নির্বাচনে আসছে হেফাজত !
তিন বছর আগে অরাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভাব ঘটলেও ২০১৩ তে এসে রাজনীতির ময়দানে গুরুত্ব খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে হেফাজতে ইসলাম। ধর্মীয় অনুভ’তি নিয়ে আন্দোলনে নেমে ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়ার পর তারা এখন একটি রাজনৈতিক শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল না হলেও এটি কয়েকটি ইসলামি দল ও কওমি মাদরাসা কেন্দ্রিক সংগঠনের একটি প্ল্যাটফর্ম। সে হিসেবে নিজেদের অরাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি করে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো উচ্চাভিলাষ নেই এবং তারা কারো ক্ষমতা আরোহনের সিঁড়ি হবে না বলেও বারবার বলে আসছেন সংগঠনের নেতারা।
কিন্তু সম্প্রতি এ সংগঠনটি সুর পাল্টিয়েছে। সংগঠনের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে স্ব স্ব দলের ব্যানারে রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা করছেন নেতারা। বিশেষ করে এ সংগঠনে যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে সেগুলোর নেতারা হেফাজতের ইমেজ ব্যবহার করার জন্য মুখিয়ে আছেন। আর হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও এ ব্যাপারে আপত্তি নেই।
মূলত সম্প্রতি পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পরাজিত করার পেছনে কার্যকর ভূমিকা রাখার পর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার বাসনা জেগেছে হেফাজতের বড় একটি অংশের। হেফাজতের অন্তর্ভূক্ত অন্তত ছয়টি ইসলামি দল সংগঠনের ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজ দলের ব্যানারে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর এক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলামের দুই শীর্ষ নেতার কোনো নির্দেশনা বা নিষেধাজ্ঞা নেই বলে জানা গেছে।
তবে হেফাজতের আমির আল্লামা আহম্মদ শফী ও মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবু নগরী নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
হেফাজতের দাবি অনুযায়ী, দেশব্যাপী সংগঠনের পক্ষে যে মুসলিম উম্মার জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে কাজে লাগিয়ে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে নেজামে ইসলাম পার্টি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, খেলাফতে আন্দোলন, খেলাফতে মজলিস (মাওলানা ইসহাক), খেলাফতে মজলিস (মাওলানা হাবিবুর রহমান), খেলাফত ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোটের দুই অংশ।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, হেফাজতের ব্যানারে কেউ নির্বাচন করবে না। হেফাজতভুক্ত সমমনা ইসলামি দলের নেতারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। প্রাথমিকভাবে তারা নীতি আর্দশের সঙ্গে কিছুটা মিল থাকায় ১৮ দলভুক্ত হওয়ার চিন্তা করছেন। ইতিমধ্যে কেউ কেউ সেদিকে যোগাযোগও রক্ষা করছেন।
তবে ভোটের রাজনীতির হিসাব অনুযায়ী, হেফাজতভুক্ত দলগুলোকে ১৮ দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোটে অন্তর্ভূক্ত করা হবে কি না তা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে কিছুই জানানো হয়নি। এরপরও দেশের কোন কোন আসনে প্রার্থী দেয়া যায় তা জরিপ করতে ইতিমধ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। আপাতত তারা ৫০টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামে সাতটি আসনে হেফাজতভুক্ত দলগুলো প্রার্থী দেয়ার কথা রয়েছে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর হেফাজত নেতাদের সঙ্গে অস্ট্রেলীয় ডেপুটি হাইকমিশনারকেও তারা বলেছিলেন তাদের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই। এরপর চার দিন পরই হেফাজতের সেই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছে পোষণ করলেন।
এ ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান (একাংশ) মুফতি ইজহারুল ইসলাম বলেন, ‘হেফাজতের ব্যানারে সরাসরি কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না। যদি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয় তা হলে হেফাজতভুক্ত সমমনা দলগুলো নির্বাচনে প্রার্থী দেবে। ১৮ দলের জোটভুক্ত দল হিসেবে চট্টগ্রামের বাঁশখালী আসন থেকে আমি নির্বাচন করবো।’
হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন। এ নাম ব্যবহার করে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে হেফাজতের সাথে থাকা সমমনা দলগুলো ইচ্ছে করলে প্রার্থী দিতে পারবে।’
জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ের কর্মকাণ্ড এবং জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত ৫০ আসনে প্রার্থী দিতে চায় হেফাজতে ইসলামের বৃহৎ একটি অংশ। হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতাদের হেফাজতের প্রার্থী হিসেবে ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
যেসব আসন ও ব্যক্তিরা হেফাজতের পক্ষ থেকে ১৮ দলীয় জোটের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা হলেন: বাঁশখালী আসন থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, হাটহাজারী আসন থেকে উত্তর জেলা ইসলামী ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনীর, রাঙ্গুনীয়া আসন থেকে হেফাজতের আরেক যুগ্ম-মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্য জোটের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মুফতি মো. ফয়জুল্লাহ, নরসিংদী শিবপুর আসন থেকে হেফাজতের নায়েবে আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নিজামী, যশোর মনিরামপুর আসন থেকে হেফাজতের উপদেষ্টা ও জমিয়তুল ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মো. ওয়াক্কাস (বর্তমানে কারাগারে), গাজীপুর-১ আসন থেকে হেফাজতে ইসলামের গাজীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, ব্রাহ্মনবাড়িয়া থেকে ঢাকা মহানগর যুগ্ম-সম্পাদক ও ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী প্রমুখ।
হেফাজতের নীতিনির্ধারক হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা সবাই সমমনা ইসলামী দলের নেতৃত্বে আছেন।
মোসলমানদের ইমান-আকিদা, নীতি-আদর্শ, ইসলাম ও মোসলমানদের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মোকাবিলায় ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার সম্মিলিত কর্মপন্থা নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে কওমি মাদরাসাভিত্তিক ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
তখন থেকে তারা বারবারই বলে আসছিলেন, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নয় এবং ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো উচ্চাভিলাষ নেই। তারা শুধু ইসলাম ও মোসলমানদের সুরক্ষার জন্য সরকারের কাছ থেকে ১৩ দফা দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছেন। -বাংলামেইল২৪