জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন ভাষণে ট্রাম্প

সিরিয়া পরিস্থিতি হৃদয় বিদারক, শান্তির জন্য সবপক্ষকে এক হতে হবে

বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনাটা আবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে

সিরিয়ার চলমান সংকটকে হৃদয়বিদারক উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সব পক্ষের অবশ্যই লক্ষ্য হওয়া উচিত সিরিয়ার যুদ্ধাবস্থার অবসান ঘটানো। এর এমন একটা রাজনৈতিক সমাধান বের করতে হবে যাতে দেশটির জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের ৭৩ তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট এই আহবান জানান।

সিরিয়া সংকট ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ভাষণে উঠে আসে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দেশটির উত্তেজনা প্রশমন, ইরানের উপর অবরোধ আরোপ, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকট, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রচেষ্টা, বাণিজ্য নীতি, অভিবাসন ইস্যুসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভাষণে ইরানের ইস্যুতে কড়া সুরে কথা বলেন ট্রাম্প এবং দেশটিকে সন্ত্রাসে মদদ যোগাবার অভিযোগও আনেন তিনি।

সংকট সমাধানে ট্রাম্প, জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন শান্তি প্রক্রিয়াকে পুনরায় সচল করার আহবান জানান। তবে আসাদ সরকার দ্বারা কোনো ধরনের রাসায়নিক হামলার মতো ঘটনা সংগঠিত হলে যুক্তরাষ্ট্র সমুচিত জবাব দিবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেন তিনি।

সিরিয়ায় চলমান সংকট জিইয়ে রাখার জন্য ইরানকে এক হাত নেন যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, সিরিয়ার প্রতিটি মানবিক সংকট সমাধার আগে এটা বুঝতে হবে যে, এ সংকটের পেছনে ইন্ধন এবং অর্থায়ন যুগিয়েছে ইরানের একনায়করা।

ইরান নেতৃবৃন্দ বিশৃঙ্খলা, মৃত্যু আর ধ্বংসাত্মক কাজের বীজ বপন করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, দেশটি প্রতিবেশি, তার সীমান্ত এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব-এর কোনটাকেও সম্মান দেখাতে জানেনা। দেশের সম্পদ খরচ করে ইরানের নেতারা নিজেদের পকেট ভারী করছে আর মধ্যপ্রাচ্য এবং তার আশে-পাশে অশান্তি ছড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, ইরানের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে প্রতিবেশি দেশগুলোকে তার মূল্য দিতে হচ্ছে। আর একারণেই মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তি প্রত্যাহার আর অবরোধ আরোপকে পুরোপুরি সমর্থন জানিয়েছে।

উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। সংঘাতকে আমরা শান্তির প্রচেষ্টার দিগন্তে নিয়ে এসেছি।

মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গে ট্রাম্প আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে আমরা নতুন এবং ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমার সৌদি আরব সফরের পরপরই গালফ দেশগুলো একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ, অর্থায়ন বন্ধ করাসহ নানান কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটের বিষয়টি তোলে ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

নিজ দেশকে সবার আগে প্রাধান্য দেবার কথা উল্লেখ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বিশ্বায়ন মতবাদ নয়, বরং দেশপ্রেমের মতাদর্শে দীক্ষিত হতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চলবে তার নাগরিকদের ইচ্ছানুযায়ী আর কারো ইচ্ছায় নয়।

অভিবাসী নীতি প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, প্রত্যেক দেশেরই তার নিজস্ব অভিবাসন নীতি থাকবে, যাতে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে। আর এ কারণেই নতুন বিশ্ব অভিবাসন নীতি মানার পক্ষে নয় যুক্তরাষ্ট্র।

বাণিজ্য প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, এখানে উপস্থিত সবাই একটি বিষয় স্বীকার করবেন যে বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনাটা আবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য হবার পরও অনেক দেশ অনিয়মকে নিজেদের সুবিধার পক্ষে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যাচ্ছে অথচ যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশকে বাধ্য করা হচ্ছে বাণিজ্য সংগঠনের নিয়ম মেনে চলার।

চীনকে দোষারোপ করে ট্রাম্প বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনা যোগ দেবার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৩০ লাখেরও বেশি ম্যানুফ্যাকচারিং চাকুরি সুবিধা হারিয়েছে, এর চার ভাগের এক ভাগ স্টীলের চাকুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button