এ রায় আপিলে টিকবে না : ব্যারিস্টার রাজ্জাক

Abdur-Razzak১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অধ্যাপক গোলাম আযমের কারাদন্ডাদেশের রায়কে ‘ন্যায়ভ্রষ্ট’ ও ‘ভ্রান্ত’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, এ রায় আবেগতাড়িত। এখানে আইনকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। আপিলে এ রায় টিকবে না। আমরা আপিল করবো। আশা করি সর্বোচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাবো।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে  সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় তিনি এসব কথা বলেন। আসামি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গোলাম আযমকে দেয়া দন্ডাদেশ প্রত্যাখ্যান করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক এডভোকেট সাইফুর রহমান।
সোমবার মুক্তিযুদ্ধে পাঁচ ধরনের অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমকে মোট ৯০ বছরের কারাদন্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, এই রায়ে আমরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। আজ আইনের জন্য এটি একটি কালো দিবস। আবেগের বশে এমন রায় এসেছে। আমরা শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এ রায়ে আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা বিস্মিত। আমরা মনে করি, এ রায় ন্যায়ভ্রষ্ট এবং আবেগতাড়িত। সারা দুনিয়ার ফৌজদারি মামলার ইতিহাসে এমন আরেকটি রায় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমরা এটা সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে আনীত ৬১টি অভিযোগের একটিও প্রমাণ করতে পারেনি। এটা রাষ্ট্রপক্ষের চরম ব্যর্থতা।
তিনি বলেন, প্রথম অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষ ৬টি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে অধ্যাপক গোলাম আযম পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর ও ইস্টার্ন জোনের কমান্ডার লে. জেনারেল টিক্কা খান এবং পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মওদুদীর সাথে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তার কোনো কার্যবিবরণী প্রকাশ করতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কারও সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা মানবতাবিরোধী অপরাধ নয়। এ অভিযোগগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় পড়ে না। তারপরও মাননীয় ট্রাইব্যুনাল তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং ১০ বছরের সাজা দিয়েছেন। আইনের দৃষ্টিতে এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
তিনি বলেন, ২ নং অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষ ৩টি ঘটনার উপর নির্ভর করেছে। সেগুলো হচ্ছে অধ্যাপক গোলাম আযম কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় শান্তি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিলেন। শুধুমাত্র শান্তি কমিটি গঠনের সাথে জড়িত থাকা মানবতাবিরোধী অপরাধ হতে পারে না। তাই যদি হয় তাহলে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনতে হবে। তারপরও মাননীয় ট্রাইব্যুনাল অধ্যাপক গোলাম আযমকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনাকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন।
রাজ্জাক বলেন, ৩ ও ৪ নং অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষ অধ্যাপক আযমের ৫০টি বক্তৃতা-বিবৃতির উপর ভিত্তি করে অভিযোগ এনেছে। শুধুমাত্র পত্রিকার খবর ছাড়া অন্যকোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দ্ব্যর্থহীনভাবে তার সাক্ষ্যে স্বীকার করেছেন যে, ১৯৭১ সালে অধ্যাপক আযমের বক্তৃতা-বিবৃতি শুনে কেউ কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে মর্মে তার কাছে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তার এই বক্তব্য সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সাথে গোলাম আযমের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন,  ৫ নং অভিযোগ হচ্ছে, সিরু নামে এক ব্যক্তির হত্যাকান্ড।
এ পর্যায়ে প্রসিকিউশনের কাহিনী হচ্ছে, অধ্যাপক গোলাম আযমের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান  সেনাবাহিনী তাকে হত্যা করে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সেই চিঠি উপস্থাপন করতে পারেননি। চিঠি নেই, চিঠির বাহক নেই, চিঠির পাঠকও নেই। তারপরও মাননীয় ট্রাইব্যুনাল তাদের ‘প্রজ্ঞা’য় গোলাম আযমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সাজা প্রদান করেছেন। আমাদের দেশের ফৌজদারি আইনের দু’শো বছরের ইতিহাসে এরকম সাক্ষ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেয়ার কোনো নজির নেই। তারপরও মাননীয় ট্রাইব্যুনাল তাকে ৩০ বছরের সাজা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এটা নিঃসন্দেহ সত্য যে, অধ্যাপক গোলাম আযম রাজনৈতিকভাবে অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাসী ছিলেন। পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও সাবভৌমত্বের জন্য তিনি কাজ করেছেন। কিন্তু পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে কাজ করা আর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। এটি  একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য। অনেকেই এই পার্থক্য বুঝতে পারে না। আমরা মনে করি, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো উপাদান নেই। আইনের দৃষ্টিতে এ রায় কোনো রায়ই নয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করবো।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ডিফেন্স টিমের মুখপাত্র এডভোকেট তাজুল ইসলাম, এডভোকেট শিশির মো. মনির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button