ইমরানের স্পর্ধায় বিস্মিত ভারত!
উভয়দেশের নেতৃত্ব কেন শান্তিতে পৌঁছতে পারছে না
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে তিন পুলিশ সদস্যকে অপহরণ ও হত্যার পর পাকিস্তানের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাতিল করেছে নয়াদিল্লি। এ ঘটনায় টুইটারে হতাশা প্রকাশ করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে খোঁচাও দিয়েছেন তিনি। আর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি।
টুইটারে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাতিল হওয়ায় তিনি আশাহত। ভারতের আচরণকে তিনি ‘উদ্ধত ও নেতিবাচক’ আখ্যা দিয়েছেন। খান আরও লিখেছেন, তিনি গোটা জীবনে উঁচু পদে বসে থাকা অনেক নিম্নমেধার লোক দেখেছেন, বৃহত্তর চিত্রটি উপলব্ধি করার মতো দূরদর্শিতা যাদের নেই।
কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারও নাম উল্লেখ করেননি ঠিকই। কিন্তু তার ইঙ্গিত যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকেই, সে কথা বোঝার জন্য প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডিও পেরনোর প্রয়োজন পড়ে না।
আনন্দবাজার সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই লেখায় বলা হয়েছে, ইমরান খানের এহেন মন্তব্যের পর প্রথম এবং প্রধান যে প্রশ্ন উঠে আসে, তা হলো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করার মতো স্পর্ধা এবং দুঃসাহস তার হলো কী করে?
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্য করছেন তিনি সে কথা কি ভুলে গিয়েছিলেন ইমরান খান? এর পর যে প্রশ্ন আসে, তা হলো, মেধার বিচারটা ইমরান খান করলেন কীসের ভিত্তিতে? কে উচ্চ মেধার, কে নিম্ন মেধার, ইমরান খান তা বিচার করেন কোন মাপকাঠিতে? ভারতের মতো একটি সুবিশাল দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিক যাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন, সেই ব্যক্তিকে নিম্ন মেধাসম্পন্ন আখ্যা দিয়ে ইমরান খান আসলে তো গোটা ভারতেরই অমর্যাদা করলেন।
অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অবশ্যই মহত্ কাজ। দুই দেশের মানুষই শান্তি চান। পারস্পরিক বিদ্বেষ বা ঘৃণা কেউ পুষে রাখতে চান না বলেই খেলার মাঠে ভারতীয় ক্রিকেটারকে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের জুতোর ফিতে বেঁধে দিতে দেখা যায়। বৈরিতার শেষ দেখতে চান বলেই ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দর্শকাসনে পাকিস্তানের সমর্থককে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেখা যায়। নাগরিকদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক শান্তির প্রতি এই আবেগ থাকা সত্ত্বেও ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্ব কেন শান্তিতে পৌঁছতে পারছে না, সে এক ভিন্ন বিতর্ক।
কেন শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হলেই কোথাও বিস্ফোরণ হয়, কোথাও নাশকতা হয়, কোথাও জঙ্গিহানা হয় বা কোথাও সীমান্তরক্ষায় রত জওয়ানের মাথা কেটে নিয়ে যাওয়া হয়, সে কথা হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা। কোন শিবির শান্তি চায় না, কারা হিংসা জিইয়ে রাখতে চায়, তা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে। তাই এখানে নতুন করে সে বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই। এখানে প্রশ্ন হলো, ইমরান খান নিজে দ্বিপাক্ষিক শান্তিতে কতটা আগ্রহী?
যেকোনও কূটনৈতিক পদক্ষেপই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। বুদ্ধিমত্তা, সংবেদনশীলতা, ভারসাম্যের বোধ ইত্যাদির সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। ইতিবাচক ফলের লক্ষ্যে প্রতিটি পদক্ষেপকে সৌজন্যের মোড়কে পেশ করতে হয়। পরিণাম সব সময়ে আশানুরূপ হয় না। কিন্তু তার জন্য হতাশাও ব্যক্ত করতে হয় অত্যন্ত সংযত শব্দে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী উল্টোটা করলেন। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাতিল হওয়ার প্রেক্ষিতে হতাশা ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বেলাগাম প্রতিক্রিয়া দিলেন। এতে ইমরান খানের মেধার কী রকম পরিচয় পাওয়া গেল, সে প্রশ্নে আমরা যাচ্ছি না। কিন্তু ভারত-পাক কূটনীতির রাস্তাকে ইমরানের এই অসৌজন্যমূলক এবং ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য যে আরও কণ্টকাকীর্ণ করে তুলল, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। -আনন্দবাজার