জন্মদিনে ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত কবি আল মাহমুদ

almahmudসমকালীন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের ৮৩তম জন্মদিন বন্ধু স্বজন শুভানুধ্যায়ী ও বাংলা কবিতার অনুরাগীদের ফুলেল ভালোবাসার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে। বুধবার সকাল থেকেই কবির ভক্ত, অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ীরা কবির মগবাজারের বাসভবনে ভিড় জমান। ফুল, কেক ও জন্মদিনের উপহারসামগ্রী নিয়ে তারা হাজির হন সেখানে।
আল মাহমুদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কেক কেটে মূল আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠান হয়। ঘরোয়া পরিবেশে এ আয়োজনে ভক্তদের কাছে পেয়ে এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দেশের প্রবীণ এ কবি।
উপস্থিত থেকে কবিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কবি শাহীন রেজা, কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ, কবি সোলায়মান আহসান, কবি ফেরদৌস সালাম, কবি জাকির আবু জাফর, কবি ফরিদ উদ্দীন ভূইয়া, কবি ড. ফজলুল হক তুহিন, রেডিও টুডের হেড অব প্রোগ্রাম আরজে টুটুল, সাংস্কৃতিক সংগঠক জাকীউল হক যাকি, কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির চেয়ারম্যান শরীফ বায়জীদ মাহমুদ, বিসিএ সাধারন সম্পাদক আবেদুর রহমান, প্রচার সম্পাদক গল্পকার ইব্রাহিম বাহারী, কবি তৌফিক তপু, সাকিরা পারভীন সোমা, নূরুল আবছার, আলাউদ্দিন আদর, শিল্পী লিটন চৌধুরী, মোস্তফা কামাল মাহদি, মেহরাজ মিঠু প্রমুখ।
কবিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য আল মাহমুদ আজ অপরিহার্য বলে গণ্য হচ্ছেন। কেননা এ দেশ, দেশের মানুষ, প্রকৃতি, গৌরবের ইতিহাস সবই তার কালজয়ী রচনা ঠাঁয় পেয়েছে। তার শ্রম সাধনা, কবিতার প্রতি ভালোবাসা তাকে আজ এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। তিনিও নিজেকে ইতিহাসের সমান্তরালে নিজেকে নিয়ে আসতে পেরেছেন সার্থকভাবে। কবিতা তাকে খ্যাতি যশ এনে দিয়েছে। তিনি কবিতাকে দিয়েছেন তার অহঙ্কারে অলঙ্কারাবদ্ধ আবেগতাড়িত হৃদয়।
কবি জাকির আবু জাফর বলেন, অসংখ্য কালজয়ী কবিতার জনক কবি আল মাহমুদ। কবিতার জন্য গোটা জীবন তিনি কাটিয়েছেন। বলা যায়, কবিতা দিয়েই সাজিয়েছেন তিনি নিজের জীবনকে। কবিতাকে তিনি জীবনের একটি অপরিহার্যতা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়েই তিনি আনন্দ, প্রেম, ভালোবাসা, খ্যাতি, সবই পেয়েছেন। এর মধ্যেই তিনি স্বস্তি খুঁজেছেন। সুখ পেয়েছেন। সুখের সন্ধানে এ কবিতার জন্য তাকে দুঃখকে সঙ্গী করতে হয়েছে।
ড. ফজলুল হক তুহিন বলেন, তিন দশক ধরে তুমুল আলোচিত কবি আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতার শহরমুখী প্রবণতার মধ্যেই ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ আবহ, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের জীবনপ্রবাহ এবং নর-নারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহকে পরম আন্তরিকতার সাথে তুলে এনেছেন তার কবিতায়। বাংলা কবিতায় লোকজ ও গ্রামীণ শব্দের বুননশিল্পী কবি আল মাহমুদ নির্মাণ করেছেন এক মহিমান্বিত ঐশ্বর্য্যরে মিনার।
কবি সোলায়মান আহসান বলেন, আল মাহমুদ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন চলাকালে ভাষার ওপর কবিতা লিখে গ্রেফতারির মুখে পড়েন বলে তাকে এলাকা ছাড়তে হয়েছিল। সেই আল মাহমুদই আবার মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন সক্রিয়ভাবে। লেখায় লোকজ শব্দের ব্যবহারে অতুলনীয় হয়ে উঠেছে তার সৃষ্টিকর্ম। গণকণ্ঠ পত্রিকা সম্পাদনা করতে গিয়ে তিনি এক বছর কারাভোগ করেন।
সকাল থেকে রাত অবধি চলে সোনালী কাবিনের শুভেচ্ছা জানানোর পালা। এ সময় তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের প্রতিনিধিদের এক উৎসবময় পরিবেশের সৃষ্টি করে।
দিনব্যাপী কবিকে শুভেচ্ছা জানানো সংগঠনের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র, বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমি, নবধারা, ফুলকুঁড়ি আসর, সাহিত্য পত্রিকা নতুনমাত্রা, সময়ের জানালা, বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ, দৈনিক যুগান্তর, রেডিও টুডে, সারেগামা অ্যাকাডেমি, চন্দ্রকথাসহ শতাধিক সংগঠন। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে কবির সুস্বাস্থ ও দীর্ঘায়ূ কামনা করে দোআ মুনাজাতের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button