‘ট্রাম্পের শাসনামলে বেড়েছে বৈষম্য দরিদ্র হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র’
জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনামলে দরিদ্র হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসাথে দেশটিতে বৈষম্যও বেড়েছে অনেকটা। গত বৃহস্পতিবার জেনেভায় রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়। এদিকে, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে ট্রাম্পের প্রশাসন।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটির নাম ‘যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্রতা এবং বৈষম্য’। প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেখানে বৈষম্য দ্রুত বাড়ছে। এই বৈষম্য চ্যাম্পিয়নের দিকে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির আইন ও মানবাধিকার বিষয়ের অধ্যাপক ফিলিপ অ্যালস্টন জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন তৈরিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের পুয়েত্রো রিকো, ওয়াশিংটন ডিসি, আলাবামা, ক্যালিফোর্নিয়া, জর্জিয়া, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াসহ বিভিন্ন রাজ্য পরিদর্শন করেছেন।
তাদের অভিমত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার কর কর্তন করেছেন। এর ফলে ধনীরা আরো ধনী হয়েছে, বৈষম্যও বেড়েছে।
চলমান মার্কিন অর্থনীতির ধারাপ্রবণতা ও সরকারের নীতিপরিকল্পনা বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘ বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে সেখানে ধনবৈষম্য বাড়ছে। দরিদ্ররা রূপান্তরিত হচ্ছে আরও দরিদ্রতে। ট্রাম্প প্রশাসন ধনীদের কর কমানোর বিপরীতে দরিদ্রদের জন্য বেশকিছু রাষ্ট্রীয় সহায়তামূলক কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্য ও বৈষম্য শীর্ষক জাতিসংঘ প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মূলত এই কারণেই দ্রুততর সময়ের মধ্যে ‘ধনবৈষম্যের চ্যাম্পিয়ন’শিপ অর্জন করতে যাচ্ছে দেশটি।
সম্প্রতি প্রকাশিথ জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, এর এক তৃতীয়াংশ শিশু। প্রতি ৮ জনের মধ্যে একজন মানুষ সরকারের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতাভূক্ত। ৫০ লাখ মানুষ তৃতীয় বিশ্বের বাস্তবতার মতো করে ‘নিষ্ঠুর বঞ্চনা’য় বসবাস করে। ট্রম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে যেসব নীতি গ্রহণ করেছেন, তা বৈষম্যকে আরও গভীর করেছে। জাতিসংঘে নিয়োজিত বিশেষ দূত ফিলিপ অ্যাস্টন তার দায়িত্বের অংশ হিসেবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই বিপন্ন বাস্তবতার কথা তুলে এনেছেন। তার গবেষণা এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ভয়াবহতাকেই তুলে ধরেছে।
চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ জাতিসংঘ দূত অ্যাস্টন যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্যপীড়িত কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কয়েক মাস সফর করেছেন। এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া, আলাবামা, জর্জিয়া, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন ও পুয়ের্তো রিকোও রয়েছে। সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় জনবহুল শহর জেনেভায় বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্বের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র ও সুযোগ-সুবিধার কেন্দ্রভূমি যুক্তরাষ্ট্র বৈষম্যে চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দারিদ্র্যবান্ধব কাজগুলো থেকে প্রশাসনকে সরিয়ে নেয়ার সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গিয়ে জেনেভায়, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের কার্যালয়ে ৪৬ দেশের প্রতিনিধির সামনে যুক্তরাষ্ট্রকে একহাত নিয়েছেন অ্যাস্টন। তিনি বলেছেন, ‘যখন বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী দেশগুলোর অন্যতম একটি রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা হয় ৪ কোটি, তাহলে এর নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান জরুরি হয়ে পড়ে। তি এজন্য ট্রাম্পের নীতিকে দায়ী করেন। বলেন, ধনীদের বিপুল পরিমাণে কর কর্তনের মতো ধনীদের দেওয়া প্রণোদনা এবং সেবা খাতের সংকোচনসহ নিম্ন-আয়ের মানুষদের বিপক্ষের বিভিন্ন নীতি-কর্মসূচি এই বৈষম্যকে নিরঙ্কুশ করে যাচ্ছে। এর আগে ওবামা প্রশাসনের সময় দেওয়া প্রতিবেদনে জাতিসংঘের অভিযোগ ছিল, নাগরিকদের ওপর পুলিশের বর্বরতা ও সেনাবাহিনীতে যৌন কেলেঙ্কারি তদন্তে ব্যর্থ হয়েছে ওবামা সরকার। জাতিসংঘের প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছে মার্কিন প্রশাসন।