৭০ বছরের দাম্পত্য জীবন!
তাদের এই সম্পর্ক জনগণকে পারিবারিকভাবে সফল হওয়ায় উৎসাহিত করবে
বর্তমানে সত্তর বছর অনেকে বাঁচেই না কিন্তু যদি কোন নর-নারী তাদের বিবাহ বার্ষিকীর সত্তর বছর পার করেন তাহলে তা নিয়ে বিশ্বে হইচই তো হবেই। আর সেই জুঁটি যদি হয়ে থাকেন ব্রিটেনের রানী ও প্রিন্স তাহলে তো কথাই নেই।
একটি সম্পর্কের সূচনা ও টিকে থাকা নির্ভর করে সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন এবং পারস্পরিক বিশ্বস্ততায়। আর এসব গুণ এবং নিজের দৃঢ়তা ও বিবাহ সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধের প্রতিফলন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দীর্ঘ বৈবাহিক জীবনে দেখা যায়। যা তার যুগের পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং মূল্যবোধ ও বিশ্বস্ততার পরিচয় ফুটিয়ে তোলে।
বর্তমান অস্থিতিশীল যুগে, যেখানে একজন মানুষ তার সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে দৃঢ় নয়; সেখানে পারিবারিক বন্ধন ও বিশ্বস্ততা অনেক ঠুনকো। স্থিতিশীল পরিবেশ ব্যক্তিকে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে সমাজের সব স্তরে তার ভূমিকা সহজ ও সদৃঢ় হয়।
গত বছর ২০ নভেম্বর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপ ৭০তম বিয়েবার্ষিকী উদযাপন করেছেন। এর আগে, ২০১৫ সালে ব্রিটেনের রানী হিসেবে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সিংহাসনে থাকার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। রানী ভিক্টোরিয়া ও থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবলের মৃত্যুর পর, তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী শাসক রূপে অধিষ্ঠিত আছেন। ২০১৬ সালে তিনি যখন ৯০ বছরে পদার্পণ করেন, তখন ব্রিটেনে মাত্র পাঁচজন জীবিত মহিলা ছিল যারা তার সাথে একই বছরে জন্মেছিল এবং তার নব্বইতম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।
তার দীর্ঘ সুস্বাস্থ্যময় জীবন ও আগের যুগের জীবনযাপনের সম্পর্কে সুন্দর ও সুস্পষ্ট ধারণা দেয় আর তেমনি তার দীর্ঘ বৈবাহিক সম্পর্ক টিকে থাকা তার জীবনের একটি শক্তিশালী ভূমিকা সম্পর্কে জনগণের সামনে ফুটে ওঠে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, ব্রিটেনে শুধু ২০১৫ সালে এক-চতুর্থাংশ বিয়ে ডিভোর্সে পরিণত হয়। ১৯৮০ সালে প্রায় ৪০ শতাংশ লোক তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করে, যেখানে ১৯৯০ সালের মাঝামাঝিতে প্রায় এক-দশমাংশ বিয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে দেখা গেছে। এর পরের পাঁচ বছরে বিয়েবিচ্ছেদের হার ৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এই কমে যাওয়ার পেছনে অবশ্য বিয়ে তুলনামূলক কম হওয়াটাও প্রভাব ফেলেছে। আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭০ সালের পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে প্রতি বছর গড়ে উল্লেখযোগ্য হারে বিয়ের সংখ্যা কমে গেছে। যার সংখ্যাটা এক-তৃতীয়াংশ বার্ষিক হিসাবে। যদিও এসব প্রতিবেদনে বিচ্ছেদের কারণগুলো প্রত্যক্ষ হয় সমসাময়িক বছরের বিভিন্ন ভূমিকা ও কার্যকারণে। সাম্প্রতিক বছরে বৈবাহিক সম্পর্ক ও এর উন্নয়নের প্রতিফলন দেখা যায় সমীক্ষাগুলোতে। যেখানে প্রতিফলিত হয়, বৈবাহিক সম্পর্ক টিকে থাকা এবং এর দীর্ঘয়িতা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ শতাংশ।
ব্রিটেনে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো হতাশা। সাম্প্রতি সময়ে সন্ত্রাসী হামলা, অর্থনৈতিক মন্দা যুবকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। যা তাদের স্থিতিশীল জীবনযাপনে কোনো প্রেরণা দিতে পারছে না। এ জায়গাটায় রানীর দীর্ঘ বিবাহিত জীবন ব্রিটেনবাসীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী উদাহরণ।
রানীর সুদীর্ঘ বৈবাহিক জীবনাচরণের প্রভাব তার যুগের। তার সন্তানদের একটি পথনির্দেশনা ও উৎসাহের জোগান দেয়। এর ফলে ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালে তার পরিবারে তিনজন যুগল ডিভোর্স নেয়। তার মধ্যে ব্যতিক্রম রানীর ছোট ছেলে এডওয়ার্ড যে এখন পর্যন্ত তার প্রথম বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ, তিনি সংবাদমাধ্যম তেমন আকৃষ্ট করেন না। প্রকৃতপক্ষে রানীর এই বৈবাহিক সম্পর্কের দীর্ঘসূত্রতার কারণ তার রক্ষণশীল আচরণ এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতি তার সুনির্দিষ্ট দূরত্বতা।
যে কারণে বৈবাহিক সম্পর্কে সুদীর্ঘতা এবং তার সুন্দর উদাহরণের প্রতীক রূপে আজীবন জনগণের হৃদয়ে থাকবেন রানী এলিজাবেথ (দ্বিতীয়) এবং তার স্বামী প্রিন্স ফিলিপ। তাদের এই সম্পর্ক জনগণকে পারিবারিকভাবে সফল হওয়ার এবং সম্পর্ক দৃঢ় রাখতে উৎসাহিত করবে সব সময়।
আর এ সুদীর্ঘ বৈবাহিক জীবনের পেছনের কার্যকারণগুলো সঠিক পরিচর্যা ও পরিচালনার মাধ্যমে মানুষ আরো বেশি পারিবারিক ও সামাজিক হবে এবং সুসম্পর্কের সুদৃঢ়তাই একটি স্থিতিশীল ও সুন্দর পৃথিবী গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যার প্রতিফলন রানীর বৈবাহিক জীবন।