১৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পাকিস্তানে ‘চীনা শহর’ হচ্ছে
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংযোগ স্থাপনের অংশ হিসাবে চীন সরকার ৫,০০,০০০ চীনা নাগরিকের জন্য ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে পাকিস্তানের গাউয়াদার অঞ্চলে একটি শহর নির্মাণ করছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় এটিই হবে চীনের বাহিরে চীন সরকার কর্তৃক নির্মিত কোনো শহর। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রস্তাবিত শহরটির নির্মাণ কাজ ২০২২ সালের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রস্তাবিত শহরটিতে শুধুমাত্র চীনা নাগরিকরাই বসবাস করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চীন সরকার তার নাগরিকদের বসবাসের জন্য আফ্রিকা এবং মধ্য এশিয়ায় এরকম আরো দুটি শহর নির্মাণ করছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে আরো জানা যাচ্ছে যে, চীন সরকার রাশিয়া এবং মায়ানমারে এরকম শহর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
চীনাদের এমন উদ্যোগে স্থানীয় জনগণের মধ্যে চীন বিরোধী মনোভাব এবং অসন্তোষ দিন দিন বেড় চলেছে।
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংযোগ (ঈচঊঈ) পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ। পাকিস্তান তার অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে চায়নার ওপর বৃহৎ ভাবে নির্ভর করে।
বেইজিং ইতিমধ্যেই পাইপলাইন, রেল সংযোগ, রাজপথ, বিদ্যুৎ প্রকল্প, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং মোবাইল নেটওয়ার্কসহ পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অর্থনৈতিক খাতে বিনিয়োগ করেছে। চীনের এসব বিনিয়োগের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্পকে এগিয়ে নেওয়া।
চীন সরকার পাকিস্তানিদের উপর মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। পাকিস্তানে চায়না এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক জোন নির্মাণের মাধ্যমে দেশটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা।
পাকিস্তানের বন্দর নগরী গাউয়াদারে চীনের কলোনি স্থাপনের সাথে ভারত বর্ষে ইংরেজদের কলোনি স্থাপনের যথেষ্ট মিল রয়েছে। চীনের প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের সাথে ইংরেজদের পোর্ট উইলিয়াম প্রকল্পের মিল রয়েছে। ইংরেজগণ কর্তৃক ভারত বর্ষে ৭০ হেক্টর এলাকা জুড়ে পোর্ট উইলিয়াম নির্মাণের মাধ্যমে তার ভারত বর্ষে ইংরেজ শাসনের ভিত স্থাপন করেছিল। আর বর্তমানে চীন সরকারও ঠিক একই রকম প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
পাকিস্তানে চীনের এই শহর নির্মাণের মাধ্যমে চীন সরকার দেশটিতে একটি কলোনি লাভ করতে যাচ্ছে বলেও অনেকের ধারণা। প্রস্তাবিত শহরটির আয়তন হবে ৩.৬ মিলিয়ন স্কয়ার ফিট। এর মাধ্যমে পাকিস্তানে চীনা ব্যবসা বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার ঘটতে চলেছে।
পাকিস্তানের জনগণ তাদের দেশে চীন কর্তৃক শহর নির্মাণের প্রস্তাবকে পাকিস্তানে বিদেশিদের ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন। তার মনে করছেন বিদেশীরা পাকিস্তানীদের জন্মগত ভাবে প্রাপ্ত নিজস্ব ভূমিতে সন্ত্রাসের আস্তানা তৈরি করতে চায়। পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ মনে করে এর মাধ্যমে চীন পাকিস্তানের নাগরিকদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চায়।
পাকিস্তান নামক দেশটি কখনোই তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে পারেনি এবং দেশটি ব্যাপকভাবে বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। যার ফলে পাকিস্তানের নাগরিকদের বিরূপ মনোভাব থাকা সত্বেও পাকিস্তান সরকার চীনের ব্যাপারে নমনীয়। পাকিস্তান চীনের নিকট থেকে ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহযোগিতা পেয়েছে।
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংযোগ এর মাধ্যমে চীনারা ইসলামিক এই জাতির উপর তাদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে চায়। অনেকের মতে ঐতিহাসিক ভাবেই পাকিস্তানের অন্ধকার দিন ঘনিয়ে আসছে।