ঘূর্ণিঝড় মাইকেলে লণ্ডভণ্ড ফ্লোরিডা
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে শত শত বাড়িঘর ও গাছপালা উপড়ে নিয়ে প্রলয় তাণ্ডব চালিয়েছে দানবীয় ঘূর্ণিঝড় মাইকেল। স্মরণকালের মধ্যে তৃতীয় শক্তিশালী চার মাত্রার এ হারিকেনের আঘাতে সমুদ্র তীরবর্তী শহরগুলোতে তাৎক্ষণিক বন্যা দেখা দেয়। এতে শিশুসহ কমপক্ষে দু’জন নিহত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় ফ্লোরিডার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্যানহ্যান্ডেলে আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে এটি অ্যালাবামা ও জর্জিয়ার দিকে এগিয়ে গেছে। তবে তার আগে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে গেছে ফ্লোরিডার পানামা সিচি বিচ ও কিটন বিচ এলাকা। ফ্লোরিডায় আঘাত হানার আগে এটি মধ্য আমেরিকার দেশগুলোতেও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ঘূর্ণিঝড়টির তাণ্ডবে নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস ও এল সালভাদরে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নাগাদ এটি ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে। রোববার ক্রান্তীয় নিম্নচাপ হিসেবে শুরু হওয়া ঝড়টি মঙ্গলবারই দুই মাত্রার হারিকেনে পরিণত হয়। বুধবার ঘণ্টায় ১৫৫ মাইল গতির বাতাস নিয়ে আঘাত হানার সময় এর মাত্রা ছিল পাঁচের কাছাকাছি। মাইকেলের নিয়ে আসা তীব্র বাতাসে গাছ উপড়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলীয় এলাকার প্রায় আড়াই লাখ বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কার্যালয়গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। উপড়ানো গাছপালার নিচে চাপা পড়েছে শত শত গাড়ি। ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে ফ্লোরিডার ৩ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হলেও অনেকেই সে নির্দেশ না মানায় মাইকেল আঘাত হানার আগেই নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। বন্যা ও ঝড়ের সময় তাদের কী অবস্থা হয়েছে এখনও পুরো খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান তারা।
১৯৬৯ সালে মিসিসিপি ও ১৯৩৫ সালে লেবার ডেতে ফ্লোরিডায় আছড়ে পড়া ঝড়ের পর মাইকেলই যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।
ফ্লোরিডার মেক্সিকো বিচের কাছে বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে হারিকেনটি আঘাত হানে বলে জানায় এনএইচসি। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আগেই ফ্লোরিডা, অ্যালাবামা, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ফ্লোরিডার কিছু কিছু অংশে ১৪ ফুট পর্যন্ত ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে এবং ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের কারণে তাৎক্ষণিক বন্যা দেখা দিতে পারে বলেও আগেই সতর্ক করা হয়েছিল।
বুধবার রাতের দিকে ঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ে। বাতাসের গতি নেমে যায় ঘণ্টায় ৯০ মাইলে।
বুলেটিনে এনএইচসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকাগুলো অতিক্রমের সময় ঝড়টি আরও দুর্বল হয়ে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে এটি ক্রান্তীয় ঝড়ে পরিণত হতে পারে। শুক্রবার এটি পূর্ব উপকূল ছেড়ে যেতে পারে। রেকর্ড অনুযায়ী, এর আগে ফ্লোরিডার প্যানহ্যান্ডেলে চার মাত্রার কোনো ঝড় আঘাত হানেনি বলে জানিয়েছেন এনএইচসির আবহাওয়াবিদ ডেনিস ফেল্টজেন।
ফ্লোরিডা, অ্যালাবামা, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলইনায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ ও ইউনিভার্সিটি পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় নিয়োগ করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার ন্যাশনাল গার্ড ট্রুপ।