আদ্দিস আবাবা: চীনের ছোঁয়ায় যেন আরেক ‘বেইজিং’

আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া। ‘ইথিওপিয়া’ নামটি উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে উঠত অনাহার ও অপুষ্টিতে ভোগা হাড্ডিচর্মসার মানুষের মুখ। অনেকেরই খাদ্য সাহায্যের জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতাটুকুও অবশিষ্ট নেই। সেই ইমেজ থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে ইথিওপিয়া।
দেশের সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে রাজধানী আদ্দিস আবাবা। আকাশচুম্বী আধুনিক অট্টালিকা, উন্নত রেল যোগাযোগ ও সুন্দর ঝকঝকে তকতকে রাস্তাঘাট সবই গড়ে উঠেছে সেখানে। প্রশ্ন হচ্ছে, এত অল্প সময়ে বিশাল এ পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব। জবাব হলো, চীনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ইথিওপিয়ার এই পরিবর্তন। চীনের বিনিয়োগে বদলে যাচ্ছে দেশ। বদলে যাচ্ছে রাজধানী। তাদের ছোঁয়াতেই এখন আদ্দিস আবাবা গুণে ও মানে যেন ‘বেইজিং শহরে’ পরিণত হয়েছে।

গত সোমবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সিএনএন বলেছে, সমুদ্র স্তর থেকে প্রায় ২ হাজার ৩৫৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত শহরটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রাজধানীগুলোর একটি। ৩০ লক্ষাধিক নাগরিকের বাস। আদ্দিস আবাবার এক প্রান্তে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে পলি লোটাস এস্টেট নামে বিশাল এক অট্টালিকা। এটা তৈরি করেছে চীনের এক বেসরকারি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান শিহাই রিয়েল এস্টেট। শহরজুড়ে এমন শত শত অট্টালিকা নির্মাণ করেছে চীনা কোম্পানি এবং তা অব্যাহত আছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আধুনিক বিমানবন্দর। শহরের অভ্যন্তরে আধুনিক রেলপথ ও রাস্তাঘাট। এর সবই তৈরি হয়েছে চীনা বিনিয়োগে। সব মিলিয়ে আদ্দিস আবাবা দেখতে পুরো দস্তুর চীনের আর পাঁচটা শহরের মতোই।
ইথিওপিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকে রাজধানীতে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। কিন্তু তখন পর্যন্ত এর উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই ছিল না। বাড়িতে জনগণের জন্য কাজ সৃষ্টি, থাকার জন্য আশ্রয় নির্মাণ ও ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মেরামতের প্রয়োজনবোধ করতে থাকেন রাজধানী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অর্থনীতি ভঙ্গুর ও পর্যাপ্ত অর্থ নেই।

ওই সময় আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা করছিল চীন। ১৯৯৫ সালে চীন সফর করেন ইথিওপীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী মেলেস জেনাউই। চীন ও ইউথিপিয়া স্বাক্ষর করেছিল একটি অর্থনৈতিক চুক্তি। ২০০০ সালে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা বিষয়ক থম সম্মেলন আয়োজন করে বেইজিং। এরপর ২০০৩ সালে আদ্দিস আবাবা দ্বিতীয় সম্মেলন আয়োজন করায় দু’দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়। আদ্দিস আবাবার ভাগ্য বদলের সেই শুরু।

স্কটল্যান্ডের সেইন্ট অ্যান্ড্রস বিশ্ববিদ্যালয়ের আফ্রিকার রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইয়ান টেইলর বলেন, ‘তখনই ইথিওপিয়ার সরকার চীনকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে গ্রহণ করে এবং সেভাবে তার অবকাঠামো গড়ে তোলে।’ এরপর গত দুই দশকে চীন আদ্দিস আবাবায় ৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রাস্তাঘাট, ১ কোটি ২৭ লাখ ডলারের গোরেটা ক্রসরোড, ৮০ কোটি ডলার ব্যয়ে ইথিওপিয়ার প্রথম ছয় লেনের হাইওয়ে, ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ইথিওপিয়া-জিবুতি রেলওয়ে নির্মাণ করে।

এখানেই চীন নির্মাণ করেছে সাব-সাহারা অঞ্চলের প্রথম মেট্রোরেল সিস্টেম। এটা ঘণ্টায় ৩০ হাজার যাত্রী বহন করতে সক্ষম। একই সঙ্গে চলে আবাসন ও শিল্প খাত ইত্যাদিতে ব্যাপক বিনিয়োগ। টেইলর বলেন, একুশ শতকে চীনে যে গতিতে নগর উন্নয়ন হচ্ছে সেই একই গতিতে এগোচ্ছে আদ্দিস আবাবা। চীনের ছোঁয়ায় আমূল বদলে গেছে এ রাজধানী শহর।

ঋণের ফাঁদে বন্দি নয় আফ্রিকা: ঋণ দিয়ে আফ্রিকার দেশগুলোকে ফাঁদে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। একই সঙ্গে আফ্রিকায় আরও ১ হাজার ২৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, আফ্রিকার যেসব প্রকল্পে চীন বিনিয়োগ করবে সেসব প্রকল্প যে শুধু মানুষের কাজে লাগবে তা-ই নয়। প্রকল্পগুলো পরিবেশ রক্ষার কথা মাথায় রেখেই বানানো হবে এবং সেগুলো হবে টেকসই।
সম্প্রতি চীনের ‘গ্রেট হল অব পিপলে’ আফ্রিকার দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের বৈঠকে জিনপিং নতুন চীনা বিনিয়োগের তথ্য জানানোর পাশাপাশি আগে দেয়া কিছু ঋণ মওকুফের ঘোষণাও দেন জিনপিং।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button