‘চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটে আইনিশূন্যতা সৃষ্টি হবে’

ব্রিটেন কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে গেলে হয়তো নতুন আইন পাস করতে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও তার সরকারকে সময়ের প্রতিকূলে দৌড়াতে হবে অথবা দেশটিতে একটি ‘অস্থিতিশীল আইনিশূন্যতা’ সৃষ্টি হবে। ব্রিটেনের ছায়া ব্রেক্সিটমন্ত্রী কেইর স্ট্যারমার এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের আইন সংবিধানে থাকবে, কর্মীরাও জায়গামতো থাকবে, দলগুলো তাদের পোস্টে থাকবে আর আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্রেক্সিটের জন্য প্রস্তুত তা চুক্তিসহ হোক অথবা চুক্তি ছাড়া। তবে লেবার পার্টির এই বিশ্লেষক পরামর্শ দেন, চারটি নীতিকে কেন্দ্র করে নতুন একটি আইন অবিলম্বে পাস করা দরকার। নীতিগুলো হচ্ছে- ১. ইইউর নাগরিক অধিকার, ২. ব্রিটেনে প্রবেশ করতে ইইউর পর্যটকদের অভিবাসন আইন, ৩. ইউরোপের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া অপরাধীদের অবস্থা এবং ৪. আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত।

থেরেসা মের সরকার দীর্ঘ দিন ধরে অভিবাসন বিলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত সে ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর আগে অভ্যন্তরীণ বিষয়ক কমিটি সতর্ক করে বলেছিল, যদি অভিবাসন পদ্ধতিতে কোনো চুক্তি না থাকে তাহলে তা পুরোপুরি একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্ম দেবে। কারণ শেষ মিনিট পর্যন্ত তারা এ ব্যাপারে কোনো কিছুই জানতে পারবে না। ফলে এ ক্ষেত্রে তারা কোনো পরিকল্পনাও নিতে পারবে না।

এদিকে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের বিষয়ে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকার। গত সপ্তাহে দেশটির ব্রেক্সিট-বিষয়ক মন্ত্রী ডোমিনিক রাব এক বক্তৃতায় চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের সম্ভাব্য সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। সরকার ওই সব সমস্যা মোকাবেলায় সম্ভাব্য প্রস্তুতির বিষয়ে ২৫টি দিক নির্দেশনামূলক দলিল প্রকাশ করে। ডোমিনিক রাব বলেন, ব্রেক্সিটের উভয় প চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে স্বল্প মেয়াদে যে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, সেসব বিষয়ে প্রস্তুতি রাখার জন্য সরকার এসব নির্দেশিকা প্রকাশ করছে।

এছাড়া ব্রেক্সিটের সময় যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখতে অন্তত ছয় সপ্তাহের জোগান মজুদ রাখার জন্য কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।

তবে স্ট্যারমার সরকারের এসব ব্যবস্থাকে ‘দুর্বল প্রত্যাগমন’ বলে সমালোচনা করে বলেন, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটে যে সব প্রস্তুতি দরকার সে ব্যাপারে সরকার এখনো অনেক পিছিয়ে। এর ফলে এখানে অস্থিতিশীল আইনিশূন্যতা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ব্রেক্সিট চুক্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান বেশির ভাগ আইন ও সংস্থা দুই বছরের পরিবর্তিত অবস্থায় আগের মতোই থাকবে। ব্রিটিশ সরকার এক্ষেত্রে ইইউর সাথে ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিক সম্পর্কের ব্যাপারে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে যদি আলোচনা ভেঙে যায় অথবা পার্লামেন্ট সদস্যরা চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে কী হবে সে ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়। আর্টিকেল ৫০-এর মাধ্যমে মার্চের যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, তার মাধ্যমে এমন একটি সম্ভাবনা রয়েছে, ব্রিটেন কোনো সমঝোতা ছাড়াই ইইউ ত্যাগ করতে পারবে।

সরকারি থিংকট্যাংকদের একজন জো ওয়েন বলেন, পার্লামেন্ট জরুরি অবস্থায় দ্রুত আইনটি পাস করতে পারে, তবে এমপিরা সে ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। গত সপ্তাহে চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ড এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, যদি কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট হয় তাহলে ৮০০০ কোটি পাউন্ড ক্ষতির মুখে পড়বে দেশটি।

বিশ্লেষকেরা বলেন, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট হলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে যুক্তরাজ্যের কৃষি খাত। ইইউর সাথে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের কৃষিপণ্যের আদান-প্রদান হয়ে থাকে। এতদিন ইইউর অনুমোদিত কর্তৃপ এসব পণ্যের মান নির্ধারণ করত। ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যকে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে আলাদা কর্তৃপ গঠন করতে হবে, যাকে আবার ইইউর স্বীকৃতি পেতে হবে। অন্যথায় ব্রিটিশ পণ্য ইইউর দেশগুলোয় বিক্রি অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। কারণ সদস্য দেশগুলোকে পাঠানো ইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনকে সদস্যবহির্ভূত দেশ হিসেবে (থার্ড কান্ট্রি) বিবেচনা করতে আইনগতভাবে বাধ্য ইইউ। ফলে ব্রিটেনের জন্য ইইউ আইনের কোনো শিথিলতা প্রদান আইনি কারণেই সম্ভব হবে না।

২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কথা। ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ও অন্যান্য সম্পর্ক নিয়ে চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হলে ইইউ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে পণ্য ও সেবার স্বাভাবিক আদান-প্রদান ব্যাহত হবে। এক্ষেত্রে ইইউভুক্ত দেশের সাথে বাণিজ্যে পণ্যের ঘোষণা (কাস্টমস ডিকারেশন) দিতে হবে, সম্ভাব্য আমদানি বা রফতানি শুল্ক (ট্যারিফ) দিতে হতে পারে। এসব কাজ সম্পাদনে প্রতিষ্ঠানগুলোয় নতুন প্রযুক্তির প্রয়োজন পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়তি বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়বে। ফলে স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্য খরচ বাড়বে। তবে ইইউ-বহির্ভূত দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য বাড়ানোর মাধ্যমে ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে ধারণা করছে ব্রিটিশ সরকার।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button