আল্লামা শফীকে নিয়ে মাহমুদুর রহমানের সত্যের বিকৃতি

রশীদ জামীল: গণজাগরণ, হেফাজতের জাগরণ এবং আমার দেশ’র মরণ; তিনটাই অনিযার্য ছিল। একটির আরেকটির সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না, আবার তিনটাই ছিল একই সূত্রে গাঁথা। এই সহজ ব্যাপারটি বুঝবার জন্য কাউকে ইমাম গাজালি কিংবা আইন্সটাইন হতে হয় না।

কাদের মোল্লার ফাসিকে যাবজ্জীবনে বদলে দেওয়ার রায়কে জামাত-আওয়ামী লীগ আঁতাতের ফসল স্লোগান দিয়ে শাহবাগের উত্থান ছিল। শাহবাগ-সংশ্লিষ্ট কিছু বখাটে ব্লগারের নীতি ও নৈতিকতা বিবর্জিত কথাবার্তার প্রতিবাদে ছিল হেফাজতের উত্থান।

আর হেফাজতের গায়ের রক্ত গরম করতে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিল মাহমুদুর রহমানের আমার দেশ; সোনার সাথে রঙ মিশিয়ে।

মাহমুদুর রহমান লিখেছেন, ‘আলেমদের রক্তে যে ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রীর হাত রঞ্জিত তার কাছ থেকে সনদ কিংবা মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ অবশ্যই ইসলামের বাণীর পরিপন্থী। ভাইয়ের হত্যাকারীর কাছ থেকে কোন মুমিন মুসলমান ভিক্ষা নিতে পারে না।’ এখানে মাহমুদুর রহমান সাহেব হেফাজত আর কওমি সনদকে একসাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। এই কাজটি আরো অনেকেই করে থাকেন। অথচ, হেফাজত এবং সনদ সম্পূর্ণ আলাদা দুটি ব্যাপার।

যে যার নীতিতে এবং আপন গতিতেই আগাচ্ছিল। হেফাজতের যাত্রা ছিল ডেস্টিনির হাতে, বাকিরা ছিল যার যার ডেস্টিনেশনের যাত্রী। যে কারণে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও প্রতিফলে খুব একটা তারতম্য পরিলক্ষিত হয়নি।

দুই
মাহমুদুর রহমান কখনই আমার পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন না। অপছন্দও করতাম না তাঁকে। তবে ৫ অক্টোবর ২০১৮ তাঁর লেখাটি পড়ে বুঝলাম কেউ কেউ কেন তাঁকে বাইচান্স সম্পাদক বলে।

আজ তিনি যেভাবে নিজেকে উন্মুক্ত করলেন, তাতে আমি মোটেও অবাক হইনি। কওমি অঙ্গনের সেই ভাইবন্ধুগণ, যারা একসময় মাহমুদূর রহমানকে খালিদ বিন ওয়ালিদ ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলেন এবং তাঁকে ডিফেন্স করাকে ঈমানি দায়িত্ব ভাবতেন; তাঁরা একটু অবাক হচ্ছেন কিনা- আমি জানি না।

অর্ধেক সত্য মিথ্যার চেয়েও মারাত্মক। মিথ্যা মানুষকে ততটা বিভ্রান্ত করে না, যতটা করে অর্ধেক সত্য। মাহমুদুর রহমান তাঁর লেখায় সত্যমিথ্যার যে কাসুন্দি গাইলেন, তাতে সঙ্গতকারণেই তাঁর পরীক্ষিত বন্ধু জামাত খুশি হয়েছে। যে কারণে সরাসরি জামাত এবং জামাতের উচ্ছিষ্টভোজীরা মাহমুদুর রহমানের লেখাকে প্রচার করে বেড়াবে, স্বাভাবিক কথা।

কিন্তু কওমি অঙ্গনের কেউ কেউ যদি আবেগের ঠেলায় মাহমুদুর রহমানের হয়ে জামাতের পারপাস সার্ভ করতে শুরু করে দেন, তাহলে তাদের কী বলা যায়?

