আয়ারল্যান্ডের সিনেটে ইসরাইলী দখলদারিত্ব বিরোধী বিল অনুমোদন
বিশ্বজুড়ে দখলকৃত এলাকায় উৎপাদিত পণ্য ও সেবা আমদানি-রফতানি নিষিদ্ধ করে নতুন একটি খসড়া আইনের অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপের দেশ আয়ারল্যান্ডের সিনেট। খসড়া আইনটি অনুমোদন পেলে আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ বিবেচিত ইসলায়েলের দখলকৃত এলাকায় উৎপাদিত পণ্য ও সেবা আমদানি-রফতানিও নিষিদ্ধ হবে। সংসদের উচ্চকক্ষের অনুমোদন পেলেও আয়ারল্যান্ডের সংবিধান অনুযায়ী নিম্ন কক্ষে বিতর্ক ও ভোটাভুটিসহ আরও কয়েকটি ধাপ পার হতে হবে আইনটিকে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে বুধবার সরকারি দলের সমর্থন ছাড়াই এক স্বাধীন সিনেটরের প্রস্তাবিত আইনটি ২৫-২০ ভোটে অনুমোদন পায়। আয়ারল্যান্ডের সিনেটে এই আইন অনুমোদনকে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেছে ফিলিস্তিনী স্বাধীনতা সংস্থা। আর এতে অনেক ফিলিস্তিনী নাগরিকের জীবিকা ক্ষতির মুখে পড়বে বলে দাবি করেছে ইসরাইল।
১৯৪৮ সালের ১৫ মে ফিলিস্তিনী ভূমি দখল করে গঠিত হয় ইসরাইল নামের রাষ্ট্র। কয়েক দফা যুদ্ধের পর পশ্চিম তীরের বিভিন্ন ফিলিস্তিনী ভূমিতে সেই দখলদারিত্ব জোরালো করে চলেছে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক আইন ওই দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি না দিলেও তা থেকে সরে আসেনি তারা। দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে ১৫০ ইসরাইলী অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। পশ্চিম তীরে রয়েছে প্রায় সাড়ে সাত লাখ অবৈধ দখলদার ইসরাইলী নাগরিক। এবার এসব দখলদারিত্বের সঙ্গে বাণিজ্যবিরোধী আইনের উদ্যোগ নিয়েছে আয়ারল্যান্ডের সংসদের উচ্চ কক্ষ।
চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি সিনেটে ‘অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম (দখলকৃত এলাকায়) বিল ২০১৮’ প্রস্তাব করেন আয়ারল্যান্ডের স্বাধীন সিনেটর ফ্রান্সিস ব্লাক। এতে তার সঙ্গে স্বাক্ষর করেন সিনেটর অ্যালিস-ম্যারি হিজিনস, লিন রুয়অনে, ক্লোত্তে ক্লেহার, জন জি দোলান, গ্রেস ও’সুলিভান এবং ডেভিড নরিসন। এতে সমর্থন দেয় দেশটির সবগুলো বড় রাজনৈতিক দল। তবে ক্ষমতাসীন ফাইন গায়েল পার্টি এতে সমর্থন দেয়নি। তবুও বুধবারের ভোটাভুটিতে ২৫-২০ ভোটে সিনেটের অনুমোদন পেয়েছে প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি।
সংবিধান অনুযায়ী এই আইনটি এখন সংসদের নিম্ন কক্ষে যাবে। সেখানে বিতর্কের পর প্রয়োজন পড়লে ভোটাভুটি হবে। নিম্ন কক্ষের অনুমোদন পাওয়ার পর আরও কয়েকটি ধাপে পর্যালোচনা ও সংশোধনের পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর আইনে পরিণত হবে।
ফিলিস্তিনী স্বাধীনতা সংস্থা’র (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) সিনিয়র নেতা সায়েব এরেকাত আয়ারল্যান্ডের সিনেটে এই আইন অনুমোদনকে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেছেন। অন্য দেশগুলোকেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সায়েব এরেকাত বলেন, ‘আজ আয়ারল্যান্ডের সিনেট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়েনের বাকি দেশগুলোর প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে: বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ ছাড়া নিছক দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কথা বলা যথেষ্ট নয়।’
তিনি বলেন, ‘যারা ইসরাইলী দখলদারিত্বের সঙ্গে বাণিজ্য করছে তারা পদ্ধতিগতভাবে ফিলিস্তিনীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে অস্বীকার করে আসছে।’
ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এমানুয়েল নাহসন বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় এই ভোটাভুটি নেতিবাচক প্রভাব’ ফেলতে পারে। তিনি বলেন, ‘আয়ারল্যান্ড সিনেটের এই উদ্যোগের অযৌক্তিক দিক হলো এতে করে অনেক ফিলিস্তিনী নাগরিকের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব ফিলিস্তিনীরা ইসরাইলী শিল্প এলাকায় কাজ করে থাকে। এই বয়কটের কারনে ওই শিল্প এলাকা আক্রান্ত হবে।’ তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় ওই আইনের অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইসরাইল তার প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করবে।
সিনেটে আইন অনুমোদনের পর আয়ারল্যান্ডের সরকার এক বিবৃতিতে বলেছেন ইউরোপীয় (ইইউ) সদস্য দেশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নজিরবিহীন। বিবৃতিতে বলা হয় এই পদক্ষেপ কাজ করবে না কারন এতে ইইউ’র একক বাজারে একটি বাণিজ্য বাধা আরোপ করবে আর এতে ওই অঞ্চলে আয়ারল্যান্ডের প্রভাব ক্ষতিগ্রস্ত হবে।