পরকীয়া বৈধ করা কতটা সম্মত?
অধ্যাপক সারওয়ার মো. সাইফুল্লাহ্ খালেদ: সব ধর্মেই পাপ বা অমঙ্গল যা-ই বলি না কেন, তা পরিত্যাজ্য। তাই সতীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা বিধান সব বিবেকবান পুরুষই করে থাকেন। বিবাহ-পূর্ব এবং বিবাহ-উত্তর নারী-পুরুষের জীবনে সততা সব ধর্মেই কাম্য। তাই সতীত্ব রক্ষায় পুরো জীবনে তাদের বেশভূষা ও আচরণ এর অনুকূলই হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় নারীকে আজ যেমনটা হতে হচ্ছে, তেমনি পদে পদে লাঞ্ছিতা, অপমানিতা এমনকি বাসে পর্যন্ত ধর্ষিতা হতে হবে এবং তা হচ্ছেও। রাজপথে নেমে প্রতিকার চেয়েও কোনো ফল হচ্ছে না
এবার ভারতে পরকীয়াকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের শাসন চলছে। অনুসন্ধান করে দেখা যাক, সনাতন ধর্ম বহুগামিতা অনুমোদন করে কিনা। সনাতন ধর্ম শাস্ত্রে আছে, ‘পঞ্চপাণ্ডবের মহাজননী কুন্তীর জীবন উভয় বিস্ময়কর উদাহরণস্থল। কুমারী অবস্থায় তিনি কানীনপুত্র কর্ণের জন্মদান করিয়াছেন। বিবাহিত জীবনেও তাহার পুত্রদের একজনও স্বামীর ঔরসজাত নহেন। কিন্তু তৎসত্ত্বেও কুন্তীর নিত্যস্মরণ মহাপাতকনাশী।’
অহল্যা দ্রৌপদী কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা/ পঞ্জকন্যা, স্মরোনিত্যম মহাপাতক নাশনং (আবুল হাসনাত, যৌনবিজ্ঞান, ১৯৬৩, পৃষ্ঠা ৪৬৬-৪৬৭)। আদি পর্বে পাণ্ডু বলিয়াছেন, উদ্দালকপুত্র শ্বেতকেতু একদিন পিতৃ-সমক্ষেই স্বীয় জননীকে অন্য পুরুষ কর্তৃক আকর্ষিত হইতে দেখিয়া এই অশ্রদ্ধেয় প্রথার অবসান ঘটান। মহাভারতে বলা হইয়াছে- ‘দুঃশীলঃ কামবৃত্তো বা ধনৈর্বা পরিবর্জিতঃ।/স্ত্রীণাং আর্যস্বভাবানাং পরমং দৈবতং পতিঃ’ -স্বামী দুঃশীল বা যথেচ্ছাচারীই হোন, স্ত্রীর নিকট তিনিই পরম দেবতা। সেদিন সাড়ম্বরে পতিপ্রণামের মহামন্ত্র বিঘোষিত হইল – ‘ওঁ নমঃ কান্তায় শান্তায় সর্বাদেবাশ্রয়ায় স্বাহা’। কিন্তু এক পক্ষের রাশ আলগা হইলে অন্য পক্ষের বজ্র-আঁটুনি ফস্কা-গেরোতেই পর্যবসিত হইবে তাহা মানবের ইতিহাসে বার বার প্রমাণিত হইয়াছে (আবুল হাসনাত, যৌনবিজ্ঞান, ১৯৬৩, পৃষ্ঠা ৪৬৭-৪৬৮)।
ইসলাম ধর্মে পরকীয়া প্রেম শুরু থেকেই অবৈধ। ভারতে ইসলাম ধর্মাবলম্বী প্রায় ১৮ কোটি।
মার্কসীয় দর্শন মতে, এককালে নারী বহু ভোগ্যাই ছিল। মাতৃতান্ত্রিক সমাজে ‘মায়ের অধিকার ছিল সমস্ত পুরুষের ওপর আর সে অধিকার সর্বাগ্রগণ্য’ (রাহূল সাংকৃত্যায়ন, ভোল্গা থেকে গঙ্গা, ১৯৯৬, পৃষ্ঠা ২৫)। এ মতানুসারে, সেকালে অবাধ যৌনাচার সিদ্ধ ছিল। তবে আধুনিক অনেক নৃবিজ্ঞানী মানব সমাজে কোনোকালে অবাধ যৌনাচারের প্রথা চালু ছিল বলে মানতে রাজি নন। তারা বলেন, জীব জগতে সবই জোড়ায় জোড়ায় চলে। আল কোরআনের একাধিক সূরার একাধিক আয়াতেও বলা হয়েছে ‘তিনি (আল্লাহ) সব কিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা আয যোখরুফ ৪৩ : আয়াত ১২)। অবাধ যৌন মিলনের ধারণা কাল্পনিক পৌরাণিক কাহিনী থেকে এসেছে বলে তারা মনে করেন। পরিণত বয়সে নর-নারীর পারস্পরিক আকর্ষণ যে প্রাথমিকভাবে প্রাকৃতিক ও যৌন প্রবৃত্তির তাড়নার বশীভূত ও শাশ্বত এবং কোনো নিয়মের বশীভূত নয়, তা না মেনে উপায় নেই।
