫ শতাংশ শুল্ক। জুতা, কয়েক ধরনের পোশাক ও ওয়াশিং মেশিনসহ কিছু পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা এই শুল্ক আরোপ করল।
বৃহস্পতিবার ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ জাঙ্কার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছে তা ‘সব ধরনের যু্ক্তি ও ইতিহাসবিরোধী’। “আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে স্পষ্ট ও যথাযথ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভারসাম্য ফেরাতে এবং এর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার আমরা করব।”
চলতি বছরের মার্চে আমদানি করা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ওপর যথাক্রমে ২৫ ও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। বাণিজ্য নিয়ে মতবিরোধের জেরে যুক্তরাষ্ট্র জুনের প্রথম দিন থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মেক্সিকোসহ ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ওপর এই শুল্ক কার্যকর করে। এ নিয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর সম্মেলনেও অন্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের মতানৈক্য দেখা যায়। বেইজিং তার ‘ব্যবসার ধরন’ বদলাতে রাজি না হলে চীনের আরও দুইশ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি পণ্যে নতুন করে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, তুরস্ক ও ভারত, কোটি কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মিত্রদেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করেন। তার এমন পদক্ষেপের পাল্টা জবাবে দেশটির ওপর এক এক করে শুল্ক আরোপ করছে মিত্রদেশগুলো। এরকম শুল্কারোপকারী দেশের তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে ভারত ও তুরস্ক।
নয়াদিল্লী-ভিত্তিক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জয়তি ঘোষ বলেন, এই শুল্কারোপ বাণিজ্যের আয়তনে প্রভাব ফেলবে। সবচেয়ে প্রভাব পড়বে, সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে। কোন পক্ষের রপ্তানিকারকরাই নিশ্চিত নন যে পরবর্তীতে কোন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ হতে চলেছে ও কি পরিমাণে।
তুর্কি অর্থমন্ত্রী নিহাত জেবেকসি বলেন, ইস্পাত পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র অবিবেচক ও অসমর্থনীয় শুল্কারোপের জবাবে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে আংকারা। আখরোট, কাজুবাদাম, তামাক, হুইস্কি, প্রসাধনী, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি মার্কিন পণ্যের ওপরেও তুরস্কের শুল্ক কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে তুরস্কের পঞ্চম বৃহৎ রপ্তানি বাজার। ২০১৭ সালে দুই দেশের মধ্যে ২০৬০ কোটি ডলার সমমূল্যের ব্যবসা সম্পন্ন হয়েছে।