দীর্ঘদিন পর আবার আনোয়ার ইব্রাহিমের ‘ফেরা’

দীর্ঘদিন পর আবার মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে প্রবেশ করেছেন দেশটির প্রবাদপ্রতীম রাজনীতিক আনোয়ার ইব্রাহিম। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেন ৭১ বছর বয়সী এই রাজনীতিক। শীঘ্রই হয়তো মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদেও দেখা যাবে তাকে। সোমবার এমপি হিসেবে শপথ নিয়েই আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, ‘আমি প্রমাণ করেছি’।

গত বিশ বছরের প্রতিকূল সময়ে সর্বদা নিজের নীতি আর আদর্শের পথে অবিচল থাকা লোকটি অবশেষে নিজের অবস্থানের যথাযথতাই প্রমাণ করেছেন। শনিবার অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিম বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করেছেন। ভোটের আগে সমালোচকরা বারবারই বলছিলেন, যে বড় ব্যবধানে জিততে না পারলে নিজের যথোপযুক্ততা প্রমাণ করতে পারবেন না আনোয়ার। অল্প ব্যবধানে জিতলে বোঝা যাবে দলের কিংবা প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদে প্রভাবে জয়লাভ করেছেন।

কিন্তু ভোটের চিত্রে দেখা গেছে আনোয়ার ইব্রাহিম তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভোট পেয়েছেন। দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা পোর্ট ডিকসনের নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারেনি কেউই।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদীত মামলায় দীর্ঘদিন কারাবরণ করেছেন। অবশেষে আবারও মূলধারারা রাজনীতিতে ফিরলেন তিনি। শপথ নিলেন এমপি হিসেবে। এমপি হিসেবে শপথ নিয়ে সোমবার আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, উপ-নির্বাচনের এই বিশাল বিজয় হলো নতুন সরকারের প্রতি জনগনের আস্থার প্রতিফলন। তিনি বলেন, ‘বহু বছর আমাকে আমার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে; কিন্তু উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে আমি আবার রাজনীতিতে ফিরে এসেছি। মনে হচ্ছে আমি আমার যথার্থতা প্রমাণ করতে পেরেছি’।

এ সময় তিনি স্থিতিশীল একটি সরকার পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং পার্লমেন্ট ব্যবস্থায় সংস্কারের অঙ্গীকার করেন। আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘অতীতে আমাদের পার্লামেন্ট আগে ছিল রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট (যথাযথ বিবেচনা না করেই যেখানে অনুমোদন দেয়া হয়)। আমরা নতুন একটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যেখানে পার্লামেন্টকে আরো কার্যকরী করে গড়ে তোলা হবে’।

এক সময়ে মাহাথির সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে বিবেচনা করা হতো পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তুখোর ছাত্রনেতা থেকে মূলধারার রাজনীতিকে দ্রুত উত্থানের কারণে তাকে নিয়ে আশাবাদী হয়ে হয়ে মালয়েশিয়ার জনগন। কিন্তু নীতিগত দ্বন্দ্বের কারণে ১৯৯৮ সালে মাহাথির মোহাম্মাদ তাকে বরখাস্ত করেন এবং সমকামীতার মামলায় কারাগারে ঢোকান। ২০০৩ সালে মাহাথির ক্ষমতা ছাড়লে ২০০৪ সালে মুক্তি পান আনোয়ার কিন্তু ২০১৫ সালে নাজিব রাজাকের সরকার তাকে আবারো কারাগারে ঢোকায়, যা ছিলো মূলত তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের পায়তারা।

২০১৭ সালে আনোয়ার ইব্রাহিমের দলের সাথে জোট বেধে নির্বাচন করতে আগ্রহী হন মাহাথির। যার মাধ্যমে আবার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে। পাকাতান হারাপান জোট মাহাথিরের নেতৃত্বে এবছরের মে মাসের নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জন করে। নির্বাচনের পর রাজার সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি পান আনোয়ার। মাথারি মোহাম্মাদ প্রধানমন্ত্রী হলেও তার উত্তরসূরী হিসেবে বিবেচনা করা হয় আনোয়ার ইব্রাহিমকে। শনিবারের উপনির্বাচনে বিজয়ের পর যে পথ অনেকটাই পরিস্কার হয়ে গেল।

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। অচীরেই হয়তো তিনি পদত্যাগ করে আনোয়ার ইব্রাহিমের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন। যার মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে শুরু হবে আনোয়ার ইব্রাহিম যুগ। আনোয়ার ইব্রাহিমের শপথ নেয়া প্রসঙ্গে সোমবার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বলেছেন, ‘তার ফিরে আসার ঘটনায় আমি অবশ্যই অনেক খুশি। আামদের প্রত্যাশা ছিলো যে তিনি ফিরে আসবেন। আমরা জানতাম যে তিনি উপ-নির্বাচন বিজয়ী হবেন’।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button