প্রতি বছর চলে যাচ্ছে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
বাংলাদেশ ভারতের চতুর্থ রেমিট্যান্স আহরণকারি দেশ
ভারত ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে আয় করে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। হিসাব মতে ভারতের রেমিট্যান্স আহরণকারি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থা চতুর্থ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ৫০০,০০০(পাঁচ লাখ) ভারতীয় রয়েছেন। এর বাহিরেও অবৈধ পথে বাঙলাদেশ থেকে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার ভারতে যায়।
ভারত সরকার নিজেদের অবৈধ এসব জনশক্তিকে টিকিয়ে রাখতে প্রায় বলে থাকেন ভারতে প্রায় ২০ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী রয়েছে। মাঝে মধ্যে এদের বের করে দেয়া হুমকিও দেয়া হয়। প্রশ্ন হলো এত বাংলাদেশী ভারতে অবস্থান করে তাহলে তাদের রেমিট্যান্স কোথায়। রেমিট্যান্স আহরণকারি ২০ দেশের তালিকা ভারত নেই। তাহলে তারা এ টাকা কি করেন।
জানা গেছে, ভারত ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে রেমিট্যান্স হিসাবে আয় করে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাড়ায় ৮ দশমিক ৩২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। রেমিট্যান্সগুলি অবৈধ চ্যানেলগুলির মাধ্যমে পাঠানো হতো কিন্তু ভারতীয় ব্যাংকে ঘোষণা তারা অবৈধ পথে টাকা পাঠানো বন্ধ করতে চায়। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সূত্র জানায়। অবৈধ বিদেশী কর্মী বাংলাদেশের কাছ থেকে টাকা পাঠাতে পারে না কিন্তু অবৈধ ইন্ডিয়ানরা অধিকাংশ টাকা এখনও অবৈধ পথে পাঠান।
জানা গেছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন ভাবে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। এরমধ্যে বৈধ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭ এবং অবৈধ প্রায় ১০ লাখেরও বেশি। পাকিস্তানের নাগরিক ৫৪ হাজার ৩শ ৭, বৈধ ২৪ হাজার ৩শ ৭ এবং অবৈধ প্রায় ৩০ হাজার। নেপালের নাগরিক ২৭ হাজার ৬, বৈধ ১২হাজার ২শ ৪০ এবং অবৈধ প্রায় ১৫ হাজার। শ্রীলংকার ৮ হাজার ৫শ ২৩, বৈধ ৫ হাজার ২৩ এবং প্রায় অবৈধ ১০ হাজার। ভুট্টানের ২০ হাজার ৫৬, বৈধ ১৬ হাজার ৭ এবং প্রায় অবৈধ ৪ হাজার এবং মালদ্বীপের ১৭ হাজার ৩২, বৈধ ৮ হাজার ৩২, বাকী প্রায় ৯ হাজার অবৈধ।
বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসের মধ্যে ভারতীয় দূতাবাসের লোকবলও বেশি। ভারতীয় নাগকিরদের মধ্যে বেশির ভাগই গার্মেন্টস, ক্লিনিক্যাল, সিমেন্ট এবং ইপিজেড ব্যবসায় জড়িত। প্রায় শতাধিক গার্মেন্টসের মালিক ভারতীয় নাগরিক। আর তাদের মালিকানায় রয়েছে প্রায় সহস্রাধিক ফ্ল্যাটবাড়ী। এছাড়া ইপিজেডের সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান, নার্সিং এবং এনজিওতে কেউ কেউ কর্মরত রয়েছে।
পাকিস্তানের নাগরিকদের মধ্যে সিংহভাগই গার্মেন্টস, কাপড় এবং চামড়া জাতীয় ব্যবসায় জড়িত। নেপালের নাগরিকদের মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্র। এরা ডাক্তারী বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এদেশে এসেছে। কেউ কেউ পাস করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। ভুটানের নাগরিকদের মধ্যে বেশির ভাগই গ্যাস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। শ্রীলংকার নাগরিকরা ব্যবসা ও পেশায় নিয়োজিত। আর মালদ্বীপের নাগরিকদের মধ্যে অধিকাংশই ডিপ্লোমা নার্সিং পেশায় জড়িত। এছাড়া মালদ্বীপের বেশকিছু নার্সিং-এ অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রী রয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এসব নাগরিক চোরাপথে অর্থাৎ অবৈধভাবে নিজ নিজ দেশে যাতায়াতও করছেন। বর্ডার গার্ড এবং পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক শ্রেণির সদস্যের সঙ্গে দুর্নীতি এবং সখ্যতার কারণে অবৈধভাবে থাকা এসব নাগরিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে অবৈধভাবে অবস্থানকারী নাগরিকদের দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে একটি সংস্থা বেশ তৎপর রয়েছে।
