অভিবাসী প্রশ্নে সমঝোতায় ইইউ
টানা দশ ঘণ্টা বৈঠকের পর অভিবাসী ইস্যুতে সমঝোতায় উপনীত হয়েছেন ইউরোপের নেতারা। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোরের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ নেতারা অভিবাসন প্রত্যাশীদের চাপ সামলাতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে একমত হন।
সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইতালি ও গ্রিসের ওপর চেপে বসা হাজার হাজার অভিবাসীর বোঝা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে রাজি হয়েছে অন্য দেশগুলো। জোটভুক্ত অন্য দেশগুলোর সহায়তা না পেলে শরণার্থীদের নিয়ে যে কোনো প্রস্তাবে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ্পে কন্তে।সমঝোতার ফলে এখন থেকে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে ইইউভুক্ত দেশগুলো নতুন অভিবাসী কেন্দ্র ঠিক করতে পারবে বলে জানিয়েছেন ইইউ নেতারা। যাচাইবাছাই শেষে সেসব কেন্দ্র থেকেই সত্যিকারের শরণার্থীদের গ্রহণ করা হবে; ফেরত পাঠানো হবে বাকি ‘অনিয়মিত অভিবাসীদের’।
জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শরণার্থীদের অবাধ চলাচলের সুযোগে কড়াকড়ি আরোপের ব্যাপারেও নতুন এ যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে। এতে সমুদ্র ও স্থল পথে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ কমাতে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি তুরস্ক ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সাহায্য বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে।এবারের সম্মেলনের পর ইউরোপ আরও দায়িত্বশীল হল, বাড়াল সংহতির হাত। আমরা এখন থেকে আর একা নয়,” ইইউ বৈঠকে সমঝোতার পর বলেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী কন্তে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মতে, বৈঠকের পর ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার পথ আরও সক্রিয় হল।কিছু কিছু বিষয়ে একমত হলেও ‘মতপার্থক্য নিরসন’ করে অভিবাসী সংকট মেটাতে ইউরোপের আরও অনেক কাজ করা বাকি বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেলও। গতকাল শুক্রবারের যৌথ ঘোষণায় ২৮ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা সীমান্তে সুরক্ষা জোরদারের ব্যাপারেও একমত হয়েছেন।
গত বুধবার থেকে ব্রাসেলসে শুরু হওয়া এই সম্মেলনের প্রথম থেকেই ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে মতবিরোধ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। আফ্রিকা দিয়ে অসংখ্য শরণার্থী ইতালি ও গ্রিসে প্রবেশ করার পর দেশ দুটি ইউরোপের অন্য দেশগুলোকে এ চাপ ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানালেও অনেক দেশই এ বিষয়ে তাদের জোরাল আপত্তির কথা জানায়। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল বলছে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ ২০১৫-র মতো না হলেও নতুন করে আফ্রিকা হয়ে ইউরোপে প্রবেশের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।সংকট মোকাবেলায় উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতেই অভিবাসন কে বানাতে ইউরোপ প্রস্তাব দিলেও মরক্কো প্রথম থেকেই এ ধরণের ভাবনার বিরোধিতা করে আসছে। দেশের ভেতর অভিবাসী ইস্যু নিয়ে চাপে থাকা জার্মান চ্যান্সেলরের জন্যও এবারের বৈঠক স্বস্তির হতে পারে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। ইউরোপের অন্য দেশে নিবন্ধিত শরণার্থীদের জার্মানিতে প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি তুলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চলতি সপ্তাহের রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল মেরকেলের জোটসঙ্গী সিএসইউ পার্টি।অন্যথায় ক্ষমতাসীন বাভারিয়ান কোয়ালিশন সরকার থেকে সরে যাওয়ারও হুমকি ছিল সিএসইউ নেতা ও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সিহফের।সিএসইউ ছাড়া মেরকেলের পক্ষে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ অসম্ভব হয়ে পড়ত। -বিবিসি