এশিয়া কাপ ফাইনাল

ভারতের রুদ্ধশ্বাস জয়

একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখলেন বাংলাদেশের সমর্থকেরা

জেতা নয়তো কি! কেবল কাপটাই ঘরে এলো না বাংলাদেশের। তাছাড়া জিততে ঘাম ছুটিয়ে দিল যে ভারতের! খেলায় কোনো অংশে কম নই আমরা বুঝিয়ে দিলো টাইগাররা ভারতকে। আফসোস নেই জেতা হলো না বলে। কারণ, বাংলাদেশের সমর্থকেরা একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখলেন আজ। দেখলেন মন মাতানো ব্যাটিং, মন জুড়ানো ফিল্ডিংও!

খেলায় একবার ভারতীয় দর্শকের চোখেমুখে এসেছে দুশ্চিন্তার ছাপ! একবার বাংলাদেশের দর্শকদের চেহারা হয়েছে থমথমে। ক্যাপ্টেনের চেহারায়ও যেমন কনফিডেন্স ছিল, ছিল দুশ্চিন্তার ছাপ!

জয়ের জন্য ২২৩ রানের লক্ষ্য অর্জনে খেলছে ভারত। তবে মহেন্দ্র সিং ধনির উইকেটের পতনের পর থেকে ভারত দলে স্পষ্ট মনোবলের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।

শুক্রবার বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া এশিয়া কাপের ফাইনালে টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে টাইগাররা সংগ্রহ করে ২২২ রান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১২১ রান করেন তিনি। এছাড়া ৩৩ রান করেন সৌম্য সরকার। ৩২ রান করেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

প্রথম পাওয়ার প্লেতে ভারতের দুটি উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। শিখর ধাওয়ানের পর ফিরিয়ে দিয়েছে অম্বাতি রাইডুকে।

তারপর ভারতের আজকের দামী উইকেটটি নিয়েছেন রুবেল হোসেন। রুবেলের আগের ওভারটিতে খুব খেলেছিলেন রোহিত। বোধহয় সে শোধটাই তুলে নিলেন রুবেল তার পরের ওভারে। তার ক্যাচটি নিয়ে নিলেন নাজমুল। যাওয়ার আগে ব্যক্তিগত ৪৮ রান করে গেলেন রোহিত তার দলের জন্য। ২৮ ওভারের ৩য় বলে দীনেশ কার্তিকের ব্যাট থেকে ভারত অনেক পরে একটি ৪ পেল।

৩০তম ওভারে বল করতে এলেন রুবেল। ধনি একটি রান নিলেন লেগ সাইডে বল ডাইভ করে। তারপর দিনেশকে চাপে রাখলেন রুবেল একবার ইয়র্কার একবার ফুল লেন্থের বল দিয়ে। ওভারটি রুবেল শেষ করলেন মাত্র ১ রান দিয়ে।

৩১তম ওভারের দায়িত্ব নিলেন মাহমুদুল্লাহ। তৃতীয় বলে দিনেশ কার্তিককে দিলেন বোল্ড করে। ব্যক্তিগত ৩৭ রান নিয়ে দলীয় ১৩৭ রানের মাথায় সাজঘরে ফিরে যান দিনেশ।

এবার ধনির সঙ্গে জুটি বাঁধতে আসেন কেদার যাদভ। ধনির যেন যোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠতে চান তিনি। ৩৩তম ওভারের ৫ম বলে একটি ছক্কা হাঁকান। ৩৫ ওভার শেষে ভারতের দলীয় রান ১৫৪।

৩৫তম ওভারটিতে বল করতে এলেন মুস্তাফিজ। তার শেষ বেল একটি সিঙ্গেল নিতে গিয়ে যাদভের উরুর মাংসপেশীতে টান লাগে।

ব্যাপারটি একটি ব্যাপারে ধনি-জাদভ জুটির জন্য কঠিন হয়ে যায়। তা হলো এতক্ষণ ধরে নেওয়া সিঙ্গেল রান। পরের ওভারে নাজমুল বল করতে এলে তাই দেখে শুনে অনসাইডে একটি চার হাঁকালেন ধনি। তারপর অবশ্য পরপর দুটো সিঙ্গেলও নিলেন এই জুটি। শেষ বলে লং অনে খেলে জাদভও একটি সিঙ্গেল নিলেন। ৩৬ ওভার শেষে ভারত দলের রান গিয়ে দাঁড়ালো ১৬০।

