ব্রিটিশ কমিউনিটিতে অবদানের জন্য জামান মুসলিম নিউজ এওয়ার্ডে ভূষিত
জীবনে সবকিছুই অর্জন সম্ভব; যদি সততা, সংকল্প, সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি এগিয়ে যান। হয়তো কঠিন সময় আর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে কিন্তু জয়ের বন্দরে একজন বিজয়ী সৈনিক হিসেবেই আপনার পদার্পণ হবেই। ব্রিটিশ কমিউনিটিতে এক অনন্য যোগসূত্র স্থাপনের অবদানের জন্য এমএফএ জামান ২০১৮ সালের দ্যা মুসলিম নিউজ আল-বিরুণী এওয়ার্ডে ভূষিত হন। দিনের আলোর নিভতেই লন্ডনের ম্যারিয়ট হোটেলের গ্রসভেনর স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত এক জাকজমকপূর্ণ গালা ডিনারে স্কটিশ ইয়ান ব্ল্যাকফোর্ড এমপি এওয়ার্ড তার হাতে তুলে দেন। জামানের এই বিশেষ অর্জন ব্রিটেনের ভলান্টিয়ার জগতে এক অনন্য উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, যা অনেককে উজ্জীবিত করবে।
ব্রিটেনের অন্যতম মুসলিম ইংরেজী সংবাদপত্র দ্যা মুসলিম নিউজ প্রতিবছর মুসলিম কমিউনিটির প্রতিভাবান ব্যক্তিদের ব্রিটিশ কমিউনিটিতে তাদের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এওয়ার্ড প্রদান করে। এই অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ এমপি ডেভিড লিডিংটন, ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ারসি, লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির টম ব্রেক এমপি, ডমিনিক গ্রেভ এমপি, ইয়াসমিন কোরেশী এমপি সহ ব্রিটেনের বিভিন্ন চ্যারিটি, সংস্থা, মিডিয়ার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এওয়ার্ড বিজয়ী লন্ডন অলিম্পিক ২০১২ এম্বেসেডর জামান ব্রিটিশ কমিউনিটিতে একজন স্বপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়ন এবং সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। জামান বলেন, আমি প্রথমেই মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার এই বিশেষ অর্জনের জন্য কারণ একমাত্র তিনিই আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন যা আমাকে আজ এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। আর আমি আজ সেইসব বিশেষ ব্যক্তিদের স্বরণ করছি, যাদের সার্বিক সহযোগীতা, আন্তরিকতা আমাকে ভালো কাজ করতে উজ্জীবিত করেছে। একটা সময় আমার পাশে কেউ এবং কিছুই ছিলনা কিন্তু এইসব ব্যক্তিদের কারণে আমি বিশ্বাস করতে শিখেছি আমি একা নই, আমি পারবো ভালো কিছু করতে। এটিই আমাকে আত্ববিশ্বাসী করে তুলে এগিয়ে যাওয়ার জন্য; যদিও এই পথটা কখনোই মসৃণ ছিলনা। এজন্য আমাকে অনেক চ্যালঞ্জে, সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু আমার আত্ববিশ্বাস আর দূরদৃষ্টি আমাকে সবসময় সাহায্য করেছে সব বাধা পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। তাই এই অর্জন শুধু আমার একার নয়; সেইসব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান যারা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে এই সেবামূলক কাজ অবিচ্ছিনভাবে চালিয়ে নিতে।
আমার কাজের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মহান প্রভুকে খুশি করা। মহান আল্লাহ আমাকে অনেক নিয়ামত দান করেছেন। তাই আমার উচিত কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তার সৃষ্টির সেবা করা। শেষ দিনের বিচারে যখন আল্লাহ আমাকে জিজ্ঞেস করবেন; আমি যখন ক্ষুদার্ত ছিলাম, আমি যখন অসুস্থ ছিলাম তখন তুমি কোথায় ছিলে ? সেই দিন আমি যেন আমি উত্তর দিতে পারি এই জন্যই আমার সেবামূলক কাজ।