শেক্সপিয়রের ‘টেম্পেস্ট’ নাটকেও এর উদাহরণ আছে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা রোধে একে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আধুনিক মানুষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব ঘটিয়েছে। মানুষের তৈরি নিয়ম যখন প্রকৃতি ও জৈব-ধর্ম বিকাশের অন্তরায় বলে কারো কাছে মনে হবে, তখন সেই নিয়মকে জীব মানুষ অতিক্রম করে গেলে তাতে আশ্চর্যের কী আছে? এ প্রবণতা ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সব ধর্মই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ধর্মীয় বিধান লংঘনে পাপ আছে। ধর্মীয় বিধান তাই পরকাল বিশ্বাসী আস্তিক মানুষের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ক্ষেত্রে মন, চোখ ও দেহের পর্দা নিয়ামক ভূমিকা পালন করে।
সনাতন ধর্মের মহাভারতে দেখা যায় ‘যথানিয়মে অগ্নিতে আহুতি দেবার পর যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীর পাণি গ্রহণ করলেন। পরবর্তী চার দিনে একে একে অন্য ভ্রাতাদেরও বিবাহ সম্পন্ন হয়। প্রত্যেক বার পুনর্বিবাহের পূর্বে ব্রহ্মর্ষি ব্যাস দ্রৌপদীকে এই অলৌকিক বাক্য বলতেন- ‘তুমি আবার কুমারী হও’। ‘পতিশ্বশুরতা জ্যেষ্ঠে পতিদেবরতানুজে।/ মধ্যমেষু চ পাঞ্চাল্যাস্ত্রিতয়ং ত্রিতয়ং ত্রিষু’ – জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির পাঞ্চালীর পতি ও ভাশুর হলেন, কনিষ্ঠ সহদেব পতি ও দেবর হলেন এবং মধ্যবর্তী ভ্রাতা প্রত্যেকে পতি, ভাশুর ও দেবর হলেন’ (রাজশেখর বসু, মহাভারত, ১৩৮৮ বঙ্গাব্দ, – সারানুবাদ, পৃষ্ঠা ৮৭)। এখানে যা দেখা যায়, তা হলো বিবাহযোগ্যা নারীর কৌমার্য অত্যাবশ্যক। সুতরাং সনাতন ধর্মেও বিবাহবহির্ভূত দৈহিক মিলন কাম্য নয়।
দ্রৌপদীর স্বামীরা ‘অনল ও সূর্যতুল্য প্রভাবান দিব্যরূপধারী, তাদের বক্ষ বিশাল, দেহ দীর্ঘ, মস্তকে স্বর্ণকিরীট ও দিব্য মাল্য, দেবতার সর্বলক্ষণ তাদের দেহে বর্তমান’ (ঐ সারানুবাদ, পৃষ্ঠা ৮৭)। কৃষ্ণের স্ত্রী সত্যভামা দ্রৌপদীর কাছে জানতে চান, ‘তোমার স্বামীরা লোকপালতুল্য মহাবীর জনপ্রিয় যুবক- এদের সাথে তুমি কিরূপ আচরণ কর’? দ্রৌপদী বলেন, ‘সর্বদা অহংকার ও কামক্রোধ ত্যাগ করে আমি সপত্নীদের সঙ্গে পাণ্ডবগণের পরিচর্যা করি। আমি সকল সুখভোগ ত্যাগ করে দিবারাত্র আমার কর্তব্যের ভার বহন করতাম, কোনও দুষ্ট লোকে তাতে বাধা দিতে পারত না। আমি চিরকাল সকলের আগে জাগি, সকলের শেষে শুই। সত্যভামা, পতিকে বশ করার এইসব উপায় আমি জানি, অসৎ স্ত্রীদের পথে আমি চলি না’ (ঐ পৃষ্ঠা ২৩২-২৩৩)। এখানে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যবোধ যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি দেখা যায় স্বীয় কর্তব্য নিষ্ঠা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য দ্রৌপদী অসৎ স্ত্রীদের এড়িয়ে চলতেন- তাই সততা তার ভূষণ।