তিন
মাহমুদুর রহমানের লেখাটিতে সাংবাদিকতার মৌলনীতি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। নিউজ হোক আর মন্তব্য প্রতিবেদন হোক, উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে শুধু কথা নয়, অ্যাক্সপ্রেশন এবং মোটিভও সামনে আনতে হয়।

মাহমুদুর রহমান সেটা জেনেবুঝেই পাশ কাটিয়েছেন। পাশাপাশি লেখাটি যে তিনি একটি একপেশে অবস্থান থেকে লিখে নিজের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন, সেই ব্যাপারটিও লুকাতে পারেননি। সেইসঙ্গে তাঁর লেখাটি তাথ্যবিভ্রাটেও ভরপুর।

তিনি বললেন, ‘গণ-জাগরণ মঞ্চের আয়োজক কথিত ব্লগারগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধকে উপলক্ষ্য করে নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশে ইসলামের মহান নবী হযরত মোহাম্মদ সা. কে কটুক্তি করলে আলেম সমাজের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সেই প্রতিক্রিয়া থেকেই হেফাজতে ইসলাম জন্মলাভ করে এবং আল্লামা শফী সংগঠনের নেতৃত্বে আসীন হন।’

এখানে তিনি দুইটা তথ্য দিয়েছেন।
১. গণ-জাগরণ মঞ্চের আয়োজক কথিত ব্লগারগোষ্ঠীর কটুক্তি।
২. সেটাকে কেন্দ্রকরে হেফাজতে ইসলামের জন্ম গ্রহণ।

দুটিই অসত্য কথা। হেফাজতের জন্ম ২০১৩তে নয়, ২০১০ সালে। আর গণ-জাগরণ মঞ্চের কথিত ব্লগারগোষ্ঠীর যে কটুক্তিগুলো আমারদেশ পত্রিকা ২০১৩তে প্রকাশ করেছিল, সেগুলো, সবগুলোই ছিল পুরনো।

আমরা তখন ব্লগেই সেগুলোর প্রতিবাদ করেছি। দিনের পর দিন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়েছে। কথার জবাব কথা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা সেখানেই তাদেরকে চেপে ধরেছি।

সঙ্গত কারণেই বাইরে সেগুলো নিয়ে কথা বলিনি, তাদের জন্য জার্মানি, সুইজারল্যান্ডের টিকেটের ব্যবস্থা করে দিতে চাইনি বলে।

চার
মাহমুদুর রহমানের লেখায় নৈতিক শিষ্টাচারের অনুপস্থিতিটাও ছিল প্রকট। তিনি সত্যকে খণ্ডিত আকারে বিকৃত করেছেন। তিনি জেনেবুঝেই আল্লামা শফীর কথাগুলোকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন। সেখানটায় পরে আসছি।

তিনি বলেছেন, ‘কথিত সেক্যুলার সরকার এবং সেই সরকারের জালিম প্রধানমন্ত্রীর সাথে আল্লামা শফীর বর্তমান মাখামাখি দেশবাসীকে সম্পূর্ন ভিন্ন বার্তাই দিচ্ছে।’

একটু আগেই আল্লামা শফি সম্বন্ধে তার অভিধা ছিল ‘অত্যন্ত সম্মানিত, প্রবীণ, পরহেজগার এবং জ্ঞানী মানুষ। কিন্তু একটু পরেই যখন সেই একই ব্যক্তি সম্বন্ধে তাঁর পরিভাষাটা হয়, ‘হাসিনার সাথে মাখামাখি’-টাইপ, তখন কি কারো বুঝতে আর বাকি থাকে কার নাড়ির টান কোনদিকে?

পাঁচ
মাহমুদুর রহমান আল্লামা শফির কাছে একটি প্রশ্ন রেখেছেন। তার ভাষায়,

‘আল্লামা শফীর কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন, মহানবী হযরত মোহাম্মদ সা. এর অপমানের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা সংগঠন, হেফাজতে ইসলামের জন্য চানক্য নীতি অনুসরণ করা কী জায়েজ..?’

মাহমুদুর রহমান অত্যন্ত নীচ মানসিকতার পরিচয় দিলেন কওমি সনদকে ভিক্ষার সাথে তুলনা করে। এটাকে তাঁর অজ্ঞতা বলব, নাকি অন্তঃজ্বালার বহিঃপ্রকাশ বলব, নাকি বারবার মাথায় আঘাত প্রাপ্তির কারণে মানসিক ভারসাম্যহীনতা বলব, বুঝতে পারছি না।

মাহমুদুর রহমানের এই প্রশ্ন থেকে সন্দেহ জাগে, চানক্য কে এবং তার নীতিটাইবা কী, সেই সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা তিনি রাখেন কিনা!

