একটি পরকীয়া প্রেমে দু’টি খুনের রোমহর্ষক কাহিনী
পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে দুই যুবকের দ্বন্দ্ব। এর জেরে একজনকে খুন করে আরেকজন। আর এ মামলায় জেল থেকে বেরোনোর পরে খুনিকে হত্যা করে বদলা নিল নিহতের পরিবার।
গত বুধবার ভারতের হায়দরাবাদের ব্যস্ত রাস্তায় কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হল জি রমেশ নামে বছর চব্বিশের যুবককে। নিহত যুবক মহেশ গৌড় নামে আরেক যুবককে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত।
জানা যায়, নৃশংস এই ঘটনার পিছনে রয়েছে পরকীয়া প্রেম ও বিশ্বাসঘাতকতার রোমহর্ষক কাহিনী।
২০১৭ সালে স্থানীয় এক বিবাহিত মহিলার প্রেমে পড়েছিল রমেশ ও মহেশ দুজনেই। পথের কাঁটা সরাতে ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর মহেশকে খুন করার ষড়যন্ত্র করে প্রতিবেশী রমেশ। সে দিন কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে জুম্মেরাত বাজার থেকে মহেশকে নিয়ে সে কাডতালের মসিগন্ডি মন্দিরে পূজা দিতে যায়। ফেরার পথে গাড়িতে মদ্যপানের আসর বসে। মহেশকে মাতাল করার পরে গাড়িতে বসেই শামসাবাদের কাছে তার গলায় ছুরি চালায় রমেশ। পরে মুচিনতালে গাড়ি থেকে তার লাশ ফেলে দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেও বিফল হয় রমেশ। সার্ভিস সেন্টারে তার গাড়ির ভিতর রক্তের দাগ দেখে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশকে জানান গ্যারাজ কর্মীরা। গাড়ি ফেরত নিতে এলে হাতেনাতে ধরা পড়ে রমেশ। জেরায় সে খুনের কথা স্বীকার করে এবং তার থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় হত্যাকাণ্ডে তার সঙ্গী ঢুলপেটের পি নরেশ (২১), জিয়াগুডার এম শিভা (২৬) ও জি ইয়াদাইয়াকে (৬০)।
বিচারে কারাদণ্ড হলেও কয়েক মাস পরে জামিনে ছাড়া পায় রমেশ।
মহেশের স্বজনরা যেন তাকে খুঁজে না পায়, সেজন্য সে এলাকা ছেড়ে শহরের বাইরে পাতানচেরুতে এসে বসবাস শুরু করে।
কিন্তু সেখানেও তাকে খুঁজে বের করে মহেশের পরিবার। বুধবার সে আদালতে হাজিরা দিতে আসবে জানতে পারে নিহত মহেশের বাবা ও চাচা কিষাণ ও লক্ষ্মণ গৌড়। রমেশ আদালত থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পরই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তারা।
এ সময় বেশ কিছু লোক তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন তারা।
এমনকি একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, এ সময় পুলিশের একটি টহল যান ঘটনাস্থল অতিক্রম করছে, কিন্তু তারাও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেননি।
রমেশের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযুক্তরা ঘটনাস্থলে অস্ত্র ফেলে দিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
শামসাবাদ পুলিশের ডেপুটি কমিশনার এন প্রকাশ রেড্ডি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, নারীঘটিত কারণে গত বছরের ডিসেম্বরে শামসাবাদে মহেশ খুনের প্রধান আসামি ছিলেন রমেশ। তাই তিনি এ হত্যাকাণ্ডকে পূর্বের ঘটনার প্রতিশোধই বলছেন।
উল্লেখ্য, পরকীয়া অবৈধ নয়, ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। প্রায় ১৫৮ বছরের পুরনো আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে শীর্ষ আদালত। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, পরকীয়া কোনো অপরাধ নয়। স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি নয়। তাই যদি কোনো বিবাহিত মহিলা স্বেচ্ছায় পরকীয়ায় লিপ্ত হয়, তাহলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
কিন্তু ঐতিহাসিক এই সুপ্রিম রায়কে মেনে নিতে পারছেন না ভারতেরে অনেকেই। রায়দানের পরপরই তারা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের সঙ্গে একমত হতে পারছি না। এই রায়ের মাধ্যমে বিবাহিত দম্পতিদের পরকীয়ার লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। তাই যদি হয় তাহলে বিয়ের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? নারী-পুরুষের উভয়ের ক্ষেত্রেই অপরাধযোগ্য ঘোষণা করার বদলে পরকীয়াকে বৈধতা দেয়া হলো। পুরোপুরি নারী-বিরোধী রায়।