মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকিতে ভারত!
রাশিয়া থেকে বিমানবিধ্বংসী এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার ব্যাপারে চুক্তি করায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হুমকির মুখে পড়েছে ভারত। পেন্টাগনের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত যদি রাশিয়া থেকে অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা পদ্ধতি কেনে তাহলে তারা যে নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না যুক্তরাষ্ট্র।
পেন্টাগনের এশিয়া বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা র্যান্ডাল স্ক্রিভার বুধবার এক প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সাথে তাদের বিদ্যমান সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে এবং সমরাস্ত্র ক্রয় নিয়ে যাতে এ সম্পর্ক বিনষ্ট না হয় সেদিকেও তারা খেয়াল রাখবেন। তিনি বলেন, আমি বলতে চাই, এখানে সামান্য কিছু ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। যদি ভারত রাশিয়া থেকে তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করে তাহলে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশঙ্কা রয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত এক আইন অনুযায়ী, কোনো দেশ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা বিভাগের সাথে বাণিজ্য করলে তাদের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে। পাশাপাশি কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতীত চাইলেই প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে পারবেন না।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ ও ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করার প্রেক্ষাপটে রাশিয়াকে শাস্তি দিতে যুক্তরাষ্ট্র এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর সাথে সম্প্রতি সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পরিচালিত অভিযান যুক্তরাষ্ট্রকে আরও খেপিয়ে তোলে।
স্ক্রিভার বলেন, ভারত যদি রাশিয়া থেকে তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করে তাহলে এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ওই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি নতুন প্রতিরক্ষা বিলের আওতায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা দেয়া আছে, তিনি ইচ্ছে করলে কোনো দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, আবার কোনো দেশকে ইচ্ছে করলে ছাড়ও দিতে পারেন। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেছিলেন, ভারতকে এ ব্যাপারে ছাড় দেয়া হবে বলে তিনি মনে করেন। স্ক্রিভার এ বিষয়ে বলেন, ট্রাম্পের ওই ক্ষমতা রয়েছে, তিনি ইচ্ছে করলে কোনো দেশকে ছাড় দিতে পারেন। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, এটি তিনি করবেনই।
রাশিয়া থেকে বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অস্ত্র ক্রয়ের ব্যাপারে ভারতের ৬০০ কোটি ডলারের চুক্তিটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ বছরের শেষ দিকে রাশিয়া এতে সই করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এ চুক্তির আওতায় রাশিয়ার কাছ থেকে ভূমি থেকে আকাশে ছোড়া যায়- এমন দূরপাল্লার পাঁচটি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনবে ভারত। এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা শত্রুপক্ষের পারমাণবিক বোমা বহনকারী যুদ্ধবিমান, স্টিলথ ফাইটার জেট, গোয়েন্দা বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন শুধু শনাক্তই করতে পারে না, ৪০০ কিলোমিটার গতিতে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় সেগুলো ধ্বংসও করতে পারে।
এ ছাড়া রয়েছে চারটি প্রজেক্ট ১১৩৫৬ ফ্রিগেটস (রণতরী), দ্বিতীয় পারমাণবিক সাবমেরিন ভাড়া নেওয়া ও রাশিয়ার কাছ থেকে ক-২২৬টি ৬০টি হেলিকপ্টার ক্রয়। এর আগেও ভারত রাশিয়া থেকে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন ক্রয় করেছিল। স্ক্রিভার বলেন, রাশিয়া থেকে ভারতের সমরাস্ত্র ক্রয়ের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। তারা এ বিষয়ে ভারতের সাথে কথা বলতে আগ্রহী। সে সময় তারা ভারতকে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম ক্রয়ের বিকল্প সম্পর্কেও অবহিত করবেন।
অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা
তবে ভারতই প্রথম দেশ নয়, যারা রাশিয়া থেকে এই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা কিনছে। এর আগে চীন, তুরস্ক, সৌদি আরব, কাতার প্রভৃতি দেশ বিমানবিধ্বংসী এই ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা কিনেছে বা কেনার পরিকল্পনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিকরা রাশিয়া থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্র কেনার ব্যাপারে আগ্রহী তুরস্কের ব্যাপারেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
অন্যদিকে সৌদি আরব সরাসরি কিছু না বললেও গত জুনে তারা উল্লেখ করে, কাতার যদি রাশিয়ার সাথে চুক্তিতে পৌঁছে যায়, তাহলে তারাও প্রয়োজনীয় সব কিছু করার ব্যাপারে বিবেচনা করবে। সৌদির এ হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও রাশিয়া কাতারে এ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা সরবরাহ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহের বিষয়টি একটি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত। রাশিয়ার এ এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ৪০০ কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। বর্তমান বিশ্বে এটিকে সেরা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভারত সবচেয়ে বেশি সামরিক অস্ত্র কেনে রাশিয়ার কাছ থেকে। স্টকহোম পিস ইনস্টিটিউট সম্প্রতি এক রিপোর্টে বলেছে, গত পাঁচ বছরে ভারতের আমদানি করা মোট অস্ত্রের ৬২ শতাংশ ছিল রাশিয়ার, তবে এটি আগের পাঁচ বছরের ৭৯ শতাংশের তুলনায় যা অনেকটাই কম।