ইসরাইলের কাছ থেকে ভূখণ্ড ফিরিয়ে নিচ্ছে জর্ডান

ইসরাইলের সঙ্গে করা শান্তি চুক্তির আওতায় ২৫ বছর মেয়াদি ভূমি চুক্তি নবায়ন না করার ঘোষণা দিয়েছে জর্ডান। ওই চুক্তির আওতায় জর্ডানের দুটি এলাকায় ইসরাইলী কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারে ও ইসরাইলী নাগরিকরা মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে। তবে ইসরাইল বলছে, তারা চুক্তি নবায়নের জন্য আলোচনার পরিকল্পনা করছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা এ খবর জানিয়েছে।

১৯৯৪ সালের করা শান্তি চুক্তির আওতায় জর্ডানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বাকুরা ও দক্ষিণাঞ্চলের ঘুমার এলাকা ইসরায়েলি কৃষকরা ব্যবহার করতে পারে। চুক্তির একটি বিশেষ ধারার আওতায়, ইসরাইলিদের সেখানে ভূমির ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকারের পাশপাশি অবাধ চলাচল করতে দেওয়া হয়। আগামী বছর চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হবে। জর্ডানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ইসরাইলের সঙ্গে এই চুক্তি বাতিলের জন্য জনগণের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে আছেন জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ। তিনি জর্ডানের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকদের বলেছে, তারা ওই দুই এলাকায় তারা পূর্ণ সার্বভৌমত্ব ফিরে পেতে চায়।

ইসরায়েলকে ইজারা দেওয়া ভূ-খণ্ড দুটি ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এর উত্তর দিকে সিরিয়া, পূর্বে ইরাক ও পশ্চিমে ইসরায়েলের অবস্থান। বাদশাহ আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘এগুলো জর্ডানের ভূমি আর তাই থাকবে।’ আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে জর্ডান তাদের জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে চায় বলেও জানিয়েছেন তিনি। রবিবার বাদশাহ আব্দুল্লাহর এই মন্তব্যের পর ইসরায়েলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বীকার করেছেন যে, জর্ডান এই চুক্তি শেষ করতে চায়। তবে তিনি বলেন, বর্তমান চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ইসরায়েল আলোচনা শুরু করবে।

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিবার এক বিবৃতিতে বলেন, শান্তি চুক্তির শর্তানুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগে যদি কোনও পক্ষ আরেক পক্ষকে না জানায় যে, তারা চুক্তিটি বাদ দিতে চায়, তাহলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হয়ে যাবে। এজন্যই তা ইসরায়েলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ শাসনের অধীনে থাকা অঞ্চল দুটির বিষয়ে জর্ডানের সঙ্গে আলোচনা করা ইসরায়েলের জন্য কঠিন হবে। কারণ বর্তমানে ইসরায়েলী আইনের আওতায় থাকা এলাকা দুটিতে অবস্থান ধরে রাখার ব্যাপারে আইনগত জটিলতা রয়েছে।

জর্ডান সেই দুই আরব দেশের একটি, যাদের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তি চুক্তি রয়েছে। এছাড়া দেশ দুটির মধ্যে নিরাপত্তা সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাসও রয়েছে। দেশটি দুটি নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কও বিস্তৃত করেছে। গত বছর জর্ডান ইসরায়েলের কাছ থেকে শত কোটি ডলারের গ্যাস আমদানির জন্য একটি পাইপ লাইন বসানোর চুক্তি করেছে। তবে জর্ডানে ইসরায়েলর সঙ্গে শান্তিচুক্তিটি জনপ্রিয় নয় আর দেশটিত ব্যাপক আকারে ফিলিস্তিনপন্থী জনমত রয়েছে। অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনীতিকরা এই চুক্তি নবায়ন করার বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তারা একে জর্ডানের ভূমিতে ইসরায়েলী দখলদারিত্ব বলে অভিহিত করছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে জর্ডানের রাজনৈতিক সম্পর্কও শিথিল হয়ে পড়েছে। গত বছর জর্ডানের ইসরায়েলী দূতাবাসের মধ্যে দুই জর্ডানি নাগরিককে হত্যা করে ইসরায়েলী নিরাপত্তা কর্মীরা। তারপর থেকে সেখানে উত্তেজনা চলে আসছে। বিদ্যমান চুক্তির আওতায় জর্ডান সীমান্ত সংলগ্ন এক হাজার একর জমিতে চাষাবাদ করে থাকে ইসরায়েল। ওয়াদি আরাবা মরুভূমির এলাকাটিতে ব্যাপক অর্থকরী ফসল উৎপাদন করে ইসরায়েল। এসব ফসল ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি করা হয়ে থাকে।

১৯২০’র দশকে রুশ ইহুদি প্রকৌশলী পিনহাস রুটেনবার্গ ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি নিয়ে ফিলিস্তিনে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ওই সময় থেকেই জর্ডানের বাকুরা এলাকায় ইসরায়েলি নাগরিকরা ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকার পায়। ১৯৯৪ সালের চুক্তিতে এলাকাটিতে জর্ডানের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা হয়। তবে ইসরায়েলী নাগরিকদের ভূমির ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকার অক্ষুণ্ন রাখা হয়। এছাড়া বিশেষ ধারার মাধ্যমে সেখানে ইসরায়েলীদের অবাধ চলাফেরাও নিশ্চিত করা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button