লন্ডনি বরের সঙ্গে বাল্যবিয়ে নিয়ে তোলপাড়
এমদাদুর রহমান মিলাদ, বিশ্বনাথ (সিলেট): বিশ্বনাথে জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতি করে লন্ডনি বরের সঙ্গে এক স্কুল ছাত্রীর বাল্যবিয়ে নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সিলেট নগরীতে ভুয়া জন্ম সনদের মাধ্যমে জনৈক আইনজীবির বাসায় গোপনে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান’সহ ৪জনকে শোকজ করা হয়েছে এবং জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতী ও বাল্যবিয়ের অপরাধে বর ও কনের পিতার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদার।
জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পুরাণগাঁও গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে ও প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণী ছাত্রী তামান্না বেগমের সাথে উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্বমন্ডল কাপন গ্রামের মৃত মনু মিয়ার পুত্র যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলু মিয়া চন্দন’র বিয়ের আয়োজন করা হয়। কিন্ত পরিবারের অন্য সদস্যদের মতামতের বিরুদ্ধে এই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় বিয়েতে রাজি হননি বরের পরিবার।
ওই দিনই বাল্যবিবাহের কথা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন রামপাশা ইউনিয়নের বিশ্বনাথেরগাঁও গ্রামের মৃত মদরিছ আলীর পুত্র আহমদ আলী। কিন্তু অভিযোগ প্রদানের দিবাগত রাতেই সিলেট শহরে ভুয়া জন্ম সনদের মাধ্যমে জনৈক আইনজীবির বাসায় ৮ লাখ টাকা কাবিননামা ও ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ধার্য্য করে গোপনে বিয়ে সম্পন্ন হয় স্কুল ছাত্রী তামান্নার।
উপজেলার পুরাণগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমাপনী পরীক্ষার প্রশংসাপত্রে ও তার নিজ (রামপাশা) ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম সনদে তামান্নার জন্ম তারিখ উল্লেখ আছে ২ জানুয়ারি ২০০১। সে অনুযায়ী বিয়ের দিন পর্যন্ত তার বয়স হয় ১৭ বছর ৮ মাস ২২ দিন। অন্যদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর তামান্নার নামে নেয়া জন্ম সনদে জন্ম তারিখ উল্লেখ আছে ১০ ফেব্রুয়ারী ২০০০ইং।
এদিকে, স্কুল ছাত্রীর বাল্যবিয়ের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে সোমবার শোকজ করা হয়েছে উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেগম স্বপ্না শাহিন ও রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীরসহ চারজনকে। শোকজ হওয়া অপর দু’জন হলেন রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য শামীম আহমদ ও প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক ইকবাল। তিন কার্যদিবসের ভিতরে জবাব দিতে তাদেরকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ চন্দ্র মন্ডলের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এঘটনায় মামলা দায়ের করতে থানা পুলিশকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, এঘটনায় ৪ জনকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। বাল্যবিয়ের জন্য কনের পিতা ও বরের বিরুদ্ধে এবং জালিয়াতীর করায় মামলা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।