৩৭ ওভারের প্রথম বলটি করেই মোস্তাফিজ নিয়ে নিলেন ধনির উইকেট। এরপর জাদভের সঙ্গে জুটি বাঁধতে এলেন রবীন্দ্র জাদেজা।

৩৮ তম ওভারটি করলেন মাশরাফি। তার শেষ বলে জাদভও তার দেশের দর্শকদের হতাশ করে ফিরে গেলেন প্যাভিলিয়নে! জাদেজার সঙ্গে জুটি বাঁধতে এলেন ভূবনেশ্বর কুমার।

৪০ তম ওভারটি করলেন বাংলাদেশ দলের সুযোগ্য ক্যাপ্টেন মাশরাফি। ৪০ ওভার শেষে ভারতের অর্জন ১৭২। ৫ উইকেটের বিনিময়ে। জয়ের জন্য দলটিকে ৬০ বলে আরও ৫১ রান করতে হবে।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য প্রতিটি রান খুব হিসাব করে দেওয়া দরকার। প্রতিটি রান এই মুহূর্তে খুব মূল্যবান। কিন্তু মেহেদি হাসানের চতুর্থ বলটিতে উইকেট কিপার মুশফিক একটি মিস করে বাড়তি একটি রান দিলেন। আর শেষ বলে লেগ অনে হুক করে ইন্ডিয়া নিল ৩টি রান! ৪১ ওভার শেষে ভারতের দলীয় রান গিয়ে দাঁড়ালো ১৭৮।

নাজমুল ইসলামের ৪২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জাদেজা মিড অনে ঠেলে দিয়ে নিলেন ২ রান। তারপর ৩য় বলে স্ট্রেইট শটে একটি চার নিয়ে দলের রান এগিয়ে নিলেন অনেকখানি! জেতার জন্য ভারতের রান দরকার ৩৭। বল রয়েছে ৪৮টি।

৪৩তম ওভারটি রুবেল করতে এসে প্রথম দুটি বলে রান চেক দিলেন। ৩য় বলে লেগ স্লিপ দিয়ে বেরিয়ে গেল একটি রান! এরপর আর একটিও রান না দিয়ে ওভার শেষ করলেন রুবেল।

৪৪তম ওভার শেষে ভারতের দলীয় রান ১৯১। ৩৬ বলে দলটিকে জিততে হলে আর ৩২ রান নিতে হবে।

৪৬ ওভারের তৃতীয় বলে একটি দর্শনীয় ৬ হাঁকালেন জাদেজা। দলের রান ২০০ ছাড়ালো। হলো ২০৩। রুবেল হোসেনের ওভারটি শেষে ভারতের দলীয় রান হলো ২০৫। জেতার জন্য ভারতের আর দরকার ১৮। বল রয়েছে ২৪টি।

৪৭ তম ওভারটি মুস্তাফিজ ভালোই রান চেক দিলেন। কিন্তু একেবারে শেষ বলটিতে একটি চার হলো। ৪৭ ওভার শেষে ভারতের দলীয় রান ২১০।

৪৮ তম ওভারে রুবেলের বলে জাদেজাকে রান আউট করার একটা দারুন সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে তা হলো না। বরং ২টি রান যোগ হলো ভারতের ঝুলিতে। ৪৮ ওভার শেষে ভারতের রান ২১৪।

৪৯ তম ওভারের প্রথম বলে ভূবনেশ্বরের ক্যাচ নিলেন মুশফিক। কেদার জাদভের সঙ্গে জুটি বাঁধতে মাঠে নামলেন কুলদ্বীপ। ওভারটির শেষ বলে একটি ৪ হাঁকিয়ে কেদার যাদব রানের ব্যবধান কমিয়ে আনলেন। ভারতের জেতার জন্য এখন ৬ বলে ৬ রান প্রয়োজন। শেষ ওভারের বল করতে আসছেন মাহমুদুল্লাহ।

টানটান উত্তেজনায় একটি রান আউট মিস করে ফেলেন মুশফিক। সে সুযোগে ভারত ২২২ রান করে ফেলে। হাতে ছিল শেষ বল। তখনও জেতার জন্য একটি রান লাগবে ভারতের!

শেষ বলে ঠাণ্ডা মাথায় লেগ লংয়ে বল বের করে কেদার জাদব ভারতকে জিতিয়ে নিলেন। এশিয়া কাপ গেল ভারতের হাতে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button