আহমদ শফির বক্তব্যে তাদের জ্বলে কেন?
‘আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেও কোনো আপত্তি নেই’ বলে হেফাজতে ইসলামের আমির, হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা আহমদ শফি ‘মহা অন্যায়’ করে ফেলেছেন। হেফাজত নেতার বক্তব্যে বিএনপি-জামায়াতপন্থী দ্বীনি ভাইয়েরা খুব ক্ষুব্ধ। তারা বিভিন্ন কমেন্টে একেবারে যা-তা গালাগালি করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এখানে তিনি এমন কি অন্যায় কথা বলেছেন, যার জন্য তাঁকে গালি দিতে হবে?
এদেশে যারা আজকে বিএনপি, কালকে আওয়ামী লীগ, পরেরদিন জাতীয় পার্টির সাথে জোটবদ্ধ হন, তারা যখন আদর্শের কথা বলেন, তখন হাসিতে আমাদের মরণের অবস্থা হয়। যে ইসলামিক দলগুলো বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ থেকে আওয়ামী লীগের সাথে কেউ জোটবদ্ধ হলে আদর্শের নামে, ইসলামের নামে নিন্দা করেন, তাদের জন্য আরও বেশি হাসতে ইচ্ছে করে। ইসলামি বিচারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ব্যবধান কি?
হিসাব করে দেখুন, এদেশে ইসলামের মৌলিক কাজে আওয়ামীলীগ না বিএনপি বেশি অবদান রেখেছে? সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযুক্ত করে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বন্ধ করা, মদ-জুয়ার লাইসেন্স এদেশে বিএনপিই দিয়েছে, তা আমাদের ভুললে হবে না। তাই উভয়ের মধ্যেই হিসাবে প্লাস-মায়নাস রয়েছে। অবশ্য বিএনপি ইসলামের নামে যা করেছে তা মূলত করেছে জামায়াতের স্বার্থে এবং জামায়াতকে এদেশে প্রতিষ্ঠার জন্য। বিএনপির সময়েও আলেম-উলামা জেলে ছিলেন, যেমন আওয়ামী লীগের সময়ও ছিলেন। চার দলের নামে প্রতিষ্ঠিত দু’ দলের সরকারের সময়ই শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হককে আপমান করেছে। তাঁকে উপেক্ষা করেছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আল্লামা আহমদ শফি কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তিনি একজন পির ও শিক্ষাবিদ। তিনি মাদরাসাগুলোর অভিভাবক। তিনি হেফাজতে ইসলামের নামে ময়দানে এসেছিলেন সরকারের বিরুদ্ধে নয় এবং তা সরকার বিরোধী কোন আন্দোলনও ছিলো না। তিনি নিজেও তখন বলেছেন, আমাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, আমরা লড়াই করছি নাস্তিক-মুরতাদদের বিরুদ্ধে। তিনি যখন মাঠে এসেছিলেন, তখন সমস্ত বাংলাদেশ গণজাগরণ মঞ্চের নামে ছিলো কিছু নাস্তিক-মুরতাদের নিয়ন্ত্রণে। তিনি মাঠে আসার পর ওরা পালিয়েছে। তাঁর দাবি ছিলো ১৩ দফা। মানুষ যা দাবী করে তার সব পায় না। তবে কিছুটা নিয়ে সমাধানে যেতে হয়। শেখ হাসিনা সরকার সেদিন তাঁকে যে সকল ওয়াদা দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে বাধ্য করেছিলেন- তার কিছু হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে। বিশেষ করে নাস্তিক-মুরতাদদের নিয়ন্ত্রণ এবং শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি শেখ হাসিনা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছেন।
কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দীর্ঘদিনের একটি দাবি ছিলো। বিএনপি সরকারের সময় শায়খুল হাদিসের নেতৃত্বে অনশন ধর্মঘট করেও কোন লাভ হয়নি। শেখ হাসিনা তাঁর ওয়াদানুসারে তা বাস্তবায়ন করেছেন। এজন্য কওমি মাদরাসার অভিভাবক হিসাবে তিনি শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি যদি তা না করতেন, তবে সেটি হতো অকৃতজ্ঞতা। কওমি মাদরাসার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে ধন্যবাদ জানানো উচিৎ বলে আমরা মনে করি।
আল্লামা আহমদ শফি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ‘অনেকে অনেক বাজে পরামর্শ দিয়েছে, বিরোধিতা করেছে, শেখ হাসিনা সেসব কথা শুনেননি। আমাকে দেওয়া ওয়াদা তিনি রেখেছেন, কওমি স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমি শেখ হাসিনার শোকরিয়া আদায় করছি।’ (দ্য বাঙাল)
মিডিয়ার সংবাদ অনুযায়ী, ১ অক্টোবর মইনূল ইসলাম হাটহাজারীর ছাত্র মিলনায়তনে বেফাক ও আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশের ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মুমতাজপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম বিভাগের কৃতি শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ এবং কওমি মাদরাসার ঐতিহ্য ও অবদান শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আল্লামা শফি আরও বলেন, ‘অনেকে বলে আমি আওয়ামী লীগ হয়েগেছি- ‘কমবক্ত’ (দুর্ভাগা), মিথ্যে কথা বলছ। উনি আমাকে মহব্বত করে স্বীকৃতি দিয়েদিছেন। আমিও আওয়ামী লীগ হইনি। ওটা আপনাদের ভুল ধারণা। কথাবার্তা বলছেন, সত্য-মিথ্যা যাচাই করে বলবেন। কী করে বলছেন, আমি আওয়ামী লীগ হয়ে গেছি! তবে ‘আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেও কোনো আপত্তি নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এমন এমন মানুষ আছেন, যারা দ্বীনকে ভালোবাসেন, আমাদেরকে মোটা অঙ্কে মাদরাসায় সাহায্য করেন, মোটা অঙ্কের সাহায্য। সে জন্য ইনি আওয়ামী লীগ, উনি বিএনপি? এসব অপপ্রচার করে আল্লাহর কাছে কী জবাব দেবেন।’
এই কথাগুলোর মধ্যে আহমদ শফি আপত্তিকর এমন কী বললেন, যে কারণে আমাদের বিএনপিপন্থী দ্বীনি ভাইদের গায়ে আগুন লেগে যাওয়ার উপক্রম হলো?
-Syed Mobnu এর টাইমলাইন থেকে