হিন্দু পুরাণে দ্রৌপদীর রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয় ‘দ্রৌপদী আজন্ম যুবতী শ্যামবর্ণা, পদ্মপলাশলোচনা, নীল ও কুঞ্চিত কেশকলাপ ভূষিতা’ (সুধীরচন্দ্র সরকার, পৌরাণিক অভিধান, ১৪০৬ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা ২৪১)। দ্রৌপদী বীরভোগ্যা। যুধিষ্ঠির মনে করেন, ‘ধনঞ্জয়ের উপর এর বিশেষ পক্ষপাত ছিল’ (রাজশেখর বসু, মহাভারত, ১৩৮৮ বঙ্গাব্দ- সারানুবাদ, পৃষ্ঠা ৭৯)। দ্রৌপদী বহুভোগ্যা ছিলেন বলেই দুর্যোধন বিশ্বাস করতেন ‘দ্রৌপদীর অনেক পতি, তাকে অন্য পুরুষে আসক্ত করাও সুসাধ্য’ (ঐ পৃষ্ঠা ৮৮)। কিন্তু ইসলাম যে নারীর একাধিক স্বামী সমর্থন করে না, তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হলো পুরুষ নারী অপেক্ষা অধিক যৌনক্ষমতা সম্পন্ন। এর পারিবারিক ও সামাজিক ভিত্তির একটি হলো- একজন নারীর একাধিক স্বামী থাকলে তার পক্ষে খাপ খাইয়ে চলা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় এবং অপরটি হলো সন্তানের পিতৃ পরিচয় নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ এক পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকলে পিতা মাতার পরিচয় নির্ণয়ে কোনো জটিলতা থাকে না। উপরন্তু ইসলাম পিতা শনাক্তকরণের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সন্তান যদি তার পিতা-মাতার পরিচয় না পায়, তাহলে সে চরম মানসিক অশান্তিতে ভোগে।
মানসিক দিক থেকে এক জনের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেও মেয়েরা বিশেষ অবস্থায় স্বেচ্ছায় ও সানন্দে বহুজনকে দেহদানে অভ্যস্ত হতে পারে। বহু নারী দেহের সুচিতা থেকে মনের সুচিতাকে অগ্রাধিকার দেয়। যেমন সীতা বলেন, ‘মদধীনং তু যৎ তন্মে হৃদয়ং ত্বয়ি বতৃতে।/পরাধীনেষু গাত্রেষু কিং করিষ্যাম্যনীশ্বরী’- আমার অধীন যে হৃদয় তা তোমারই ছিল; কিন্তু যখন আমি নিজের কর্ত্রী নই, তখন পরায়ত্ত দেহ সম্বন্ধে কি করতে পারি? (ঐ পৃষ্ঠা ৩৮২)। স্বাধীন নারীর সতীত্ব রক্ষা তার নিজ আয়ত্তাধীন। পরাধীন অবস্থায় সে নিরুপায়। সীতা এটাই বলতে চেয়েছেন।
অগ্নিপরীক্ষা শেষে রাম যখন নিশ্চিৎ হলেন দেহের দিক দিয়ে যাই হোক রাবণ সীতাকে হৃদয়ের দিক দিয়ে আয়ত্ত করতে পারেনি তখন সানন্দে তাকে গ্রহণ করলেন। সীতা যখন রামকে বলেন- ‘সহ সংবৃদ্ধভাবেন সংসর্গেণ চ মানদ।/ যদি তেহহং ন বিজ্হাতা হতা তেনাস্মি শাশ্বতম্ – আমাদের দীর্ঘকাল সংসর্গ হয়েছে, পরস্পরের প্রতি অনুরাগ বৃদ্ধি পেয়েছে, এতেও যদি তুমি আমাকে না বুঝে থাক, তবে আমার পক্ষে তা চিরমৃত্যু’ (রাজশেখর বসু, রামায়ণ: ১৬৬/১০- সারানুবাদ, পৃষ্ঠা ৩৮২)।
সীতা এখানে অভ্যস্ততার কথাই বলেন। এ না হলে এ জগতে ক’জোড়া স্বামী স্ত্রী আজীবন একত্রে সংসার করতে পারত? তবে রাম স্ত্রীর বহুগামিতাকে অনুমোদন দেননি। তাই সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হলো। রাম দ্রৌপদীর মতো হোন এমন চাননি সীতা। ইসলাম ধর্মও সংসার জীবনে অনুমোদন দেয়। তবে দেহে এবং হৃদয়ে। দেহটি দেখা গেলেও হৃদয়টি দেখা যায় না। হৃদয় দেখা না গেলেও স্ত্রী স্বামীর কেনা দাসী নয়। স্বামী অপছন্দনীয় বা আনন্দদায়ক না হলে স্ত্রী বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারেন এবং পছন্দের পুরুষকে বেছে নিতে পারেন।
