এরদোগানের জার্মান সফরে তুরস্কের জন্য সুখবর
দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় চার হাজার ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার
একগুচ্ছ এজেন্ডা ও ব্যস্ত সূচি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার জার্মানি পৌঁছেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। প্রেসিডেন্ট এরদোগান এই সফরে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেলের সাথে বৈঠক করবেন এবং সেখানে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, তুরস্কের মুদ্রা লিরা ইস্যুতে সৃষ্ট সঙ্কট, সিরিয়া পরিস্থিতি এবং আটক জার্মান নাগরিকদের বিষয়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করা হবে।
গত বেশ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন ইস্যুতে বার্লিন ও আঙ্কারার মধ্যে মতভেদ দৃশ্যমান হলেও সাম্প্রতিক সময়ে উভয় দেশই একে অপরের প্রতি নরম সুরে কথা বলছে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনার বার্তা দিচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে তুরস্ক জার্মানির সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করবে বলে জানান প্রেসিডেন্ট এরদোগান। গত রোববার তিনি বলেন, ‘আঙ্কারা ও বার্লিনের মধ্যকার গত কয়েক বছরের তিক্ত রাজনৈতিক সম্পর্ক ও অভিজ্ঞতা পুরোপুরি ত্যাগ করে সামনে এগিয়ে যাওয়াই সফরে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে থাকবে। এ ছাড়াও যৌথ অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে উভয় দেশের লাভবান হওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ সফরে চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল ছাড়াও জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওয়াল্টার স্টেইনমায়ারের সাথেও বৈঠক করবেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
চলতি সেপ্টেম্বর মাসে বার্লিন ও আঙ্কারার কূটনৈতিক যোগাযোগ এবং ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। চলতি মাসের শুরুর দিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মওলুদ কাভুসোগলুর সাথে বৈঠক করেন এবং আঙ্কারার সাথে আরো দৃঢ় ও সহযোগিতামূলক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বার্লিনের ইচ্ছার কথা জানান। গত সপ্তাহে তুরস্কের অর্থমন্ত্রী বারাত আল বাইরাক, বাণিজ্যমন্ত্রী রুশার পেকান এবং প্রাকৃতিক সম্পদমন্ত্রী ফাতিহ সোমনেজ বার্লিনে জার্মানির অর্থমন্ত্রী ওলাফ স্কলজ এবং অর্থ ও জ্বালানিমন্ত্রী পিটার আলতমায়ারের সাথে বৈঠক করেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অধ্যাপক ও কলাম লেখক মানসুর একগুন বলেন, নিজেদের ভেতর বিদ্যমান বিভেদ ও মতভেদগুলো বাদ দিয়ে সিরিয়া ও দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর মতো পারস্পরিক কৌশলগত স্বার্থগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে চাইছে উভয় দেশ। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ‘উদ্বাস্তু সঙ্কট, জটিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং জার্মানিতে লাখ লাখ তুর্কির বসবাস ইস্যুসহ বিভিন্ন ইস্যু জড়িত থাকায় এই দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল। তুরস্কের সরকার বুঝতে পেরেছে যে, তুরস্ক শিগগিরই ইইউয়ের সদস্য হতে পারছে না এবং সে জন্যই এই সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর সাথে আঙ্কারা আরো বাস্তবসম্মত প্লাটফর্ম গঠনের কথা চিন্তা করছে। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের জার্মানি সফর এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। নিজেদের মধ্যকার ইস্যুগুলো সমাধান করার লক্ষ্যে উভয় পক্ষ এটাকে তাদের যৌথ স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করবে।’
মূলত ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর এরদোগান সরকার অপরাধী, সন্ত্রাসী ও ক্যুর সাথে জড়িতের ওপর ব্যাপকভাবে ধরপাকড় শুরু করলে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ২০১৬ সালের সেই ব্যর্থ অভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রকারী সেনাকর্মকর্তা, সন্ত্রাসী ও বেসামরিক মানুষসহ ৩০০ জন নিহত হয়। ব্যর্থ সামরিক ক্যুর সাথে জড়িত সন্দেহে আটককৃতদের মধ্যে সাংবাদিকরাও ছিলেন। জার্মানি সে সময় আঙ্কারার দমনপীড়নের সমালোচনা করলেও বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কথা অস্বীকার করে তুরস্ক।
একসাথে কাজ করার ব্যাপারে তুরস্ক ও জার্মানির সামনে অনেক কারণ রয়েছে। এ ছাড়া তুর্কি বংশোভূত প্রায় ৩০ লাখ মানুষ জার্মানিতে বসবাস করে। অন্য দিকে তুরস্কের প্রধান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক অংশীদার জার্মানি। দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় চার হাজার ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার।