দুনিয়ার ইতিহাসে প্রথম মৃত্যুদণ্ড যার আপিলের অধিকার নেই : ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক
জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কেন, সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে সর্বপ্রথম কোনো মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে যার কোনো আপিলের অধিকার নেই। তাছাড়া বিচারিক আদালত যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেননি, সেখানে প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ড প্রদান বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাছাড়া স্কাইপ কেলেঙ্কারির পরও ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান আইনের শাসনের পরিপন্থী। বিচারের ইতিহাসে এটি একটি দুঃখজনক অধ্যায়।
তারপরও আবদুল কাদের মোল্লার সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এর বিরুদ্ধে আমরা রিভিউ পিটিশন করব। মঙ্গলবার আপিল বিভাগে আবদুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার পরপরই সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে আবদুল কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। এই রায় আমরা মানতে বাধ্য। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু এটি একটি ভুল রায়। আমরা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ। আমরা বিস্মিত। আমরা মনে করি, এ রায় ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
তিনি আরো বলেন, বিচারিক আদালত যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেননি সেখানে প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ড প্রদান বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাছাড়া স্কাইপ কেলেঙ্কারির পরও ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান আইনের শাসনের পরিপন্থী। আমাদের সমাপনী বক্তব্যে আমরা বলেছিলাম যে সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে আবদুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আজ তাকে শুধু দোষী সাব্যস্তই করা হয়নি, মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হয়েছে। বিচারের ইতিহাসে এটি একটি দুঃখজনক অধ্যায়। তার পরও আবদুল কাদের মোল্লার সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এর বিরুদ্ধে আমরা রিভিউ পিটিশন করব।
আবদুল কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করার সুযোগ নেই- সরকারপক্ষের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানের ১০৫ ধারায় পরিস্কার বলা আছে যে সুপ্রিম কোর্টে যে রায় হবে সে রায়ের পর রিভিউ আবেদন করার সুযোগ আছে। আমরা যে আপিলটি দায়ের করেছিলাম সে আপিলটি দুটি আইনের অধীনে করা হয়েছিল। একটি হলো সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের অধীনে এবং অন্যটি করা হয়েছিল আইসিটি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্টের অধীনে। কোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি, সে রিভিউর সুযোগ পাবে না এটা সম্পূর্ণ অকল্পনীয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে কেন, সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে সর্বপ্রথম কোনো মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে যার কোনো আপিলের অধিকার নেই। সাধারণ মানুষের দুটি আপিলের অধিকার থাকে। একটা হচ্ছে- ট্রায়াল কোর্ট যখন রায় দেয়, সেখান থেকে হাইকোর্ট। আর হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট। সুতরাং রিভিউর সুযোগ থাকবে না, এটা সঠিক নয়।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, রিভিউ পেন্ডিং থাকা অবস্থায় কখনোই রায় কার্যকর করা হয় না। আইসিটি অ্যাক্টে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ নেই- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইসিটি অ্যাক্টের উপরে সংবিধান। এই সুপ্রিম কোর্ট আইসিটি অ্যাক্টের অধীনে গঠিত হয়নি, তা গঠিত হয়েছে সংবিধান দ্বারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, আসামীপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট বারের সহ-সম্পাদক সাইফুর রহমান, ফরিদ উদ্দিন খান প্রমুখ।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিচারিক আদালত কর্তৃক সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যেখানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলো সেই একই সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আমাদের উচ্চ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন। মানুষ উচ্চ আদালতে যায় বিচার পাওয়ার জন্য, এবং সবসময় একটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। মৃত্যুদণ্ড সারা পৃথিবীতে আজ একটি বিতর্কিত বিষয়। কোনো নাগরিক বা মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে কিনা তা নিয়ে বির্তক চলছে। জঘন্যতম অপরাধ না হলে এবং সাক্ষ্য প্রমাণের সুস্পষ্টতা না থাকলে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় না। অথচ এক্ষেত্রে বিচারিক আদালত তাকে যাবজ্জীবন দেয়ার পর উচ্চ আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো। এ রায় দেখে আমরা রিভিউ করব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, এ রায়ের ব্যাপারে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক যা যা বলেছেন আইনজীবী হিসেবে আমি তার সাথে একমত। আর এ বিষয়ে আমার দলের বক্তব্য পরে জানানো হবে।