সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী
৫ সেপ্টম্বর বুধবার সাবেক অর্থমন্ত্রী, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ এম সাইফুর রহমানের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আজ বাদ আসর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নীচ তলায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দোয়া মাহফিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে যথাসময়ে দোয়া মাহফিলে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া দিকসটি পালনে পারিবারিব ও তার জেলা ষিরেটে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। সাইফুর রহমানের মৃত্যুতে বাণী দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জন্মস্থান মৌলভীবাজার থেকে মাইক্রোযোগে ঢাকা যাওয়ার পথে আশুগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ৭৭ বছর বয়সে মারা যান।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ এম সাইফুর রহমান ছিলেন বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী। গ্রামের মেঠোপথ বেয়ে পিচঢালা পথে উঠে এসে এম সাইফুর রহমান গড়ে ছিলেন দৃষ্টান্তগাথা অনুকরণীয় জীবন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এজন্য তাকে কারাবরণও করতে হয়। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি প্রথমে চাটার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট, তারপর রাজনৈতিক জীবনে এসে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করেন অত্যন্ত সফলতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় সংসদে ১২বার বাজেট উপস্থাপন করেন এবং দীর্ঘসময় অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্বব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ও ইফাডসহ বিভিন্ন সংস্থায়।
এম সাইফুর রহমান ১৯৩২ সালের মার্চ মাসে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বাহারমর্দন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুল বাসিত। ১৯৪৯ সালে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে লেটার মার্কসহ মেট্রিকুলেশন, ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৫২ মহান ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন এবং দুই মাসেরও অধিককাল কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করে ওই বছরই উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডন যান এবং ১৯৫৮ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টসের (ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস) ফেলো হন।
সংসদ সদস্য হিসেবে চার বার নির্বাচিত এম সাইফুর রহমান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন। জিয়াউর রহমান একজন সফল ও ব্যস্ত চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টকে রাজনীতিতে এনে সফল রাজনীতিবিদে পরিণত করেন। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য এম সাইফুর রহমান বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে অর্থমন্ত্রী থাকায় এবং সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাজেট পেশ করার কৃতিত্বের অধিকারী। তিনি প্রথম ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯১-৯৬ সালেও টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা, বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৯ সালে তিনি মৌলভীবাজার সদর আসন থেকে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে সিলেট-৪ ও মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে এবং ২০০১ সালে সিলেট-১ ও মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের প্রবর্তক এম সাইফুর রহমান ১৯৯১-৯৬ সালে অর্থমন্ত্রী থাকাকালে বাংলাদেশের অর্থনীতির সংস্কার বিষয়ে বেশকিছু দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব গবর্নরসের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তিনি। ১৯৮০-৮২, ১৯৯১-৯৬ সময়কালে তিনি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, আইএফএডিতে বাংলাদেশের গবর্নর ছিলেন। ১৯৯৪-৯৫ সালে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এম সাইফুর রহমান ইইসি, এসকাপ, কমনওয়েলথ, আঙ্কাটার্ড, আইএফএডি, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফে বাংলাদেশের অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ দূত হিসেবে তিনি ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান সফর করেন। ১৯৯৫ সালে কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৯৫ সালে বসনিয়ায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনেও তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির একনেকের চেয়ারম্যান ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখার জন্য তাকে ২০০৫ সালে একুশে পদক প্রদান করা হয়।
এদিকে এম সাইফুর রহমান এর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাণীতে তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিতে এম সাইফুর রহমান ছিলেন এক উজ্জল জ্যোতিষ্ক। দেশ সেবার মহান ব্রত নিয়েই মরহুম সাইফুর রহমান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। এম সাইফুর রহমান একজন কীর্তিমান অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে যুগান্তকারি অবদান রেখেছেন। রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় তার দক্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সুনাম অর্জন করে। তিনি স্বদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম পথিকৃত। স্বাধীনচেতা, স্পষ্টভাষী, অটুট মনোবল এবং ঈর্ষনীয় ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি ছিলেন সবার নিকট অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। শহীদ জিয়ার সহকর্মী হিসেবে দেশের দূর্যোগকালীন সময়ে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে জনাব এম সাইফুর রহমান দেশকে কেবলমাত্র অর্থনৈতিকভাবেই স্বাবলম্বী করেননি বরং স্বদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারে বিএনপিকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি সবসময় থেকেছেন সামনের কাতারে। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে জাতীয়তাবাদী দর্শনকে বুকে ধারণ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারের কবল থেকে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে এম সাইফুর রহমানের অবদান দেশবাসী ও দল চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।