প্রাচীন ভারতীয় একজন দার্শনিক ছিলেন চানক্য, যাকে কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত নামেও ডাকা হতো। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তাঁর পাণ্ডিত্যের জন্য তাকে ভারতের ম্যাকিয়াভেলিও বলা হত।

ম্যাকিয়াভেলি ( Niccolò di Bernardo dei Machiavelli) ছিলেন ইউরোপীয় নবজাগরণ যুগের একজন রাজনৈতিক দার্শনিক, সঙ্গীতকার, কবি এবং রোমান্টিক কমেডি ধাঁচের নাট্যকার। তিনি ছিলেন ইতালীয় রেনেসাঁসের অন্যতম পুরোধা এবং রেনেসাঁকালীন রাজনৈতিক পরিবর্তনের রূপকার।

মাহমুদুর রহমান বলেছেন, হেফাজত চানক্যনীতি অনুসরণ করছে। চানক্যের অন্যতম মৌলিক নীতিকথা ছিল,
১. নিজের কোনো সমস্যার কথা সর্ব সমক্ষে না বলা।
২. নিজের জীবনের আর্থিক ক্ষতির কথা কাউকে না জানানো।
৩. অবহেলিতদের থেকে অপমানিত হওয়ার কথা গোপন রাখুন।

এর কোনটি আল্লামা আহমদ শফি অনুসরণ করছেন? এর কোনটি হেফাজতে ইসলামের সাথে যায়? আহমদ শফিকে করা প্রশ্নের জবাবে কেউ কি মাহমুদুর রহমানকে এই পালটা প্রশ্নটি করে দেখবেন?

ছয়
এবার আসি তাঁর অর্ধসত্য বক্তব্যে। একটি কথাকে কীভাবে বিকৃত করা যায়, সেটা করে দেখালেন মাহমুদুর রহমান সাহেব। তিনি বললেন, ‘আল্লামা শফী বলছেন যে তিনি আওয়ামী লীগ হয়ে গেলে কোন সমস্যা নাই!’

একটি ডাহা মিথ্যা কথা। আহমদ শফি মোটেও এ কথা বলেননি। মাহমুদুর রহমান নিজেও সেটা জানেন। আহমদ শফির কথাটি ছিল এমন,(হুবহু কোট)

‘কেউ কেউ বলে, আমি আওয়ামী লীগ হইয়া গেছি। কমবখতো, মিথ্যা কথা বইলতেছো। আমি আওয়ামী লীগ হই নাই। ঐটা আপনাদের ভুল। কথা বইলতেছেন, বলার সময় মিথ্যা কথা সত্যকথা যাচাই করে বইলবেন। কী করে বইলতেছেন আমি আওয়ামী লীগ হইয়া গেছি!! আর আওয়ামী লীগ হইয়া গেলেও কোনো আপত্তি নাই! কারণ, আওয়ামী লীগের মাঝেও এমন এমন মানুষ আছে, যারা দ্বীনকে ভালবাসে। আমাদেরকে মোটা অংকে মাদরাসায় সাহায্য করে। সেই জইন্য, উনি আওয়ামী লীগ, উনি বিএনপি, উনি এই… এই কথা বইলা বইলা আল্লাহর কাছে কী জবাব দিবেন আমাকে বলেন?

এখানে বক্তব্যের আগের অংশ এবং পরের অংশ থেকে এই অ্যাক্সপ্রেশন মোটেও সামনে আসে না যে, আহমদ শফি বলছেন, আমি আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেও আপত্তি নাই। বক্তব্যের ম্যাসেজটি খুবই পরিষ্কার ছিল। মাহমুদুর রহমান এখানে ইচ্ছা করেই সত্যের বিকৃতি ঘটালেন।

আল্লামা আহমদ শফি সম্পর্কে মাহমুদুর রহমান বললেন, ‘শেখ হাসিনার মহব্বতে এবং ‘মোটা অংকের’ অনুদানে যিনি আদর্শচ্যুত হন প্রবীণ বয়সের কারনে তাকে কেবল করুণা করা চলে।’

এখানেও তিনি কথাটিকে কথার নিজস্ব অবস্থান থেকে দূরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। মাদরাসায় অনুদান আর ব্যক্তি অনুদান এককথা না। বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো সাধারণত জনগণের অনুদাননির্ভর।

