জাতিসংঘে আরবিতে ভাষণ দিলেন অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে সংস্থাটির ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্র নিউ ইয়র্কে মিলিত হয়। বেশিরভাগ সময়ই হয়তো মনে হয় বিশ্বনেতারা এখানে এসে আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা বিবৃতি পড়ে শোনান কেবল। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রায়শই বিস্ময়কর সব ঘটনা ঘটে যায়। যেমন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সূচনা বক্তব্যের সময় বিশ্বনেতাদের হাসি। ২৯শে সেপ্টেম্বর ঘটলো আরেক ঘটনা। ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারিন নেইসল সবাইকে অবাক করে দিয়ে বক্তব্য দিলেন আরবিতে!
নিজের ভাষণে তিনি বলেন, ‘অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি আরবিতে আপনাদের সামনে কথা বলতে পারি! কেন আমি সেটা করবো? কারণ, আরবি হলো জাতিসংঘের ৬টি আনুষ্ঠানিক ভাষার একটি। আমি ভিয়েনায় আরবি শিখেছি। এটি একটি সুন্দর ভাষা।
প্রাচীন আরব সভ্যতার অংশ। যুদ্ধের বছরগুলোতে আমি লেবাননে পড়াশুনা করেছি। সেখানে দেখেছি যে কিভাবে মানুষ সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জীবন যাপন করে চলছে। এটাই হয়তো জীবনের রহস্য।’
নিজের সূচনা বক্তব্যের প্রথম তিন মিনিট তিনি আরবিতে কথা বলেন। এরপর ফরাসি, স্প্যানিশ ও সবশেষে ইংরেজিতে কথা বলেন। নিজের বক্তব্যে নেইসল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর শরণার্থীদের মর্মস্তুদ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি উপস্থিত সকলকে নিজ নিজ রাজনৈতিক দলকে মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘এই বিশ্বে আমাদের কথা বলার সুযোগ আছে। এই সুযোগকে এই হলের বাইরের মানুষের কথা প্রকাশের জন্য ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ করে যারা মধ্যপ্রাচ্যে আছেন।’
নিজের বক্তব্যের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই নেইসল সিরিয়া ও ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ, পারমানবিক অস্ত্রনিরোধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আন্তর্জাতিক সংকটে জাতিসংঘ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কূটনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেন।
তবে শরণার্থী নিয়ে নেইসলের এই আবেগঘন বক্তব্য বিস্ময়কর আরেকটি কারণেও। অস্ট্রিয়ারই নতুন জোট সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কার্জ। এতে রয়েছে উগ্র-দক্ষিনপন্থী দল ফ্রিডম পার্টি। এই দলটির রাজনৈতিক ভিত্তিই হলো অভিবাসন ও শরনার্থী বিরোধীতা। নেইসল নিজে অবশ্য স্বতন্ত্র পার্লামেন্ট সদস্য। কিন্তু তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে ফ্রিডম পার্টি! অভিবাসীদের নিয়ে তার অনেক বাগাড়ম্বর নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিকভাবে তাকে রক্ষণশীল ভাবা হয়। এ কারণে তার মুখ থেকে শরণার্থীদের মর্মবেদনা শোনাটা বেশ বিস্ময়করই বটে।