টাকা-পয়সার মানদন্ডে জীবনে সবকিছু অর্জন করা যায়না। আমি আজ এই অবস্থানে এসেছি শুধূমাত্র আমার ভলান্টিয়ার কাজের জন্য কিন্তু আমি কখনো এই কাজের প্রতিদান আশা করিনি কিংবা কোনো বিশেষ পদের জন্য অনুরোধ করিনি। প্রতিটি মুহুর্ত আমাকে চ্যালেঞ্জের সাথে মোকাবেলা করতে হয়েছে, যেখানে শুধু আমার বিশ্বাস, ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম আজ এখানে নিয়ে এসেছে। শুধুমাত্র সততার সাথে আমার প্রভুকে খুশি করার জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি। আল্লাহ আমাকে সুস্থ শরীর দান করেছেন; এটি একটি বড় নিয়ামত। আল্লাহ সূরা আর-রাহমানে বলেছেন, অতএব তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? তাই আমি মনে করি আমার এই সুস্থ শরীর দ্বারা বঞ্চিত-নিপিড়িত মানুষের সেবা করা উচিত; হোক সে কালো কিংবা সাদা অথবা মুসলিম কিংবা অমুসলিম। দৈহিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য কাজ সবোর্ত্তম উপকরণ আর ভালো কাজ মানুষকে সবসময় খারাপ কাজ-চিন্তা থেকে দূরে রাখে। একজন মানুষের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে এই সততা আর কর্মপ্রচেষ্টা।
আমি সবসময় চেষ্টা করি দায়িত্ব এবং বিশ্বাসের সাথে আমার কাজ সম্পাদন করতে। সব অবস্থায় অন্যের উপকার ও ভালো কাজকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। আর অন্যের নিকট আমার দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চেষ্টা করি যা আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। আজ অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমি এখানে আসতে পেরেছি; যা হয়তো অন্যদেরকে উৎসাহিত করবে কিভাবে জীবনকে পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয় আমার যাত্রা কারণ এই সাফল্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আশা করি আমি আমার ভালো কাজের মাধ্যমে এই পৃথিবীকে একটি শান্তির আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো।
উল্লেখ্য ২০১৭ সালের রমজান মাসে তিনি জো কক্স এমপি ফাউন্ডেশন এন্ড ইডেন প্রজেক্টের এম্বেসেডর হিসেবে ৬১৬ মাইল পায়ে হেটে ইয়র্কশায়ার থেকে লন্ডন আসেন। একমাত্র মুসলিম হিসেবে তিনি বিভিন্ন কমিউনিটি প্রজেক্ট, চ্যারিটি এবং স্থানীয় এমপি, মেয়রদের সাথে মিলিত হন। এসব এলাকার ভলান্টিয়ারদের সাথে সাক্ষাৎ এবং তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করেন যাতে তারা এগিয়ে আসে সমাজসেবায়।
দ্যা গ্রেট ওয়াক প্রজেক্টে অংশগ্রহণের সময় বিবিসি, আইটিভি, চ্যানেল এস সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমএফএ জামানের কাজের উপর বিশেষ সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। এছাড়া তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে বিবিসি দ্যা ওয়ান শো তে রমজান মাসে কমিউনিটিতে কাজ করার বিশেষ অবদান হিসেবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন; যেখানে অতিতে ব্রিটেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড়, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত এমএফএ জামান ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক চ্যারিটি সংস্থা মুসলিম এইডের সেরা ভলান্টিয়ার নির্বাচিত হন এবং ২০১৭ সালের দ্যা ক্যালাডরেল কমিউনিটি স্পিরিট অব দ্যা ইয়ার এওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সংস্থার সাথে জড়িত। সেইফ এন্ড সেইভ এবং কমিউনিটি অব জিউস এন্ড মুসলিম এর ফাউন্ডার জামান ভলান্টিয়ার সেন্টার লুইসামের একজন ট্রাস্টি এবং ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ৩ বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি লন্ডন অলিম্পিক ২০১২ এ তিনি লন্ডন এম্বেসেডর এবং ২০১৫ সালের রাগবি ওয়ার্ল্ড কাপ ইংল্যান্ডের একজন ভলান্টিয়ার ছিলেন। টিম লন্ডন, নিউহাম ক্রিকেট ক্লাব, ইউনিভার্সেল পিস ফেডারেশন, নিয়ার নেইবার্স, সেন্ট জোনস এম্বুলেন্স, মেট্রোপলিটন এসেক্স ক্রিকেট এসোসিয়েশন এবং বারটস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্টের একজন সদস্য। জামান ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের একজন ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে বিলেতের ক্রীড়াক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে আসছেন। তিনি পঙ্গু শিশুদের সাহাযার্থে ফান্ড রাইজিংয়ের জন্য লন্ডন ম্যারাথন ২০১৫-১৬-১৭ সহ বিভিন্ন ম্যারাথন দৌড়ে অংশগ্রহণ করেন।