বিশ্বের বৃহত্তম পাখির তকমা পেল ব্রিটিশদের ‘টাইটান’
বিজ্ঞানীদের লড়াই শেষ
এক শতকেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা ফরাসি-ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের ‘পাখির লড়াই’ থামল অবশেষে। ফরাসি বিজ্ঞানীদের দাবি করা সবচেয়ে বড় পাখি ‘এলিফ্যান্ট বার্ড’ বা ম্যাক্সিমাসকে পেছনে ফেলে শেষ পযর্ন্ত বিশ্বের বৃহত্তম পাখির তকমা পেল ব্রিটিশদের ‘টাইটান’ পাখি। গোটা পাখি সমাজকে ছাড়িয়ে এ যেন শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছিল ব্রিটিশ আর ফরাসি বিজ্ঞানীদের মধ্যে। তারই অবসান হলো এতদিনে।
হাজার বছর আগের কথা। সাভানা ও মাদাগাস্কারের গহীন বৃষ্টি অরণ্যে তখন হামেশাই দেখা মিলত বিশালাকার পাখি ‘এলিফ্যান্ট বার্ড’ বা ‘অ্যাপিওরনিস ম্যাক্সিমাস’র। সেখানে ছয় কোটি বছরের বেশি সময়ের বসবাস ছিল তাদের। কিন্তু মানুষের শিকার হতে হতে এক সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বিশাল আকৃতির অথচ নিরীহ প্রকৃতির এই পাখিটি। ওরা কেবল আকারেই বড় ছিল, কিন্তু একটু ‘গাধা’ কিছিমের আর শক্তি সামর্থ্য কম হওয়ায় প্রায়ই প্রতিপক্ষের সহজ শিকারে পরিণত হতো। কখনো বুক চিতিয়ে লড়াই করতে জানত না।
ফরাসি বিজ্ঞানীদের দাবি ছিল, এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি। যদিও ১৮৯৪ সালেই ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন ‘অ্যাপিওরনিস ম্যাক্সিমাস’র চেয়েও বড় ছিল ‘অ্যাপিওরনিস টাইটান’। বিজ্ঞানী সি ডাব্লিউ অ্যান্ড্রুর দাবি ছিল, সেটিই সবচেয়ে বড় পাখি। কিন্তু ফরাসি প্রতিপক্ষরা ভিন্ন সুরে বলতে থাকেন, এটা ঢাহা মিথ্যা! একটু বড়সড় চেহারার ‘ম্যাক্সিমাস’কেই নতুন নাম দিয়ে ‘টাইটান’ বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। যা গুরুতর অন্যায়।
ফরাসিদের এমন তোপের মুখেও ব্রিটিশরা টাইটানকে নিয়ে তাদের দাবির পক্ষে গবেষণা চালিয়ে যান। সেই সঙ্গে পাখিটির কঙ্কাল আর জীবাস্ম দিয়েও চলতে থাকে বিস্তর পরীক্ষণ ও পযাের্লাচনা। দীঘির্দন ধরে ম্যাক্সিমাস নাকি টাইটান? এই নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকে। এ যেন পাখিদের ছাড়িয়ে ব্রিটিশ আর ফরাসিদের মযার্দা আর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।
সম্প্রতি ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা দাবি করলেন, এলিফ্যান্ট বার্ড-এর অন্য একটি প্রজাতি আকারে আরও বড় ছিল। সেটির ওজন ছিল প্রায় ৮৬০ কিলোগ্রাম, প্রায় একটা জিরাফের সমান। ‘জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন’ বিজ্ঞানী জেমস হ্যান্সফোর্ড বলেন, ‘‘এটি সম্পূর্ণ একটি আলাদা প্রজাতি। নাম রাখা হয়েছে ‘ভোরোম্বে টাইটান’। অন্তত তিন মিটার, অর্থাৎ ১০ ফুট উচ্চতা। ওজন ছিল গড়ে সাড়ে ৬০০ কেজি। তবে যে হাড়গুলো মিলেছে, তা থেকে অনুমান, কিছু পাখির ওজন ৮৬০ কেজিও ছিল। এখন পযর্ন্ত এটিই সব চেয়ে বড় পাখি।” হ্যান্সফোর্ডের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্সে’।
জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের বিজ্ঞানী স্যামুয়েল তুর্ভে বলেন, ‘পৃথিবী থেকে প্রতিদিন হাজারো প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যা আমাদের শঙ্কা জাগায়। যেসব প্রজাতির পাখিগুলো এখন হুমকিপ্রাপ্ত তাদের কীভাবে রক্ষা করা যায়, তা নির্ধাারণ করার সময় এসেছে। তার মতে, সাভানা ও মাদাগাস্কারের মতো অনেক গহীন অরণ্যে এখনো অনেক বিলুপ্তপ্রায় হরেক প্রজাতির পাখি রয়েছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থেই তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ ছাড়া জীববৈচিত্র্যের ইতিহাসও আমাদের সবার জেনে রাখা জরুরি।