তেরেসা মে’র ঘোষণা: সম্ভাবনার দোয়ার খুলতে পারে শেফসহ দক্ষ জনশক্তি আসার
ক্যাম্পাইনারদের দাবি: ক্যাটারিং সেক্টরের দীর্ঘদিনের প্রচারণার ফসল এটি
এনাম চৌধুরী: ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ইইউ ও নন ইইউ দেশের নাগরিকদের জন্য সম্প্রতি তার ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন নীতি ঘোষণার ইঙ্গিত ও ব্রিটেনে সমঅধিকারের ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন নীতির দাবিতে আন্দোলনে অংশহগ্রহণকারীরা তাদের প্রচারণার বিশাল সাফল্য হিসেবে দেখছেন। ব্রিটেনে সবার জন্য সমান ইমিগ্রেশন নীতির দীর্ঘ দিন থেকে যারা বিরামহীন প্রচারণার চালিয়ে যাচ্ছিলেন তারা মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর এ ইঙ্গিত আগামী দিনের জন্য একটি সম্ভাবনার উজ্জ্বল বার্তা। বিশেষকরে ব্রিটিশ অর্থনীতির বিশাল নিয়ামক কারী ইন্ডাষ্ট্রির চলমান কর্মী সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শেফসহ বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ জনশক্তির চাকুরীর সুযোগ তৈরী হয়েছে।
ক্যাম্পাইনাররা মনে করেন কর্মী সংকটে জর্জরিত ব্রিটিশ কারি ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটি আনন্দের একটি বার্তা। এই সুযোগের যথার্থ ব্যবহার করা হলে আগামী দিনের কারি ইন্ডাস্ট্রি হয়ে উঠবে একটি বিশাল খবরের অংশ।
ব্রিটেনের খ্যাতিমান ব্যবসায়ী ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডের ফাউন্ডার এনাম আলী এমবিই ২০০৫ সালে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড চালু করার পর থেকে ব্রিটিশ সরকারের কাছে বৈষম্য মূলক ইমিগ্রেশন নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি প্রচারণা শুরু করেন। তিনি ব্রিটিশ কারী অ্যাওয়ার্ড মঞ্চে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের কাছে দাবি তুলে বলেছিলেন ব্রিটেনের জাতীয় বাজেটের বিশাল একটি অংশ যে বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা দিয়ে থাকেন ইমিগ্র্যাশন নীতিমালায় তাদের প্রতি বৈষম্য মেনে নেয়া যায়না। তিনি বলেছিলেন ব্রিটিশ সরকার অবশ্যই আমাদের এ ন্যায়সঙ্গত দাবিকে সম্মান করতে হবে। পর্যায়ক্রমে তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র (তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) কাছেও এই দাবি তুলে ধরেন।
ব্রেক্সিট ক্যাম্পইনের সময় ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল ও ব্রিটিশ কারি এওয়ার্ডের প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী এমবিই সহ অনেকেই সরাসরি বৈষম্যমূলক ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন নীতির বিরুদ্ধে ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচারণা করলেও এনাম আলী এমবিই ২০০৫ সালে শুরু করা তার বৈষম্য মূলক ইমিগ্রেশন নীতির বিরুদ্ধে চালানো ক্যাম্পইন জোরালো করতে থাকেন।
ক্যাম্পইনের পাশাপাশি এনাম আলী এমবিই ২০১৬ সালে সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি তৈরী করেন একটি প্রস্তাবনা। চুলচেরা বিশ্লেষণ, চলমান সংকট, ভবিষ্যৎ করণীয়, সরকার কি ধরণের প্রদক্ষেপ নিতে পারে সেটি নিয়ে শত পৃষ্ঠার ঐ প্রস্তাবনাটি কারি ইন্ডাস্ট্রির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছিলেন।
এনাম আলী এমবিই’র এই প্রস্তাবে দক্ষ শেফদের বছরে ২৯ হাজার পাউন্ডের বেতনের পরিবর্তে ১৯ হাজার পাউন্ড নামিয়ে আনার সুপারিশ এবং রেষ্টুরেন্ট এ টেকওয়ে ডেলিভারি দেয়া ব্যবসাতে দক্ষ শেফ আনার সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানান। তার এই দাবিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেলিগেশনের সামনে যথার্থ বলে মেনে নেন এবং পরবর্তীতে শেফ আনার ব্যাপারে রেষ্টুরেন্ট ও টেকওয়ে ডেলিভারি সহ রেষ্টুরেন্ট এর বৈষম্যের ব্যাপারে পর্যালোচনার অফিসিয়াল চিঠি প্রদান করেন I