বাংলাদেশে হাজার হাজার ভারতীয় রয়েছে, এদের অধিকাংশই অবৈধ অভিবাসী এবং শরণার্থী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ৫০০,০০০ ভারতীয় রয়েছেন। এনজিও, পোশাক, টেক্সটাইল, আইটি এবং হুন্ডি ট্রান্সফার সিস্টেমের মাধ্যমে অর্থ ফেরত পাঠানোর মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তারা চাকরি পেয়েছিল। তবে বাংলাদেশে অবৈধ ভারতীয়দের প্রকৃত সংখ্যা এখন পর্যন্ত এক মিলিয়ন হতে পারে, এটি বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার পূর্বাভাসও।
২০১২ সালে ভারতকে সর্বোচ্চ অর্থ প্রেরণকারী দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ ছিল পঞ্চম।২০১২ সালের বাংলাদেশে কাজ করে এমন ভারতীয়রা ৩ দশমিক৭ বিলিয়ন ডলার পাঠায়। বাংলাদেশে ভারতে রেমিটেন্সের ৫ ম বৃহত্তম উৎস তৈরি করে। এটি আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান কিন্তু এর বাহিরেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যা রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই পর্যটক ভিসায় এসেছেন এবং টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।
অভিবাসী সম্প্রদায় প্রায়ই দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যায়। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা কেউ বলতে পারে না। ভারতের অবৈধভাবে বসবাসকারী লাখ লাখ বাংলাদেশি পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম থেকে আলাদা এবং অসংখ্য নগর ও গ্রামীণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
জুলাই ২০১৬ সালে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বন্যার পর চার হাজার ভারতীয় লালমনিরহাটের আশ্রয় নেয়। পরে তারা আর ফিরে যায়নি।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ মাইগ্রেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফে বলেছে,স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে দু দেশের অবৈধ লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ভারতে যেসব বাংদেশি রয়েছে তাদের আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো ন্ াযতটা বাংলাদেশে অবস্থানকারি ভারতীয়দের অবস্থা স্বচ্ছ। তাদের অধিকাংশই লোকই দক্ষ ও প্রশাসনের উচ্চ পদে রয়েছেন। আর কারণেই মোটা অংকের টাকা প্রতিবছর চলে যাচ্ছে ভারতে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রতি বছরই বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ ভারতীয় কর্মকর্তা কর্মচারির সংখ্যা বাড়ছে। গত দশ বছরে এটি বেড়েছে কয়েক গুণ। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি খাতে তাদের জনশক্তি বেশি কাজ করছে। দুটি বড় মোবাইল কোম্পানির ছত্র ছায়ায় তারা বাংলাদেশে এসে পরে অন্য কোম্পানিতে কাজ নিচ্ছে। পরে তারা আবারও ঐ একই পদে ভারত থেকে লোক আনছে। এভাবে তারা তথ্য প্রযুক্তি খাতে অদিপত্য বিস্তার করে চলছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের মধ্যম আয়ের দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ প্রেরণ ৪৬৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০১২ সালে ৪২৯ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক রেমিটেন্স বৃদ্ধির দেশগুলোর মধ্যে বাঙলাদেশের অবস্থা দ্রুত বেড়েছে। ৫ বছর আগেও বাংলাদেশের অবস্থা ছিল ১৬ তে। ভারত ২০১৭ সালে রেমিট্যান্স আয় করে ৬১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৩ দেশটি আয় করে ৫৭৩ বিলিয়ন ডলার। এখাতে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।