অনুদানদাতাদের মধ্যে কেউ করে আওয়ামীলীগ, কেউ করে বিএনপি বা অন্য দল। আহমদ শফি সেটাই বলেছেন। কথার মারপ্যাছে কথাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা একটি অনৈতিক কাজ। সেটিই করলেন মাহমুদুর রহমান।

সাত
মাহমুদুর রহমান লিখেছেন, ‘আলেমদের রক্তে যে ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রীর হাত রঞ্জিত তার কাছ থেকে সনদ কিংবা মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ অবশ্যই ইসলামের বাণীর পরিপন্থী। ভাইয়ের হত্যাকারীর কাছ থেকে কোন মুমিন মুসলমান ভিক্ষা নিতে পারে না।’

এখানে মাহমুদুর রহমান সাহেব হেফাজত আর কওমি সনদকে একসাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। এই কাজটি আরো অনেকেই করে থাকেন। অথচ, হেফাজত এবং সনদ সম্পূর্ণ আলাদা দুটি ব্যাপার।

হেফাজত একটি ধর্মীয় সংগঠন। কওমি সনদ একটি শিক্ষাব্যবস্থার সাথে রিলেটেড বিষয়। হেফাজতের সাথে ২০১৩তে যা হয়েছে, সেটার সাথে সনদের কোনোই সম্পর্ক থাকতে পারে না।

শাপলা ট্র্যাজাডির কারণে সনদের মান গ্রহণ না করার কোনো যুক্তিই থাকতে পারে না। তার মানে এই না যে, এর মাধ্যমে শাপলার দায়মুক্তি হয়ে যাচ্ছে অথবা শাপলার কথা ভুলে যেতে হবে।

মাহমুদুর রহমান অত্যন্ত নীচ মানসিকতার পরিচয় দিলেন কওমি সনদকে ভিক্ষার সাথে তুলনা করে। এটাকে তাঁর অজ্ঞতা বলব, নাকি অন্তঃজ্বালার বহিঃপ্রকাশ বলব, নাকি বারবার মাথায় আঘাত প্রাপ্তির কারণে মানসিক ভারসাম্যহীনতা বলব, বুঝতে পারছি না।

ঠিক এই কথাটি মাহমুদুর রহমান সাহেবের বিএনপি এবং তাঁর কলিজার টুকরা জামাতের লোকজনও বলে থাকেন। অবাক হই তাদের মগজের পরিমাণ দেখে।

কেউ আমার ভাইকে হত্যা করল। আমি দুর্বল বলে বিচার পাচ্ছি না। আবার সেইলোকের কাছে আমার উত্তরাধিকারসূত্রে কিছু পাওনা আছে। কিছুদিন পর লোকটি আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল, এই নাও, তোমার পাওনা তোমাকে বুঝিয়ে দিলাম।

ভাই হত্যার কারণে তার প্রতি আমার ক্ষোভ আছে। কিন্তু তাই বলে আমি আমার পাওনা বুঝে নিতে যাব না- এটা কেমন কথা।

হেফাজত হেফাজতের যায়গায়। সেটা নিয়ে ভাববে হেফাজত নেতৃত্ব। শাপলা শাপলার স্থানে। কোনো এক সময় সময়ই সেটা নিয়ে কথা বলতে পারে। এগুলোর সাথে কওমি সনদের কোনো সম্পর্ক নেই, থাকতেও পারে না।

আট
শুরুতেই বলেছি, মাহমুদুর রহমান কখনই আমার পছন্দের কেউ ছিলেন না। তবে, বারবার অত্যাচারিত হওয়ার কারণে মানুষটির প্রতি বিশেষ একটা সিম্পেতি কাজ করত।

আজ তিনি সেটাও শেষ করে দিলেন। প্রমাণ করলেন, তিনি ইসলাম আর মুসলমান বলে যা বলেন, সেটা তাঁর নিজের জন্যেই বলেন, অথবা বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর হয়ে।

তিনি বাবুনগরীকে নির্যাতনের কথা বলেছেন। ভালো লেগেছে। বাবুনগরীর জন্য আমরা ব্যথিত ছিলাম তখন থেকেই। এখনও আছি। আমরাও বলে থাকি, হেফাজতের কারণে সবচে’ বেশি নির্যাতিত মানুষটির নাম জুনাইদ বাবুনগরী।