অনেক আলোচনা, দাবি আদায়ে ক্যাম্পাইন-আন্দোলনের পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ইইউ ও নন ইইউ দেশের নাগরিকদের জন্য সম্প্রতি তার ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন নীতি ঘোষণা বাংলাদেশিদের মনে আসার আলো জাগিয়েছে I
এনাম আলী এমবিই সম্প্রতি ব্রিটেনের মূলধারার টিভি চ্যানেল, চ্যানেল ফোর এ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা আনন্দিত যে সরকার আমাদের সমস্যাগুলো শুনেছে এবং সমাধানে এগিয়ে যাচ্ছে। কমিউনিটি নির্ভর এই কারি ব্যবসা অন্য ব্যবসা থেকেও আলাদা। শুধুমাত্র স্টাফের অভাবে একের পর এক রেষ্টুরেন্ট বন্ধ হচ্ছে, চোখের সামনে বলা যায় স্বপ্ন গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। আমরা মনে করি এই বিষয়ে নেয়া পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তগুলো সমঅধিকার এবং বাস্তব ভিত্ত্বিতে বিবেচনা করবে সরকার। নীতিমালায় বৈষম্য এর বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
কারি অ্যাওয়ার্ডের ফাউন্ডার এনাম আলী বলেন, ব্রিটিশ মূল ধারা থেকে সবসময় এই দেশে শেফ তৈরির জন্য দাবি জানালে তিনি নর্থ ইস্ট সারে কলেজ টেকনোলজির সহযোগিতায় লি রাজ একাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করলে ও নতুন প্রজন্মের অনীহার ফলে প্রযোজনীয় ছাত্র পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি বলেন আমরা চাই এমন এক ইমিগ্রেশন নীতি যেখানে এদেশের ইমিগ্রেশন সিস্টেমকে অপব্যবহার করা হবে না, কমনওয়েলথ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর সবার জন্য একনীতি থাকবে এবং সর্বোপরি উপকার হবে সমস্যা জর্জরিত ব্রিটিশ কারি ইন্ডাস্ট্রির।
ব্রিটেনের বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কামাল ইয়াকুব বলেন, আমার বিশ্বাস ব্রিটিশ সরকার আমাদের ন্যায় সঙ্গত দাবি গুলো মেনে নিবে।
তিনি বলেন, আমরা তাদের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম, কারী শিল্পের এ সংকটের যেন স্থায়ী সমাধান করা হয়, পাশাপাশি এ দেশে যারা বৈধভাবে এসে এখন কাগজ-পত্র নেই এবং যারা দক্ষ তাদের যেন এমনেস্টি দিয়ে বৈধতা প্রধান করা হয়। তিনি কারী ইন্ডাস্টির সংকট মোকাবেলায় যারা কাজ করেছেন এবং করে যাচ্ছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এ ব্যাপারে বার্মিংহাম এর অন্যতম কারি সংগঠন গিল্ড এর সভাপতি ইমাম উদ্দিন বলেন, আমাদের জমা দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে ভেবে খুব ভালো লাগছে।
গিল্ড বার্মিংহাম এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোহাইমিন মিয়া বলেন, শুধূ আন্দোলন করে দাবি আদায় করা যায় না, লবিং করেও দাবি আদায় করা যায়, এই প্রচারণা তা প্রমান করে।
সারের মৌলভ্যালি ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের সিভিক মেয়র, বিশিষ্ট রেষ্টুরেণ্ট ব্যবসায়ী কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হক বলেন, আমাদের দাবি গুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে দেখে ভালো লাগছে এবং সেদিনের টেন ডাউনিং স্ট্রিটের ডেলিগেশনে থাকা সার্থক মনে হচ্ছে।
ব্রিটিশ বাংলাদেশ ক্যাটারিং এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শাহনুর খান বলেন, আমাদের দাবী বাস্তবায়ন এর কাজ শুরু হওয়া বিশাল পাওয়া, আজ মনে হচ্ছে সেদিনের মিটিং এর সাফল্য ক্যাটারিং সেক্টরের উন্নতিতে সাহায্য করবেI