অর্থনৈতিক যুদ্ধের কবলে তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনার ধারাবাহিকতায় অর্থনৈতিক যুদ্ধের কবলে পড়েছে তুরস্ক। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে দেশের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেওয়ার পর মার্কিন ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্রা লিরার বিনিময় মূল্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ডলারের বিপরীতে সর্বোচ্চ এই দরপতনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রয়োজন অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নগদ অর্থ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। তবে এতেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আজ সোমবার (১৩ আগস্ট) বাণিজ্যের প্রথম ভাগে লিরার প্রায় ৯ শতাংশ দরপতন হয়। ডলারের বিপরীতে লিরার বিনিময় মূল্য দাঁড়ায় ৭.২৪-এ। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণার পর লিরার মূল্যমান সামান্য বেড়ে ৬.৮-এ দাঁড়িয়েছে। অবশ্য, এতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। কারণ, বিনিময় মূল্য ৬.৮ হওয়ার পরও ডলারের বিপরীতে লিরার মান অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।
গত বছর ডলারের বিপরীতে লিরার মূল্যমান ৪০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছিল। শুক্রবার (১০ আগস্ট) ডলারের বিপরীতে লিরার মূল্যমানের আরও ২০ শতাংশ পতন হয়। শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুর্কি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আমদানি শুল্কের পরিমাণ দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিলে লিরার দরপতন হতে শুরু করে। মার্কিন পাদ্রি অ্যান্ড্রু ব্রানসনকে আটকের ঘটনায় তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ব্রানসনকে মুক্তি না দিলে তুরস্কের ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। শনিবার (১১ আগস্ট) এক সমাবেশে জনগণকে তাদের কাছে গচ্ছিত ডলার ও ইউরো ভাঙিয়ে তুর্কি মুদ্রা লিরা গ্রহণের আহ্বান জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়্যিব এরদোয়ান। মার্কিন ডলারের বদলে নিজস্ব মুদ্রা লিরা’র মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘোষণা দেন তিনি। তবে এখনও উদ্বেগজনকভাবে ডলারের বিপরীতে লিরার দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার (১৩ আগস্ট) প্রথমভাগের বাণিজ্যে তুরস্কের মুদ্রার প্রায় ৯ শতাংশ দরপতন হয়। আর ইউরোর মূল্য মান এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কমে দাঁড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা তুরস্কের এ অর্থনৈতিক সংকট ইউরোপীয় বাজারেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সোমবার (১৩ আগস্ট) এশিয়ান স্টক মার্কেটেও ধস নেমেছে। জাপানে নিক্কের দরপতন হয়েছে ১.৭ শতাংশ, হংকং-এ ১.৮ শতাংশ, সাংহাইতে ১.৭ শতাংশ, সিডনিতে ০.৫ শতাংশ ও তাওয়ানিজ শেয়ার বাজারের দরপতন হয়েছে ৩ শতাংশ। সোমবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতন হয়েছে ০.৩ শতাংশ।
ইউরোপে দিনের প্রথম ভাগের বাণিজ্যে লন্ডনের ১০০-শেয়ার সূচক ০.৫ শতাংশ কমেছে। জার্মান ও ফরাসি শেয়ার বাজারেও একইরকমের দরপতন হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কজনিত উত্তেজনার মধ্যে তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা থেকেই লিরার দরপতন হচ্ছে। তুরস্কের স্টক মার্কেটের ১৭ শতাংশ পতন হয়েছে। সরকারের ঋণবাবদ খরচের পরিমাণ বেড়ে এক বছরে ১৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
লিরার দরপতন হওয়ায় উদ্বেগে রয়েছে তুর্কি কোম্পানিগুলো। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা নির্মাণ কাজ থেকে লাভ করার আশায় যেসব তুর্কি কোম্পানি বিপুল পরিমাণ ঋণগ্রহণ করেছে তাদেরকে ডলার ও ইউরোতে মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে।
অন্যদিকে তুরস্কে আটক মার্কিন ধর্মযাজক এ্যান্ড্রো ব্রানসনকে মুক্তি দিতে তুর্কি সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী বুধবারের ভিতরে তাকে মুক্তি দেয়ার সময়সীমা বেধে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান।
সোমবার দেশটির উত্তরাঞ্চল তরাবজোনে একে পার্টির এক সমাবেশে এরদোগান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনা হয়েছে গত সপ্তাহে। তিনি জানান, ব্রানসনকে মুক্তি না দিলে আরও অবরোধ আরোপ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ধর্মযাজকের ঘটনা নিয়ে ন্যাটোভুক্ত দেশ তুরস্কের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সর্ম্পকে উত্তেজনা তৈরী হয়েছে। এ কারণে তুরস্কের ওপর অবরোধ আরোপসহ দেশটির দুইমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।