অবরোধ-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে চলছে জামায়াতের ৪৮ ঘণ্টার হরতাল
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল চলছে।
বুধবার হরতালের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল, ঝটিকা মিছিল, ককটেল বিষ্ফোরণ, সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির কর্মীদের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এ সময় আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।
পল্লবী থানার ওসি আব্দুল লতিফ শেখ জানান, বুধবার সকাল ৬টার দিকে মিরপুর পল্লবী থানার কালশী রোডে শিবিরের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করে ৪টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে পুলিশ ধাওয়া করে ৩ শিবির কর্মীকে আটক করে।
প্রায় একই সময় শেওড়া পাড়ার প্রগতি সরণী রোডে শিবিরের ৮/১০ জন একটি ঝটিকা মিছিল বের করে। পরে পুলিশের উপস্থিতির আগেই তারা পালিয়ে যায়।
একই সময় আজিমপুর এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা একটি ঝটিকা মিছিল করে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। এ সময় ৩/৪ টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে পুলিশ সেখান থেকে কাউকে আটক করতে পারেনি।
সকাল ৬টার দিকে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় হরতালের সমর্থনে রাস্তায় আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করে শিবিরকর্মীরা। এ সময় পুলিশ এসে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।
সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ধলপুরে মিছিলের চেষ্টাকালে ২শিবির কর্মীকে আটক করে যাত্রাবড়ী থানা পুলিশ।
এদিকে সকাল ৭টার দিকে হরতালের সমর্থনে ডেমরায় জামায়াতে ইসলামী একটি মিছিল বের করে। তবে পুলিশ আসার আগেই তারা স্থান ত্যাগ করে।
এদিকে হরতাল চলাকালে রাজধানীতে যান চলাচল করলেও তা অন্যান্য দিনের তুলনায় একেবারেই কম। রাজপথ দখল করে রেখেছে রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা। দুয়েকটি বাস চলাচল করলেও প্রাইভেটকার চলাচল করছে না। ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। রাজধানীর সব টার্মিনাল যাত্রী শূন্য। তবে বিমান ও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তুলনামূলক কম ছাড়ছে নৌযান।
হরতালকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নাশকতা ও সহিংসতা রুখতে আশাঙ্কায় আদালত প্রাঙ্গন, সচিবালয়, বাসটার্মিনাল, বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর বাইরে ভোর থেকে লক্ষ্মীপুর, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাটে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। নাটোরে মিছিলের চেষ্টাকালে জামায়াত-শিবিরের ৫ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। খুলনার খালিপুরে মিছিল করে শিবিরকর্মীরা। এ সময় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পুলিশ ৩ জনকে আটক করে। সিলেটের পাঠানটুলায় ঝটিকা মিছিল করে ছাত্রশিবির। এ সময় ১ জনকে আটক করা হয়। চট্টগ্রামে মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। কুমিল্লায় পুলিশের গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এতে এসআইসহ ২ জন আহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর কুমিল্লা টাওয়ারের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। একই সময় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ভাংচুর করে পিকেটাররা। মেহেরপুরে ৪টি সড়ক মেহেরপুর-চুয়াডাঙা সড়কের রাজনগর থেকে বারাদি পর্যন্ত, মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে বন্দর থেকে বামনপাড়া পর্যন্ত, মেহেরপুর-কাথুলি সড়কে কায়েমকাটা মোড় ও মেহেরপুর-কাথুলি সড়কে কায়েমকাটা মোড় এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। রাজশাহীতে শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।