রাজশাহী ও বরিশালে নৌকা বিজয়ী
রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নগরপিতার আসনে বসতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক ফলে ৮৭ হাজার ৯০২ ভোটের ব্যবধানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে হারিয়ে রাজশাহীর নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৯৪ ভোট ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বুলবুল পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৪৯২ ভোট। বরিশালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ১ লাখ ৭ হাজার ৩৫৩ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হচ্ছেন। তার নিকটতম বিএনপি প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ার পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৩৫ ভোট।
নির্বাচনে জয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, মানুষ ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালনে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এ তিনটিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে হারিয়ে বিএনপির প্রার্থীরা মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তিন সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত তিন সিটি নির্বাচনে কমবেশি কারচুপি, কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট, ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া, প্রার্থীকে মারধর, সহিংসতাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছে বিএনপিসহ অন্য দলের প্রার্থী ও সংশ্লিষ্টরা। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেও পক্ষপাতের অভিযোগ আনেন। ভোটে অনিয়মের অভিযোগে বরিশাল সিটির ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে একটিতে ভোট গ্রহণ বন্ধ এবং ১৫টি ভোট কেন্দ্রের ফল স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সহিংসতা ও অনিয়মের ঘটনায় সিলেটের দুটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। তবে রাজশাহীর কোনো ভোট কেন্দ্র স্থগিত হয়নি। এ সিটিতে ভোট দেয়ার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ভোটাররা।
এদিকে তিন সিটিতে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি বলেছে, আওয়ামী লীগ ভোট কারচুপি, ভোট জালিয়াতি ও ভোট সন্ত্রাস করেছে। অপরদিকে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে দাবি করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, এ নির্বাচন বিতর্কিত করতে চেষ্টা করেছে বিএনপি। এছাড়া তিন সিটি নির্বাচনই বর্জন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তিনটিতেই প্রার্থী ছিল দলটির। পাশাপাশি কয়েকটি রাজনৈতিক দলও নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
ভোট গ্রহণ শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, সব মিলিয়ে নির্বাচন ভালো হয়েছে। অনিয়মের কারণে বরিশালের ১৫টি কেন্দ্রের ফল স্থগিত ও একটি কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে।
তিন সিটি ভোটে আপনি সন্তুষ্ট কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘হ্যাঁ, আই এম স্যাটিসফাইড। অনেক প্রার্থী পুনরায় ভোট আয়োজনের আবেদন করেছেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে আবেদন করেছেন বলে গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি। সেখানে পুনরায় ভোট গ্রহণের মতো অবস্থা আমরা পাইনি।’
এদিকে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি প্রায় সব প্রার্থী অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। তাদের বড় অংশই এ নির্বাচন বর্জন করে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাদে বাকি পাঁচ মেয়র প্রার্থীই নির্বাচন বর্জন করে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন। এ সিটি কর্পোরেশনে বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তীকে মারধরও করা হয়। অপরদিকে সিলেটেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাদে চারজন মেয়র প্রার্থী ভোট ও ফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। এ সিটি কর্পোরেশনে সহিংসার ঘটনা ঘটে। আরেক প্রার্থী মো. এহছানুল হক তাহের (স্বতন্ত্র) নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো মন্তব্য করেননি। অনিয়ম ও জাল ভোটের ঘটনায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৩৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে দুটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। অপরদিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া, জাল ভোট ও কারচুপির অভিযোগ করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। ৩০নং ওয়ার্ডের বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে মাটিতে বসে ও বৃষ্টিতে ভিজে প্রায় ৪ ঘণ্টা অবস্থান করে প্রতিবাদ জানান তিনি। নির্বাচনের অনিয়মের প্রতিবাদ হিসেবে নিজের ভোটও দেননি বুলবুল। নির্বাচনের ফল আগাম প্রত্যাখ্যানও করেন বিএনপির এ প্রার্থী।