ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে দোলাচলে ব্রিটেন
প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট প্ল্যান ভণ্ডুলের আশঙ্কা
বহুল আলোচিত ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে রাজনীতিবিদদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছে চেকার্সের ব্রেক্সিট প্ল্যান। দ্রুতই সেটি পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও তার ব্রেক্সিট প্ল্যান তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে হয়তো কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তি ছাড়াই ব্রিটেনকে ইইউ ছাড়তে হবে। পার্লামেন্ট অনুমোদন করুক বা না করুক, সব ধরনের বিকল্পই বিবেচনায় রেখেছে ব্রিটিশ সরকার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, কোনো চুক্তি ছাড়াই যদি ব্রিটেনকে ইইউ ছাড়তে হয়, তাহলে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা কীভাবে এর ধাক্কা সামলাবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছে ব্রিটিশ প্রশাসন। চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের প্রস্তুতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বৈঠকে বসেন। সেখানে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নি উপস্থিত ছিলেন। দ্রুতই সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়া হবে। ইইউ’র সঙ্গে ব্রেক্সিট নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য ব্রিটেনের হাতে মাত্র কয়েক মাস সময় রয়েছে। চুক্তি হোক বা না হোক, আগামী বছরের ২৯শে মার্চের মধ্যে তাদেরকে ইইউ ছাড়তে হবে। সমঝোতা ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ‘ব্লক’ ছেড়ে দিলে মোবাইল বিল থেকে শুরু করে গাড়ি ভাড়া পর্যন্ত ব্রিটেনের সকল খাতেই এর প্রভাব পড়বে।
ব্রিটেনের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী আশঙ্কা করছেন, রাজনীতিবিদরা চেকার্সের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট প্ল্যান ভণ্ডল করে দিতে পারে। এমনটি ঘটলে কোনো চুক্তি ছাড়াই বৃটেনকে ইইউ ছাড়তে হবে। এতে বৃটিশ অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়বে। রুদ্ধ হবে বাণিজ্য প্রবাহ। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছে বৃটিশ কর্তৃপক্ষ। গতকাল দিন শেষে এ বিষয়ে বিশেষ নোটিশ দেয়ার কথা রয়েছে। তবে, নির্ধারিত সময়ের আগেই পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদী উভয়পক্ষ।
ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, চুক্তি ছাড়া ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ করার সম্ভাবনা কম। কিন্তু এমনটি ঘটলে যুক্তরাজ্য ওই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। তিনি বলেন, ইইউ ছাড়ার জন্য আর ছয় মাস সময় রয়েছে। আমরা ‘নো-ডিল’ প্রস্তুতি শুরু করেছি। চুক্তি হোক বা না হোক, বৃটেন যেন তার উন্নতি অব্যাহত রাখতে পারে। ডমিনিক রাব বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার এখনো বড় সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে, আন্তর্জাতিক আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মুডিজ ইনভেস্টর সার্ভিস বলছে, কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রিটেনের ইইউ ছাড়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন দৃশ্যপট তৈরি হলে তা বৃটিশ অর্থনীতির ক্ষতি করবে। বিশেষ করে মোটর যান, মহাকাশযান, বিমান ও রাসায়নিক খাতে তা ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ইইউভুক্ত ২৭টি দেশের অর্থনীতি ব্রিটিশ অর্থনীতির চেয়ে পাঁচগুণ বেশি শক্তিশালী। তাই ইইউ ব্রিটেনের ব্রেক্সিট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, নিজ দলের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র ভাবমূর্তি হুমকির মুখে পড়েছে। তার দল কনজারভেটিভ পার্টির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদ্রোহী সদস্য ইতিমধ্যেই চেকার্সের ব্রেক্সিট পরিকল্পনার বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি পার্লামেন্টে চেকার্সের ব্রেক্সিট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে না ভোট দেয়ার কথাও বলেছেন তারা। এ বিষয়ে ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, চেকার্সের ব্রেক্সিট প্রস্তাব পার্লামেন্টের অনুমোদন পাবে না, এমনটি তিনি মনে করেন না। ওদিকে, ইইউ’র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মাইকেল বার্নার বলেছেন, উভয়পক্ষ যদি দাবি তোলার ক্ষেত্রে বাস্তববাদী হয়, তাহলে আগামী ছয় বা আট সপ্তাহের মধ্যেই ব্রেক্সিট চুক্তি সম্ভব।