কিন্ত মাহমুদুর রহমান যখন ‘বাবুনগরীকে নির্যাতন এবং শাপলা শহীদদের রক্তের চেয়েও কীভাবে আজ শিক্ষার সনদের মূল্য বেশি হয়ে গেল’- এই প্রশ্ন তুলেন, তখন তাঁর এই কথাগুলোকে আমরা আর সমবেদনার কাতারে গন্য করতে পারি না। সেটাকে তখন সাপেকাটা সেই রোগীর কথার মতোই শোনায়,-

কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কীসে/কভু আশীবিষে দংশেনি যারে।

নয়
‘মাহমুদুর রহমান হেফাজতের জন্য কী না করেছেন। হেফাজতের আন্দোলনকে এককভাবে মিডিয়া কভারেজ দিয়েছেন। নিজের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে হেফাজতকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন’- এমন কথা অনেক শুনেছি আমরা।

কিচ্ছু বলিনি। বলিনি কারণ, হেফাজত তখন আপাদমস্তক মাহমুদুর রহমানে বুদ্বুদ ছিল। তখন অনেকের পক্ষেই হজম করা মুশকিল হত। আজ একটু বলা যায়। আজ বিশ্বাস করা সহজ হবে।

মাহমুদুর রহমান পরিকল্পিতভাবেই বখাটে ব্লগারদের পুরনো ফাইজলামীগুলোকেও একটি সুবিধাজনক সময়ে সামনে নিয়ে এসেছিলেন।

শাহবাগ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইছিল, যে বিচারের সাথে কওমি অঙ্গনের কোনো বিরোধ ছিল না, তেমন একটা সময়ে তিনি বাংলাদেশের কওমি অঙ্গনকে আন্দোলিত করে তুলেছিলেন। আর এটা তিনি তখন কার স্বার্থে করেছিলেন, আজ আশাকরি কারো বুঝতে কোনো সমস্যা থাকছে না।

ঠিক যে কারণে আমরা বলি, শাহবাগের জমায়েত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শুরু হলেও সেটার ফসল আওয়ামী লীগের গোলায় ওঠছিল বলে শাহবাগের আন্দোলনের লাগামটি আওয়ামী লীগ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছিল, ঠিক একই কারণে হেফাজতের আন্দোলন আল্লাহ এবং রাসুলের মহব্বতে শুরু হলেও মাহমুদুর রহমানরা আন্দোলনের ফসলটি জামাতের গোলায় তুলে দিতে এমন কোনো কসরত নেই যে তখন করেননি।

আর যে কারণে অনেকেই আমার সাথে একমত না হলেও যে কথাটি আমি বিশ্বাস করি, সেটিহল, ২০১৩’র হেফাজত বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামকে অনেক এগিয়ে দেয়নি, বরং অনেক বছর পিছিয়ে ছেড়েছে। কত বছর পেছনে, সেটা সময়ই বলে দেবে।

দশ
কথা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। শেষ করা দরকার। মাহমুদুর রহমান যদি কওমি সনদ অথবা হেফাজত, যে কোনো একটি নিয়ে আলোচনা করতেন, তাহলে তাঁর বেশিরভাগ কথার সাথেই হয়ত আমি সহমত জানাতে পারতাম।

তিনি যদি শুধু হেফাজত নিয়ে লিখতেন এবং সেই লেখায় হেফাজত নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা এবং হেফাজতের ভেতরে থাকা বিশেষ কারো কারো কর্তৃত্ব নিয়ে কথা বলতেন, আমি বলতাম, ‘ঠিক বলেছেন বস। আই’ম উইথ ইউ’।

তিনি যদি কওমি সনদ নিয়ে লিখতেন, আর সেই লেখায় বলতেন, কওমি সনদ একটি অধিকার ছিল। শেখ হাসিনা সেই অধিকার দিয়েছেন। এটা কোনো দয়ার দান নয়।

সুতরাং এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানানোই যায়। কিন্তু ঘটা করে সংবর্ধনা দেওয়ার চিন্তাভাবনা রীতিমত বাড়াবাড়ি, তাহলে আমি বলতাম, থাংক ইউ বস, আই’ম উইথ ইউ।

কিন্তু তিনি ডাল আর চাল এককরে যে বিস্বাদ খিচুড়ি পাঁকালেন, সেটা তো মানুষের পক্ষে হজম করা মুশকিল।

– লেখক: আমেরিকা প্রবাসী আলেম ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button