ভারতে প্রায় সব অঞ্চলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটি ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে শীর্ষ অস্থানে রয়েছে। তারপরে চীন (৬৪ বিলিয়ন), ফিলিপাইন (৩৩ বিলিয়ন), মেক্সিকো (৩১ বিলিয়ন), নাইজেরিয়া (২২ বিলিয়ন ডলার) এবং মিশর (২০ বিলিয়ন)।
সেন্টাল পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) একটি বেসরকারি চিন্তাশীল সংস্থা মনে করে, ২০১৭ সালে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছে, ভারত বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম রেমিটেন্স উৎস।
তথাকথিত দক্ষ ভারতীয় এবং শ্রীলংকান নাগরিকদের হাজার হাজার আইনি ও অবৈধ উভয়ই প্রধানত দেশের পোশাক শিল্পে কাজ করছে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে, ভারতীয় নাগরিকদের সংখ্যা লংকানদের তুলনায় অনেক বেশি।
জানা গেছে উচ্চ পর্যায়ে অস্থারত এসব ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশে তৈরি পোষাক কারখানাগুলোতে নানান কৌশল অবলম্বন করে সংকট তৈরি করে। পরে তারা মালিক সেজে কারখানা ক্রয় করেন থাকেন। এভাবে তারা বাংলাদেশে বহু তৈরি পোষাক কারখানার মালিক হয়েছে।
অনেক ভারতীয় নাগরিক তথ্য প্রযুক্তির (আইটি) সেক্টরেও কাজ করে এবং তাদের একটি ভাল সংখ্যারই বৈধ ওয়ার্ক পারমিট নাই। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলি তাদের কাছে সুপরিচিত কারণগুলির জন্য অবৈধ বিদেশী নাগরিকদের অভিযোগের কারণে কখনোই তাদের বিচারের ব্যাপারে কোনও অভিযোগ করেনি। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েকটি অবৈধ বিদেশি নাগরিককে আটক রাখার কাজে নিয়োজিত ছিল, যাদের অধিকাংশই আফ্রিকান নাগরিক। কিন্তু কোন ভারতীকে আটক করেননি তারা। লাখ লাখ ভারতীয় অবৈধ নাররিক নিরাপদেই রয়েছে। তারা বৈধ-অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন।
বাংলাদেশ প্রতি বছর ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আয় করে থাকেন। কিন্তু এই রক্তে ঘামের টাকা সরকার ধরে রাখতে পারছে না। শুধু প্রতিবেশি ভারত নিয়ে যাচ্ছে ১০ বিলিয়ন ডলার। আসলে কি ধরনের দক্ষ লোক বাংলাদেশে কা করছে। আমরা কি পারি না দক্ষ লোক তৈরি করতে। তাহলেই রেমিট্যান্স ধরে রাখতে পারি। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স ধরে রাখার কোন উদ্যোগ নেই।
স্থানীয় পোশাক কারখানাগুলিতে কর্মরত ভারতীয়দের এবং শ্রীলংকানদেরকে বাদ দিয়ে স্থানীয় মানবসম্পদ উন্নযন কঠিন হবে? পোষাক রফতানিতে শীর্ষ অবস্থা ধরে রাখতে পারল্ওে দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নে কেন পিছিয়ে রয়েছে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বড় করে। এটি একটি জাতির জন্য লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
দেশের নীতিনির্ধারক বা পোশাক কারখানার মালিকরাও এ বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। এটা বোঝা যায় তৈরি পোষাক খাত তৈরি করতে পারলেও দক্ষ জন শক্তি তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। তার এখনও ভাড়াটিয়া শ্রমিকদের দিয়ে তাদের কারখানা চালাচ্ছেন। তৈরি পোষাক শিল্প এখন তিন দশকেরও বেশি বয়সী এখন পূর্ন যৌবন এখাতের। কিন্তু শিল্প অপারেটরদের জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন নয়। -খবর দ্যা হিন্দু