পড়াশোনা, চাকরি দুটোই যখন একসঙ্গে

পড়াশোনা ও চাকরি দুটি সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া নয়, বরং দুই ক্ষেত্র আলাদা রাখাই ভালো। অনেকেই আছেন যাঁরা ক্লাসরুমের সঙ্গে অফিসের ডেস্কেও উপস্থিত থাকেন। আর একই সঙ্গে গুছিয়ে নিতে হয় শিক্ষকের লেকচার ও বসের আদেশ। বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজজীবন থেকেই এমন অনেকে আছেন, যাঁরা পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করেন। দুটো ভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েই তো সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়া।
আবার কখনো এর উল্টোটাও হতে পারে। কাজের চাপ কিংবা বিরক্তিতে একটা সময় মনে হয়, ‘দূর! ছেড়েই দিই।’ কিন্তু তাই বলে সেটাও তো হয়ে ওঠে না। আর এ কারণেই ব্যস্ত জীবনে গুছিয়ে নিতে পারেন কিছু বিষয়।
গুছিয়ে নিতে পারেন কিছু বিষয়
এ বিষয়ে কথা হয় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যেকোনো কাজ দীর্ঘদিন করতে থাকলে আমাদের মধ্যে একঘেয়েমি চলে আসে। এমনকি আপনার শখের ক্ষেত্রেও তাই। আর পড়াশোনা ও চাকরি দুটো একেবারেই ভিন্ন ক্ষেত্র। তাই কাজের চাপ চলে আসাটাই স্বাভাবিক।’ বিশেষ করে পরীক্ষার সময়গুলোতে। এমন নয় যে পরীক্ষা বলেই আপনি কর্মস্থল থেকে অনায়াসেই ছুটি পাচ্ছেন। এদিকে পরীক্ষায় একেবারে খারাপ করলেও চলে না।
আবার কখনো কখনো সুযোগ চলে আসে একই সময়ে। হয়তো আপনার এ বছরই ক্লাসরুমের জীবন শেষ। আবার এর মধ্যেই চাকরির সুযোগ এল। তখন তো দুটোই চালিয়ে নিতে হয়! আর তাই মাঝেমধ্যে বিরক্তি চলে আসাটাই যে স্বাভাবিক। তাই এত শত ব্যস্ততার মাঝেও চেষ্টা করুন কিছু বিষয় গুছিয়ে নেওয়ার।
দুটো ক্ষেত্র আলাদা রাখুন
সব সময় চেষ্টা করুন আপনার অফিস ডেস্ক এবং ক্যাম্পাস-জীবন আলাদা রাখতে। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনটাও। আপনি যদি ক্যাম্পাসের কাজ অফিসেও নিয়ে আসেন, তাহলে তালগোল পাকিয়ে ফেলবেন আপনি নিজেই। তাই যত কাজই থাকুক, চেষ্টা করুন একটির সঙ্গে আরেকটি না মেলাতে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী
প্রতিদিন সকালে উঠেই একটি পরিকল্পনা করে ফেলুন। আজকে হয়তো অফিসের কাজ বেশি, তাই পড়াশোনার জন্য বরাদ্দ সময়টা একটু কমিয়ে নিলেন। আবার পরীক্ষার আগে অফিসে জানিয়ে রাখতে পারেন। পরীক্ষায় ছুটি থাকলে সেই সময়ে অফিসের কাজটা এগিয়ে রাখলেন।
সহকর্মী ও সহপাঠী উভয়ের সঙ্গেই
ভালো সম্পর্ক
পাশের ডেস্কের সহকর্মীটির সঙ্গে যেমন ভালো সম্পর্ক রাখা চাই, তেমনি সহপাঠীর সঙ্গেও। আপনি হয়তো বেশ কিছুদিন ক্লাসেই যেতে পারলেন না, তখন কিন্তু লেকচারটা জোগাড় করার সহজ মাধ্যম হলো এই সহপাঠী। একইভাবে অফিসের সময় পরিবর্তন করতে চাইলে সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে নিন। তাই উভয় পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ বজায় চলুন।
নিজেকে সময় দিন
যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, নিজের জন্য অন্তত কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখুন। হয়তো সেটা খুবই কম, তারপরও উপভোগ করার চেষ্টা করুন। সেটা হতে পারে অবসরে গান শোনা, গিটার বাজানো কিংবা পোষা প্রাণীটিকে সময় দেওয়া। কিংবা ভোরে উঠেই ইয়োগা সেরে পছন্দের পোশাকটা নামিয়ে রাখলেন। এভাবেই কিছুটা সময় নিজেকে দিন। এতে একঘেয়েমি কেটে যাবে।
কোনো সমস্যাই দীর্ঘস্থায়ী নয়
পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট আবার ওদিকে বসের আদেশ। কোনটা রেখে কোনটা করবেন! যত চাপই হোক, চেষ্টা করুন ঠান্ডা মাথায় গুছিয়ে নিতে। অন্তত এই সময়টুকুর জন্য। কেননা কোনো সমস্যাই দীর্ঘস্থায়ী নয়। আপনার পরীক্ষা না হয় দুই সপ্তাহ চলবে, তারপর তো কিছুটা সময় স্বস্তি! তাই ধীরেসুস্থে কাজগুলো করে ফেলুন।
অতিরিক্ত ভীত না হওয়া
অনেকেই আছেন এমন পরিস্থিতিতে খুব হাঁপিয়ে ওঠেন। কোনো কিছুকে অতিরিক্ত ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে ধীরেসুস্থে করে ফেলার চেষ্টা করুন। কেননা যান্ত্রিক জীবনে প্রতিনিয়তই আমাদের এমন সব ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
সব সময়ই সাফল্য নয়
ভালো করতে কে না চায়। মনে রাখুন, সফলতা ও ব্যর্থতা মিলিয়েই আমাদের জীবন। সব সময়ই যে ভালো করতে হবে এমন নয়, বরং প্রতিটি পরিস্থিতি থেকে শেখার চেষ্টা করুন। আর নিজের সবটুকু দিয়েই চেষ্টা করুন। পরিবর্তে আপনি কি ভালো ফল পাবেন না খারাপ, সেটা মাথা থেকে সরিয়েই কাজ করুন। দেখবেন, এভাবেই আপনি নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছেন!

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button