অধ্যাপক গোলাম আযমের ৯০ বছর কারাদণ্ড
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫টি অভিযোগই প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল দোষী সাব্যস্ত করেন। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, তবে বয়স বিবেচনায় কারাদ- দেয়া হয়। অভিযোগগুলো হলো- ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উস্কানি, সংশ্লিষ্টতা এবং হত্যা ও নির্যাতন।
সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫টি অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ৯০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
তবে এসব অপরাধের পক্ষে প্রত্যক্ষ কোনো সাক্ষী সরকারপক্ষ হাজির করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন আাসমিপক্ষের আইনজীবীরা। তারা বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন, শোনা কথার উপর ভিত্তি করে বিচার হচ্ছে। এটি যুদ্ধাপরাধ মামলার পঞ্চম এবং ট্রাইব্যুনাল-১ এর দ্বিতীয় রায়।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায় পড়া শুরু হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় ২৪৩ পৃষ্ঠার। রায়ের প্রথম অংশ পড়ে শোনান বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে গোলাম আযমকে কাঠগড়ায় নেয়া হয়। এর ৫ মিনিট পর বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর অন্য ২ বিচারপতি এজলাসে আসেন।
ট্রাইব্যুনালে ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমানসহ সরকার পক্ষের আইনজীবী এবং অপরদিকে আসামিপক্ষের কয়েকজন জুনিয়র আইনজীবী এবং অধ্যাপক গোলাম আযমের বড় ছেলে আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আযমিসহ আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
রায় পড়ার শুরুতেই সূচনা বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান এ টি এম ফজলে কবীর।
সকাল ১০টা ৫ মিনিটে গোলাম আযমকে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যাওয়া হয়।
রবিবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৭ এপ্রিল মামলাটির কার্যক্রম শেষ করে রায়ের জন্য সিএভিতে (অপেক্ষমান) রেখে দেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার কার্যক্রম শেষ হওয়ার প্রায় ৩ মাস পর এ রায় ঘোষণা করা হলো।
এটি যুদ্ধাপরাধ মামলার পঞ্চম এবং ট্রাইব্যুনাল-১ এর দ্বিতীয় রায়। এ ছাড়া জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদের রায়ও ট্রাইব্যুনাল-২ এ অপেক্ষমান আছে।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য (রুকন) পলাতক আবুল কালাম আযাদের মৃত্যুদ-ের ওই রায় দিতে ট্রাইব্যুনালের সময় লাগে ২৬ দিন। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছিল।
দ্বিতীয় রায়ও আসে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল থেকে। ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন ট্রাইব্যুনাল। ১৭ জানুয়ারি কার্যক্রম শেষ হওয়া ওই মামলার রায় হয় ১৮ দিন পর।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তৃতীয় রায় ও ট্রাইব্যুনাল-১-এর প্রথম রায় আসে ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হয়। এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছিল ঠিক এক মাস আগে, ২৯ জানুয়ারি। সর্বশেষ রায় আসে ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে, যাতে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। ১৬ এপ্রিল এই মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। ২৩ দিন পর ৯ মে রায় ঘোষণা করা হয়।