তুরস্কের ওপর অবরোধ আরোপের হুমকি
ব্রানসনের বিনিময়ে গুলেন
তুরস্কে আটক এক মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়া না হলে দেশটির ওপর অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স অবরোধের হুমকি দিয়ে অ্যান্ড্রু ক্রেইগ ব্রানসন নামের ওই নাগরিককে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে এই হুমকির কড়া জবাব দিয়েছে তুরস্ক। এর আগে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে ব্রানসনের মুক্তির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক। ওই চুক্তি অনুযায়ী গত সপ্তাহে তার মুক্তির আশা করেছিল ওয়াশিংটন।
প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলে আসছেন ব্রানসনকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ফেতুল্লাহ গুলেনকে ফেরত চায় তুরস্ক। ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য গুলেনকে দায়ী করে থাকে তুরস্ক সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভানিয়ায় বসবাসরত গুলেন ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তাকে গ্রেফতার করে ফিরিয়ে দিতে তুরস্কের অনুরোধ মানেনি যুক্তরাষ্ট্র।
ব্রানসনের ঘটনা সম্পর্কে জানা একটি মার্কিন সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ব্রানসনের মুক্তির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। গত সপ্তাহে তার বিচার চলার সময়েই তার মুক্তির আশা করেছিল ওয়াশিংটন।
অপর এক খবরে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে তুরস্কে একজন মার্কিন ধর্মযাজককে আটকের ঘটনায় ওয়াশিংটন-আঙ্কারা সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দু’দেশের কর্মকর্তারা পরস্পরের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করছেন।
বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী মেভলুত চাভুসওগ্লু এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, “তুরস্ক কারো কথায় চলে না। আমরা কখনো কারো হুমকি সহ্য করি না।” তিনি আরো লিখেছেন, “আইনের শাসন সবার জন্য সমান। এখানে কোনো ব্যতিক্রম নেই।”
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটার বার্তায় লিখেছিলেন, ধর্মযাজক অ্যান্ড্রিউ ব্রানসনকে দীর্ঘদিন ধরে আটক রাখার পরিণতিতে তুরস্কের ওপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে আমেরিকা। তিনি তুরস্কে আটক মার্কিন খ্রিস্টান ধর্মযাজকের প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন।
তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষিত দু’টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করার দায়ে তুরস্কের আদালতে ৫০ বছর বয়সি মার্কিন যাজকের বিচার চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ৩৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড দেয়া হতে পারে। ওই দুই কথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর একটি হচ্ছে আমেরিকা প্রবাসী বিরোধী নেতা ফতুল্লাহ গুলেনের রাজনৈতিক দল। ২০১৬ সালের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে গুলেনের হাত ছিল বলে অভিযোগ করছে তুর্কি সরকার। গুলেন অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মার্কিন যাজকের বিরুদ্ধে অপর যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি হচ্ছে, কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী পিকেকে। গত কয়েক দশক ধরে কুর্দিদের জন্য আলাদা আবাসভূমির দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলন করে যাচ্ছে এই গোষ্ঠী। তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলীয় ইজমির শহরে একটি প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জা পরিচালনা করতেন মার্কিন যাজক ব্রানসন। সম্প্রতি তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দি করার হলেও ওয়াশিংটন এ পদক্ষেপকে যথেষ্ট মনে করছে না। ২০১৬ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার পর সন্ত্রাসবাদ ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তুরস্কে আটক হন ৫০ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক অ্যান্ড্রু ক্রেইগ ব্রানসন। ২৩ বছর ধরে তুরস্কে বসবাস করা ব্রানসন ইজমির শহরের একটি চার্চে যাজক হিসেবে কাজ করতেন। তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফেতুল্লাহ গুলেনকে ফেরত পেতে চাওয়ার কথা বলে আসছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, বুধবার ‘স্বাস্থ্যগত কারণে’ ব্রানসনকে মুক্তি দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। বুধবার উপকূলীয় শহর ইজমিরের কারাগার থেকে ব্রানসনকে বের করে একটি গাড়িবহরে করে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আইনজীবী বলেছেন, ব্রানসনকে একটি ইলেকট্রনিক পর্যবেক্ষণ ব্রেসলেট পরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।