টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ওপর থেকে সরকারের সকল ধরনের নজরদারি পুরোপুরি প্রত্যাহার
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেছে। এবার কাউন্সিলের ওপর থেকে সরকারের সকল ধরনের নজরদারিও পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
ইতিপূর্বে কমিশনারদের প্রত্যাহার করা হলেও কাউন্সিল সরকারের বিশেষ নজরদারীতে ছিলো। আর এর অংশ হিসাবে মেয়রকে প্রতি ৩ মাস পর পর বিশেষ রিপোর্ট জমা দিতে হতো। এখন থেকে তা আর করতে হবে না।
৪অক্টোবর, বৃহস্পতিবার কমিউনিটিজ এন্ড লোকাল গভর্নমেন্ট মন্ত্রনালয়ের সেক্রেটারী অব স্ট্যাইট জেমস ব্রোকেনশায়ার এমপি এক চিঠিতে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মেয়র জন বিগসকে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
২০১৪ সালে প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্স এর তদন্তের প্রেক্ষিতে সরকার কাউন্সিলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন বিভাগ পরিচালনায় তৎকালীন মেয়র লুৎফুুর রহমানের নির্বাহী ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলো। সরকার নিযুক্ত ৪ কমিশনার এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতেন। এসবের মধ্যে অন্যতম ছিলো নির্বাচন তদারকী, গ্র্যান্টস, প্রকিউরম্যান্ট এবং প্রপার্টি বিক্রি।
পরবর্তীতে একই বছর এক পিটিশনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রনাধীন ইলেকশন কোর্ট নির্বাচনী আইন ভঙ্গের কারনে তৎকালীন মেয়র লুৎফুুর রহমানকে অপসারনের পাশাপাশি ২০১৪ সালের মেয়র নির্বাচনকেও বাতিল ঘোষনা করে। ফলে ২০১৫ সালে জুনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে লেবার প্রার্থী জন বিগস বিজয়ী হন। জন বিগস মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরও কমিশনাররা ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। সবকিছু সঠিক পথে পুনরায় ফিরে যাওয়ায় কারনে কমিশনাররা চলে গেলেও কাউন্সিলকে কমিউনিটিজ এন্ড লোকাল গভর্নমেন্ট মন্ত্রণালয়ের নজরদারীতে রেখে দেয়া হয়। মেয়র জন বিগসকে প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সেক্রেটারী অব স্ট্যাইটকে রিপোর্ট করতে হতো।
৪ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার থেকে এরও অবসান ঘটলো। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এখন থেকে এদেশের অন্যান্য বারার মতো স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৫ সালে টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র হিসেবে জন বিগস নির্বাচিত হওয়ার পরপরই নতুন চীফ এক্সিকিউটিভ হিসেবে উইল টাকলিকে নিয়োগ দেন।
মেয়র তাকে সাথে নিয়ে কাউন্সিল পরিচালনায় সুশাসনকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেন। বিশেষ করে অর্থ ব্যয়, নতুন ক্রয় নীতিমালা, আর্থিক অনুদান প্রদান, হুইসেলব্লোয়িং পলিসি বাস্তবায়ন (যে কোন অনিয়ম দেখলে কাউন্সিল কর্মকর্তারা তা ফাঁস করে দিতে পারবেন), কাউন্সিল মালিকানাধীন প্রোপার্টি বিক্রি, কমিউনিকেশন এবং নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বাধিক স্বচ্চছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়।
এসবের বাইরে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সামর্থ্যাধীন বাড়ী নির্মান, ১ হাজার কাউন্সিল বাড়ী নির্মান, বাড়ীর ভাড়া কমানো, কর্মসংস্থানের জন্য ওয়ার্কপাথ পোগ্রাম চালু, ভেঙ্গে পড়া ইয়ূথ সার্ভিসকে নতুন করে প্রাণদানসহ অন্যান্য নিয়মিত কাজে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়।
সরকারী নজরদারী পুরোপুরি প্রত্যাহারে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করে নির্বাহী মেয়র জন বিগস বলেন, কাউন্সিল পরিচালনায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠার পুরষ্কারই হচ্ছে সেক্রেটারী অব স্ট্যাইটের এই চিঠি। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে পেরে আমি গর্বিত।
তিনি বলেন, সাবেক মেয়রকে অপসারন ও নির্বাহী মেয়রের ক্ষমতাকে সীমিতকরণ ছিলো কাউন্সিলের জন্য একটি অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা। তবে তখন এই পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত জরুরী ছিলো।
মেয়র বিগস বলেন, এখন আমরা আমাদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম। শুধু কাউন্সিল পরিচালনাকে উন্নত করা নয়, সাবেক মেয়রের বাজে আচরণের জন্য দুর্নামের ঘেরাটোপে আটকা পড়া টাওয়ার হ্যামলেটসকে উচ্চাভিলাষি, সম্ভাবনাময়, গতিময় কমিউনিটি হিসেবে আমরা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।
মেয়র বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসের বিতর্কিত অতীত এখন ইতিহাস। এখন এটি হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল এক জনপদ। বসবাস হোক কিংবা কর্মসূত্রে হোক এখন বেশি সংখ্যক মানুষ এখানে আসতে আগ্রহী হচ্ছেন।
টাওয়ার হ্যামলেটসে রয়েছে ক্যানরি ওয়ার্ফের মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র। সিটি ফ্রিঞ্জ ও টেক সিটিরও অংশ এই জনপদ। টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্ছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় অর্থনীতিতে তৃতীয় বৃহত্তম রাজস্ব প্রদানকারী বারা। এই বারা প্রতি বছর ১২ বিলিয়ন পাউন্ড কর রাজস্বের যোগান দিয়ে থাকে।
চীফ এক্সিকিউটিভ অব টাওয়ার হ্যামলেটস উইল টাকলি বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্ছে বিশ্বের চমৎকার জনপদগুলোর অন্যতম। এর এমন কিছু সম্পদ আছে, যা অনেকের কাছেই ঈর্ষনীয়। আমাদের বাসিন্দারা এমন এক কাউন্সিল চান, যাদের কাজে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও দায়বদ্ধতা থাকবে এবং স্থানীয় জনসাধারণের জীবন মান উন্নয়নে যারা প্রয়োজনীয় সহায়তা দিবে।
কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কাউন্সিলকে আবারও সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে কঠোর পরিশ্রম করায় কাউন্সিলের সর্বস্তরের স্টাফ, কাউন্সিলরগণ ও অংশীদারদেরকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।