সে অনুমতি ইসলামে আছে। নারীর বহুগামিতা বা বহুবিবাহ ইসলাম অনুমোদন করে না। স্ত্রী ভুল করলে এবং তা বুঝতে পারলে বিবাহ বন্ধন অক্ষুণ্ন রেখেই তার সংশোধনের সুযোগদানের বিধান ইসলামে আছে। স্ত্রীর সংশোধন না হলে কিংবা তা না চাইলে অগত্যা বিবাহবিচ্ছেদ- তালাক। পুরুষের ব্যভিচারকেও ইসলাম অনুমোদন দেয়নি। পুরুষের বহুবিবাহের অনুমোদন দিলেও ইসলাম বিবাহবহির্ভূত নারী সংসর্গের অনুমোদন দেয়নি। পুরুষের পৌরুষ ভেদে সামর্থ্য থাকলে একের অধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে, যদি তার পক্ষে সবার প্রতি সমান কর্তব্য পালনে সক্ষম হয়। তা না পারলে একজনই যথেষ্ট।
সব ধর্মেই পাপ বা অমঙ্গল যা-ই বলি না কেন, তা পরিত্যাজ্য। তাই সতীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা বিধান সব বিবেকবান পুরুষই করে থাকেন। বিবাহ-পূর্ব এবং বিবাহ-উত্তর নারী-পুরুষের জীবনে সততা সব ধর্মেই কাম্য। তাই সতীত্ব রক্ষায় পুরো জীবনে তাদের বেশভূষা ও আচরণ এর অনুকূলই হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় নারীকে আজ যেমনটা হতে হচ্ছে, তেমনি পদে পদে লাঞ্ছিতা, অপমানিতা এমনকি বাসে পর্যন্ত ধর্ষিতা হতে হবে এবং তা হচ্ছেও। রাজপথে নেমে প্রতিকার চেয়েও কোনো ফল হচ্ছে না
ইসলামে নীতিগতভাবে একসাথে চার স্ত্রী রাখা সমর্থন করে বলে অনেকেই বহুবিবাহের উদাহরণ খুঁজতে গিয়ে মুসলিম সমাজের কথা উল্লেখ করেন। এখানে বহুবিবাহের শর্ত হলো আর্থিক, সামাজিক ও যৌনজীবনের পরিপ্রেক্ষিতে সব স্ত্রীকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে হবে। এ অবস্থান সৃষ্টি করা খুব কষ্টসাধ্য। তদুপরি প্রথম স্ত্রীর বিনানুমতিতে দ্বিতীয় বিবাহ করা যায় না বলেও শরিয়তে নির্দেশ রয়েছে। এ সব বিচার করলে ইসলামে বহুবিবাহের প্রতি সমর্থন খুব একটা আছে বলা যায় না। অধিকন্তু, শরিয়ত মোতাবেক প্রথম স্ত্রীকে উপেক্ষা করা যায় না।
আমরা দেখতে পেলাম সনাতন শাস্ত্র মতে এবং ইসলামে ব্যভিচার নিষিদ্ধ। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে/তুমি বিচিত্র-রূপিণী’। দুঃখ ও পাপের যুগ্ম সত্তাকে ইংরেজিতে বারষ বলে অভিহিত করা হয়, তারই বাংলা করেছি ‘অমঙ্গল’ (আবু সয়ীদ আইয়ুব, আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা ২১)। এরূপ ধারণার বশবর্তী হয়েই হয়তো পূর্ববর্তী সব সভ্যতাই নারীকে ‘শয়তানের যন্ত্র’ হিসেবে মনে করত। অথচ কোরআনে নারীকে ‘মুহসানা’ আখ্যা দিয়েছে যার অর্থ ‘শয়তান থেকে সুরক্ষিত’।
সব ধর্মেই পাপ বা অমঙ্গল যা-ই বলি না কেন, তা পরিত্যাজ্য। তাই সতীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা বিধান সব বিবেকবান পুরুষই করে থাকেন। বিবাহ-পূর্ব এবং বিবাহ-উত্তর নারী-পুরুষের জীবনে সততা সব ধর্মেই কাম্য। তাই সতীত্ব রক্ষায় পুরো জীবনে তাদের বেশভূষা ও আচরণ এর অনুকূলই হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় নারীকে আজ যেমনটা হতে হচ্ছে, তেমনি পদে পদে লাঞ্ছিতা, অপমানিতা এমনকি বাসে পর্যন্ত ধর্ষিতা হতে হবে এবং তা হচ্ছেও। রাজপথে নেমে প্রতিকার চেয়েও কোনো ফল হচ্ছে না। পুরুষ নারী উভয়কে আত্মসংযমী ও শালীন হতে হবে। সে সহজ ও কার্যকর পন্থা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই ইসলাম ধর্মে সবিস্তারে উল্লেখ করা আছে।
লেখক: অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার