মিয়ানমারের নির্যাতন বর্বর ও কাপুরুষোচিত

unরোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকট ক্রমেই বাড়ছে। তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ অবস্থায় তাদের জন্য জরুরি আরও অর্থ সহায়তার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দাতা সংস্থাগুলোকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে অর্থ ছাড় করতে হবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর শেষে রোববার রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত প্রফেসর ইয়াংহি লি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার এখনও অত্যাচার-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু দেশটির সরকার অনুমতি দেয়নি।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গাদের জন্য তিনটি বিষয় জরুরি। এগুলো হল- প্রাথমিক শিক্ষা, জীবিকা নির্বাহের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফেরত পাঠানো।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১ সপ্তাহব্যাপী বাংলাদেশে সফরে আছেন। এ সময়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনসহ বাংলাদেশের সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধি, দাতা সংস্থা এবং এনজিওদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর স্বীকৃতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।
ইয়াংহি লি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে গঠিত জেআরপি থেকে মাত্র ২৬ শতাংশ তহবিল এসেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মনে রাখা উচিত, কক্সবাজারের স্থানীয়রা তাদের সীমিত সম্পদ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে শেয়ার করছেন। তাই দাতাদের দ্রুত অর্থ ছাড় দেয়া উচিত।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার শুরু থেকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে আসছে। এখনও সেটি অব্যাহত রেখেছে। এক্ষেত্রে তারা মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সব ধরনের আইন লঙ্ঘন করে আসছে।
জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তির পরও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে এসেছে এমন কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছি।
তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের গ্রামে ঢুকে তাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড গ্রহণ করতে বলে, অন্যথায় দেশ থেকে চলে যেতে হবে বলে জানায়। ইয়াংহি লি জানান একজন রোহিঙ্গা নারী তদের বলেছেন, ‘তার ১২ বছরের ছেলেকে মিয়ানমার বাহিনীর সদস্যরা কেটে টুকরো টুকরো করেছে।’
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তের জিরো পয়েন্টে চার হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। সেখানও গিয়েছিলেন ইয়াংহি লি। সেখানকার অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কয়েকটি বাচ্চা ছেলে ফুটবল খেলে ফিরছিল। তাদের মধ্যে একজন থেকে গিয়েছিল। মিয়ানমারের দিক থেকে একটি গুলি এসে তাকে আহত করে। আমি এ ধরনের কাপুরুষোচিত কাজের তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি বলেন, আমি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আগামী অক্টোবরে জাতিসংঘে জমা দেব। মিয়ানমারের পরিস্থিতিও দেখতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মিয়ানমার সরকার অনুমতি দেয়নি।
ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতেও তিনি ভারত যেতে চেয়েছিলেন। ভারত কোনো সাড়া দেয়নি। ইয়াংহি লি বলেন, ভারত সরকার আমাকে হ্যাঁ বা না কিছুই বলেনি। জাতিসংঘ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির বিষয়ে ইয়াংহি লি বলেন, আমি জাতিসংঘের কাছে চুক্তির একটি কপি চেয়েছিলাম। জাতিসংঘের কেউ আমাকে কপি দেয়নি।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসান চরে আবাসস্থল নির্মাণ করেছে। তিনি সেখানে যাওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করলেও বর্ষার কারণে সরকার সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রা আন্তর্জাতিক মান অনুসারে হওয়া উচিত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরেও আইন লঙ্ঘন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। জাতিসংঘের এ বিশেষ দূত বলেন, আগামীতে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করার জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই।
মিয়ানমারের ওপর চাপ দিতে চীনকে অনুরোধ করা হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে লি বলেন, মিয়ানমার একটি স্বাধীন দেশ। তারা চীনের কথায় চলে না। তবে বিশ্ব নেতৃত্ব দেশ হিসেবে চাইলে চীন ভূমিকা রাখতে পারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button